ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী

সুপ্রীমকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় তত্ত্বাবধায়কে ফেরার সুযোগ নেই

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

সুপ্রীমকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় তত্ত্বাবধায়কে ফেরার সুযোগ নেই

সুপ্রীমকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করায় এখন আর তাতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য  করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের এ বক্তব্য হচ্ছে ‘কনটেম্পট অব কোর্টের’ (আদালত অবমাননা) সামিল। এ বিষয়টি আদালত দেখবে। বৃহস্পতিবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত বিশ্ব নৌ-দিবস পালন অনুষ্ঠানে বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, বুয়েটের অধ্যাপক মীর তারেক আলী, নৌ-পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোঃ নিজামুল হক, ব্যুরো ভেরিটাসের (বাংলাদেশ) কান্ট্রি ম্যানেজার মোঃ হারুনুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের পেট্রোলিয়াম এ্যান্ড মিনারেল রিসোর্স ইনজিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তামিম। সেমিনারে বিষয়ভিত্তিক কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপনার পাশাপাশি মেরিটাইমের পাঁচটি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য মেরিটাইম অংশীজনদের মধ্য থেকে এ বছরের সেরা পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপির দাবির প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আইনের শাসনে বিশ্বাসী। তারা দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান করে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বলেন, আমার মনে হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আরও কিছুদিন বাংলাদেশে থেকে দেখে তারপর এ বক্তব্য দেয়া উচিত ছিল। তিনি আরও কিছুদিন থাকলে বুঝতে পারতেন মানবাধিকার পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কারণ, আমি বিশ্বাস করি জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক উন্নয়ন করেছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের নৌ-পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য, শক্তি এবং পানির চাহিদা বাড়ছে, যা নৌ-পরিবহন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং সুনীল অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলবে।

পণ্য পরিবহনের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো শিপিং। কেননা, শিপিং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর করে। দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। ফলে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ নৌপথে পরিবহন করা হয়।
‘নিউ টেকনোলজিস ফর গ্রিনার শিপিং’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত সেমিনারে আইনমন্ত্রী বলেন, এবারের প্রতিপাদ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি টেকসই পরিবেশবান্ধব নৌ-বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

প্রতিপাদ্যটিতে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ করে এসডিজি ১৩ ও ১৪ তথা জলবায়ু, মহাসাগর, সমুদ্র এবং সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, এসডিজি ৯ তথা শিল্প, উদ্ভাবন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন এবং এসডিজি ১৭ তথা লক্ষ্য অর্জনে অংশীদারিত্ব এবং বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নতুন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আনিসুল হক বলেন, যত দ্রুততার সঙ্গে আমরা সঠিকভাবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব, আমাদের মেরিটাইম সেক্টর তত ভাল আর্থ-সামাজিকভাবে টেকসই হবে এবং আমাদের এসডিজির লক্ষ্যগুলো অর্জন এবং এর দ্বারা আমাদের জনগণ উপকৃত হবে।

অন্যথায় আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ব।  আন্তর্জাতিক  নৌ-বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল-সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন-কানুনসমূহ পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে নির্গত কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব। আমাদেরকে সকল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, যোগ করেন আইনমন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ প্রতিটি সেক্টরে অসামান্য উন্নয়ন করেছে। মেরিটাইম সেক্টরও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে রফতানি ও আমদানিও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি জাতীয় প্রবৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলায় বহু বিলিয়ন ডলার মূল্যের একাধিক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নতুন জেটি এবং টার্মিনাল নির্মাণ, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ইত্যাদি। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণের সম্ভাবনার কারণে বাংলাদেশকে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের রাষ্ট্রপরিচালনার পলিসিতে নাবিকদের এবং মেরিটাইম সম্পর্কিত অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অগ্রাধিকার পেয়েছে।

ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির বাংলদেশী গ্র্যাজুয়েটরা মেরিটাইম শিল্পের বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে মেরিটাইম শিক্ষায় অবদান রাখছেন। যোগ্য অনুষদ ও কর্মীদের মাধ্যমে উচ্চতর মেরিটাইম শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব শিপিংয়ের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

×