ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ১

টাকার মেশিন ফুটপাথ

ফজলুর রহমান

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

টাকার মেশিন ফুটপাথ

রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেট, গাউছিয়া... প্রতিটি এলাকার ফুটপাথই হকারদের দখলে

ফুটপাথ দখল রাজধানীর পুরনো একটি সমস্যা। পথচারীদের চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি, রাস্তায় যানজট, পরিবেশ নষ্ট, শহরের সৌন্দর্যহানি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উৎস এই ফুটপাথ। অধিকাংশ দখলদারই হকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্মাণসামগ্রী রাখা কিংবা অন্য কোন কারণেও ফুটপাথ দখল হয়। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত পরিবেশিত হয়েছে ধারাবাহিক রিপোর্ট। ফল কিছুই হয় না। কখনও মন্ত্রী, আবার কখনও সিটি মেয়র নিজে থেকে অনেক ফুটপাথ দখলদারীদের উচ্ছেদ করেন।

কয়েক দিন পর আবার ক্ষেত্র বিশেষে কয়েক ঘণ্টা পরই ফুটপাথ দখল করে পসরা সাজিয়ে বসে যায় হকাররা। সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রম অকার্যকর হওয়ার পেছনে রয়েছে টাকা। প্রতিদিন রাজধানীতে ফুটপাথ দখল নিয়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। অর্থের কাছে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে সকল উদ্যোগ। নগরবাসীর অসুবিধা কিংবা সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে অর্থের কাছে। জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে আবারও উঠে এসেছে এই চক্রের চেহারা।    
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় তিন লাখেরও বেশি হকার রয়েছে।

রয়েছে এদের অস্থায়ী দোকানও। রাস্তার পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হকারদের এসব অস্থায়ী দোকানই হচ্ছে কোটি কোটি টাকার উৎস। লাইনম্যান, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা, স্থানীয় চাঁদাবাজ এমনকি পুলিশের পকেটেও নিয়মিত ভাগ যায় চাঁদার বড় একটি অংশ। ফুটপাথের পাশে এসব দোকান চালিয়ে হকারদের জীবন না চললেও অনায়াসেই অবৈধ এসব টাকায় সংসার চালাচ্ছেন এই চক্রের সদস্যরা, গড়ে তুলছেন টাকার পাহাড়। তাদের কাছে ঢাকার ফুটপাথই যেন টাকা বানানোর মেশিন।  
রাজধানীর ফুটপাথে চায়ের দোকান, ভাতের দোকান, পোশাক-আশাকের দোকান, লেইস-ফিতা, প্রসাধনীর ভাসমান দোকানিরা তো সাধারণ বিষয়, এর বাইরেও বিভিন্নভাবে বেদখলে চলে গেছে ফুটপাথ। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বস্তু, ব্রিজের খাম্বা, পুলিশ বক্স, বিদ্যুত-টেলিফোনের খুঁটি, নির্মাণসামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রী রেখে ফুটপাথ দখলে রেখেছে তারা। আর সাধারণ পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে মূল সড়ক ধরে, গাড়ির ভিড়ে। এক ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে। এতে হেঁটে চলার গতিও কমে আসছে দিনকে দিন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমনটি দেখা গেছে।
ঢাকার মূল সড়কের পাশে জনসাধারণের হেঁটে চলার জন্য তৈরি করা হয়েছে ফুটপাথ। এসব ফুটপাথের কোথাও মাঝখানে হলুদ টাইলস বসানো হয়েছে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য। ফুটপাথের টাইলস বদলানো এবং সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কোটি টাকা খরচ করছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। প্রশ্ন উঠেছে- কোটি টাকার টাইলস বসানো এই ফুটপাথ যাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ জনসাধারণ ও প্রতিবন্ধীরা কতটুকু ব্যবহার করতে পারছেন? তা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান চালায় জনকণ্ঠ। অনুসন্ধানে গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, সদরঘাট, পুরান ঢাকার আদালতপাড়াসহ নিউমার্কেট, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাথ হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিটি ফুটপাথের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো ছোট ছোট চৌকি। মূল দোকান ঘেঁষে বসানো হয়েছে চৌকি। মাঝখানে একটু ফাঁকা রেখে ফুটপাথের অন্যপ্রান্তে আরেকটি চৌকি। অর্থাৎ একটি ফুটপাথের আয়তন যদি ৮ ফুট হয়, এর মধ্যে ৬ ফুটই হকারদের বসানো চৌকির দখলে। আর দু’পাশের চৌকির মাঝখানে যে দুই/আড়াই ফুট ফাঁকা রাখা হয়, সেখান দিয়ে সাধারণ পথচারীদের হাঁটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ওই দুই/আড়াই ফুট জায়গাও থাকে হকারদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করতে আসা ক্রেতাদের দখলে। এটুকু ফাঁকা পথ দিয়ে হেঁটে যেতে পথচারীদের এক প্রকারে যুদ্ধ করতে হয়। বলা যায়, ফুটপাথের পুরোটাই হকারদের দখলে।
ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে না পেরে সাধারণ পথচারীরা নেমে আসেন মূল সড়কে। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ফুটপাথ ঘেঁষা মূল সড়কেও ভাসমান হকারদের দোকান। এক লেনের একটি রাস্তার অর্ধেকই হকারদের আখের রস মাড়াইয়ের মেশিন, শরবতের দোকান, ওজন পরিমাপের মেশিনসহ ছোট ছোট পসরার দখলে। ফলে সেখান দিয়েও সাধারণ পথচারীদের হাঁটতে বাধা। পথচারীরা এই ফুটপাথ আর সড়ক দিয়েই হাঁটছেন। তবে এক প্রকারে যুদ্ধ করে।

ধাক্কাধাক্কি, ঝক্কি-ঝামেলা আর পথে পথে অন্যের সঙ্গে তর্কাতর্কি করতে করতে। আবার ফুটপাথ আর মূল সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতে না পেরে পথচারীরা দ্রুতগতির যানবাহনের ফাঁকে ফাঁকেও হাঁটছেন। এতে ডানে-বামে, সামনে-পিছে সমানতালে খেয়াল রেখে চলতে হচ্ছে। মনোযোগে একটু বিচ্যুতি ঘটলেই গায়ের ওপর উঠে যাচ্ছে যানবাহন এবং উঠছেও। ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।
মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের পাশে রয়েছে বিশাল ফুটপাথ। এই ফুটপাথের বেশির ভাগ দখল করে বসানো হয়েছে কাপড়, বই ও জুতার দোকান। ফার্মগেট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ও চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য একাধিক কোচিং সেন্টারের কারণে জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভিড় ওই এলাকায় লেগেই থাকে। এই এলাকার পুরো ফুটপাথই দখলে চলে গেছে।

নিউমার্কেট এলাকায়ও একাধিক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চাপও রয়েছে। এখানকার ফুটপাথও হকারদের দখলে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় হওয়ায় এই এলাকার ফুটপাথ ধরেও চাকরিজীবীদের হাঁটতে হচ্ছে। কিন্তু পথচারীরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। পল্টন, গুলিস্তান এমন একটি রুট যেখান দিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে প্রতিনিয়ত ছুটতে হচ্ছে। এই এলাকার ফুটপাথ দখলের পর মূল সড়কেরও একটা অংশ হকারদের দখলে চলে গেছে। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে ও আসতে দু’পাশের ফুটপাথ ওখানকার সিরামিক, পাইপ, স্যানিটারি ব্যবসায়ীদের দখলে।
মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশানের দিকে যেতে দুপাশের ফুটপাথের অনেক জায়গায় ভাঙ্গা, কোথাও দখল করে রাখা হয়েছে দোকানের জিনিসপত্র রেখে। সেখানে ফুটপাথের ওপর ময়লাবাহী ভ্যান, আবর্জনার বস্তা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ৩২ নম্বর সড়কের প্রান্ত পর্যন্ত ফুটপাথে কয়েকটি গাছ, খুঁটি চলাচলে বাধা দেয়। আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের ফুটপাথেও ট্রাফিক পুলিশ বক্স। এরকম কোথাও গাছ, কোথাও আবার বিদ্যুত বা টেলিফোনের খুঁটি, সুইচ বক্স। কোথাও ফুটপাথজুড়ে বসেছে ফুটওভার ব্রিজের খুঁটি, সিঁড়ি।

উত্তরা ৭নং সেক্টর, মিরপুর পাইকপাড়ায়, আজিমপুর নিউপল্টন লাইন এলাকায় নির্মাণসামগ্রী রড, ইট, বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী রাখতে দেখা গেছে। বাংলামোটর থেকে মগবাজার যেতে রাস্তার দুই পাশে চায়ের দোকান, পুরি-সিঙ্গারার ভাসমান দোকানের পাশাপাশি অসংখ্যক মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার সার্ভিসিংয়ের দোকান রয়েছে। এসব মেকানিকের দোকানের সামনের ফুটপাথে ও সড়কে গাড়ি রাখায় প্রতিনিয়তই জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।   
মূলত যেসব এলাকা জনবহুল, যেসব এলাকার ফুটপাথ জনসাধারণের বেশি ব্যবহার করা প্রয়োজন, সেসব এলাকাই হকাররা বেশি বসছেন, সেসব এলাকার ফুটপাথই শতভাগ দখলে। এই দখলদারিত্বের পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ। একটি এলাকার ফুটপাথের টাকা ওই এলাকার নেতা, থানা-ওয়ার্ড কমিটির নেতা, ইউনিট নেতা, কাউন্সিলর, লাইনম্যান, পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাগ করে নেয়ার তথ্য উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এমএ আবুল কাশেম জনকণ্ঠকে বলেন, হকাররা ফুটপাথে বসার কারণে পথচারীদের হাঁটতে অবশ্যই সমস্যা হচ্ছে। তবে এদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসালে এই সমস্যার সমাধান অনেকাংশে কমে আসবে। প্রধানমন্ত্রীও হকারদের উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে বলেছেন। তার মতে, সরকার চাইলে হকারদের থেকে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় করতে পারে। সিটি কর্পোরেশন খাজনা নিতে পারে। এতে পুলিশ ও লাইনম্যানধারী চাঁদাবাজদের চাঁদা নেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আর এসব চাঁদাবাজদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ নিষিদ্ধ হকার্স সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
হকারদের কাছ থেকে তোলা চাঁদার একটি ভাগ পায় নিবন্ধনহীন সাতটি হকার্স সংগঠন। বিভিন্ন সময় হকারদের উচ্ছেদের বিষয়টি সামনে এলেই এ সকল সংগঠনের নেতারা ‘পুনর্বাসনের’ নামে এক প্রকারে শেল্টার দিয়ে থাকেন। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলাও হয়েছে। সম্প্রতি আদালত কর্তৃক সাতটি সংগঠনের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও এর নেতাদের গ্রেফতারে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।
তথ্যানুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ২৯২ কিলোমিটার ফুটপাথ রয়েছে, উত্তর সিটিতে আছে ২২৩ কিলোমিটার। অভিজাত এলাকার সামান্য অংশ বাদ দিলে পুরো শহরের অধিকাংশ ফুটপাথের অবস্থাই মোটামুটি এক। এসব ফুটপাথে বসা হকারদের কাছ থেকে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির নেতারা দৈনিক, সাপ্তাহিক চুক্তিতে চাঁদা নিয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশ ও ফাঁড়ির ইনচার্জ থেকে শুরু করে কনস্টেবলও দৈনিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে চাঁদার বড় একটি ভাগ নেয়ার তথ্য উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) এ কে এম হাফিজ আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, ফুটপাথে বসা হকারদের অর্থনৈতিক একটা বিষয় রয়েছে। তবে মূল সড়কে যেন বসতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। হকারদের কাছ থেকে পুলিশ চাঁদা নিয়ে থাকলে সেটি মোটেও ঠিক নয়। যে সকল পুলিশ সদস্য চাঁদা নিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয়া হবে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গবেষণায় কি বলছে ॥ ২০১৮ সালের মে মাসে বুয়েটের এ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) ঢাকা শহরের যানজট নিয়ে গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের আগস্ট চার বছর তিন মাস। আর এই চার বছরের ব্যবধানে মানুষের হাঁটার গতির চাইতে যানবাহনের গতি কম। ঢাকা শহরের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আশঙ্কা করা হয়েছিল, ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে। সেই আশঙ্কা এখনই দৃশ্যমান।

পরিকল্পিতভাবে সড়কে উন্নয়ন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে। তাছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ আবার কাজ করছে অন্যান্য রোগের উৎস হিসেবে। যানজট ৯ ধরনের মানবিক আচরণকে প্রভাবিত করছে।
গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে পিক আওয়ারে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। চলতি বছরে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটারে। উল্টোদিকে বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি। আরেক গবেষণায় বলছে, ২০-২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪.৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ উর্ধ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫.১ কিলোমিটার।

ষাটোর্ধদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪.৮২ কিলোমিটার আর সত্তরোর্ধ মানুষ ঘণ্টায় হাঁটতে পারেন ৪.৫ কিলোমিটার। এসব বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৪.৮৩ কিলোমিটার, যেটি বর্তমানে পিক আওয়ারে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু প্রধান সড়কে গাড়ি চলার গড় গতি ঘণ্টায় ৪.৮ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। দুই বছর আগেও এই গতি সাড়ে ছয় কিলোমিটার ছিল। এটা খুবই উদ্বেগজনক। এআরআই হিসাবে, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ।
বুয়েটের এ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক মোঃ হাদিউজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ফুটপাথকে হাঁটার উপযোগী করতে হলে প্রথমত, হকারদের পরিসংখ্যান করে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের লাইন্সেস দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পর লাইন্সেসের মেয়াদ বাড়ানো হবে না। এতে হকাররা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। লাইন্সেসের জন্য তাদের কাছ থেকে নামকাওয়াস্তে একটা ফি নিলেও এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। এভাবে হকারদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এখন যে যার মতো ফুটপাথে বসে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা করা।

একটা নির্দিষ্ট/উন্মুক্ত জায়গায় হকাররা বসবে, সবাই কম খরচে কেনাকাটা করতে সেখানে আসবেন। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ থাকতে হবে। পাঠাও চালকদের ফুটপাথে ওঠা বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে অফিস আওয়ারে অবশ্যই ফুটপাথ পথচারীদের জন্য খোলা রাখতে হবে। তবে নতুন অফিস টাইমের কারণে একই সময়ে সড়কে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এতে হাঁটার গতি আরও কমে আসার আশঙ্কা করছেন তিনি।

×