ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন 

১৫ আগষ্ট কোথায় ছিল মানবাধিকার? 

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১৬ আগস্ট ২০২২

১৫ আগষ্ট কোথায় ছিল মানবাধিকার? 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেসব দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকান্ডের পর কোথায় ছিল মানবাধিকার? 

আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? বিচার চাওয়ার অধিকারটুকু পর্যন্ত ছিল না। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার ঘটনায় একটা মামলা করতে পারবো না। আমরা কী বাংলাদেশের নাগরিক না? আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হলো, তখন তারা কোথায় ছিল? বরং যারা (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা) বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয় দিয়ে লালন-পালন করছে, আজ তাদের কাছ থেকেই আমাদের মানবাধিকারের ছবক শুনতে হয়। এটাই হলো আমাদের দুর্ভাগ্য।

আবেগজড়িত কন্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের পর কেন দলের কোন নেতা প্রতিবাদ করতে পারলো না সেই প্রশ্ন তুলে বলেন, জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিলেন, তখন কোথায় ছিলেন তারা? ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বর ওই ধানমন্ডিতে লাশগুলো তো পড়ে ছিল। একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার? একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি। এত বড় সংগঠন এত লোক কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি। কত স্লোগান। বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে আমরা আছি সেখানে, অমুক তমুক অনেক স্লোগান, কোথায় ছিল সেই মানুষগুলো। বেঁচে থাকতে সবাই থাকে, মরে গেলে যে কেউ থাকে না এটাই তার জীবন্ত প্রমাণ। তাই আমিও কিছু আশা করি না। সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি। এই বেঁচে থাকা যে কত যন্ত্রণার, যারা এভাবে বেঁচে আছেন তারাই শুধু জানেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর স্বশরীরে উপস্থিত থেকে সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার বাবা শুধু দিয়েই গেছেন, কিছুই নিয়ে যাননি। এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, পতাকা দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। তাকে একখন্ড রিলিফের কাপড় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দাফন করা হয়েছে। এদেশের মানুষকে আমার বাবা-মা শুধু দিয়েই গেছেন, কিছুই নিয়ে যাননি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমার বাবা আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তাই সবকিছু যন্ত্রণা সহ্য করে নীলকন্ঠী হয়ে অপেক্ষায় ছিলাম কখন ক্ষমতায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রকৃত প্রতিশোধ নিতে পারবো। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। এই অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে পারে না, যাবে না। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। 

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বশরীরে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় অংশ নেন। এ কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক অন্যরকম জাগরণ ও উদ্দীপনা দেখা যায়। সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে হাজার হাজার নেতাকর্মী হাত নেড়ে, গগণবিদারী স্লোগাণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দেখা যায়। 

সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতার সময় দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা আমরা বুঝি। এখন বিশ্বব্যাপী মন্দাভাব ও অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষের পদধ্বনী শোনা যাচ্ছে। 

এক্ষেত্রে আমাদের সবারই কিছু করণীয় আছে। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে দেশের কোন মানুষ কষ্ট পাক তা আমরা চাই না। তাই দেশের যারা বিত্তবানরা রয়েছেন, সবার প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা নিজ নিজ এলাকায় অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান, সহযোগিতা করুন। সরকার থেকে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

আর আমার দলের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশ দিয়েছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আর দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন বা গৃহহীন না থাকে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি। যখন একটা মানুষকে আমরা জায়গাসহ ঘর নির্মাণ করে নিজস্ব ঠিকানা করে দিচ্ছি, তখন তাদের মুখের হাসি দেখে আমার মনে হয় বেহেস্তে বসে আমার পিতা (বঙ্গবন্ধু) সব দেখছেন, তাঁর আত্মা শান্তি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবোই।

ইউক্রেণ যুদ্ধের পরে রাশিয়ার উপর আমেরিকার স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) জারির পর সারাবিশ্বে উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই স্যাংশন জারির পর সারাবিশ্বে জ্বালানীসহ প্রত্যেকটি জিনিসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সারাবিশ্বেই একটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় উন্নত দেশ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত বিদ্যুত ও খাদ্য সরবরাহে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছে। এসব কারণে আমাদেরও বাধ্য হয়ে তেলের মূল্য বাড়াতে হয়েছে। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে জ্বালানী মূল্যের একটা সামঞ্জস্য রাখতে হয়। আমরা আর কত ভর্তুকি দেব?

তিনি বলেন, জ্বালানীসহ দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে আমরা মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেব। আর এক কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে চাল-চিনি-ডালসহ অন্যান্য পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারবে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আর দেশের মানুষের প্রতি আমার পুনর্বার অনুরোধ, বিদ্যুত ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। আর এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে, আমাদের নিজেদের খাদ্যের যোগান আমরা নিজেরাই করবো। 

‘৭৫ পরবর্তী ঘটনার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে না পারলে কোনদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। হত্যাকান্ডের পর আমরা প্রাণে বেঁচে যাওয়া দুই বোন বিচার পেতে দেশে-বিদেশে জনমত গঠন করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেশে আসতে পারিনি। ’

৭৯ সালে প্রথম বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করে শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেও কত অপপ্রচার আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে। জাতির পিতা, আমার ভাইসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। খাদ্যভর্তি জাহাজ ঘুরিয়ে দিয়ে দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতো কিছু করার পরও যখন বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এতটুকু কমাতে পারেনি তখনই তাকে সপরিবারে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা। 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করে খুনীদের পুরস্কৃত করা হয়। জিয়া নিজে উদ্যোগী হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোকে দিয়ে লিবিয়ায় খুনীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। জিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত না থাকলে কেন খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পুরস্কৃত করবে?

এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথিত সুশিল বলে পরিচিত ব্যারিস্টার মইনুল বঙ্গবন্ধুর খুনী পাশা ও হুদাকে নিয়ে প্রগশ নামের রাজনৈতিক দল করেছিলেন। আর এরশাদ ক্ষমতায় এসে খুনী ফারুককে ফ্রিডম পার্টি করার সুযোগ দেয় ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করে। আর খালেদা জিয়া আরেক ধাপ উপরে। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে খুনী রশিদ-ফারুক-হুদাকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়। খুনী রশিদকে বিনাভোটে সংসদে এনে বিরোধী দলের আসনে পর্যন্ত বসায়। এরা কী করে বলবে যে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না। 
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ কিন্তু খালেদা জিয়ার ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন মেনে নেয়নি। 

আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। এরপর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ইনডেমনিটি বাতিলের উদ্যোগ নেই। তখনও কতো হুমকি, বাধা। এ সময় কারা কারা, কোন কোন আইনজীবী খুনীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তাও সবাই জানে। তিনি বলেন, বিচারের রায় যাতে বিচারক ঘোষণা করতে না পারে সেজন্য খালেদা জিয়া ’৯৮ সালের ৮ নবেম্বর হরতাল ডেকেছিল। কিন্তু বিচারক অত্যন্ত সাহসী ছিলেন, বিচারের রায়ে আসামীদের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আবারও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে দেয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা আবারও এই হত্যাকান্ডের বিচারের কাজ শুরু করি। কিন্তু তখনও অনেক উচ্চ আদালতের বিচারক হত্যাকান্ডের বিচার করতে বিব্রত হয়েছেন। কিন্তু কৃতজ্ঞতা জানাই ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি তোফাজ্জল হোসেনের কাছে। তাঁর নেতৃত্বে উচ্চ আদালতের রায়ের পরেই আমরা তা কার্যকর করতে পেরেছি। 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নাম উল্লেখ না করে বলেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের কথা বলে আমাদের ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়- তারাই তো বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। খুনী রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। খুনী নুর কানাডায় রয়েছে। যারা এসব খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের কাছ থেকেই আমাদের মানবাধিকারের ছবক শুনতে হয়। আমাদের কাছে তথ্য আছে-খুনী রশিদ লিবিয়া ও পাকিস্তানে যাতায়াত করে, আরেক খুনী ভারতে লুকিয়ে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের ফিরিয়ে আনতে। 

দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ টানা তিনবার ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ দিয়েছে বলেই আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। দারিদ্র্য ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি, দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে- স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। শুধু শহরভিত্তিক উন্নয়ন নয়, একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। 

পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনীরা ভেবেছিল দুর্গম টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে কেউ যাবে না। কিন্তু এখন খুনী ও তাদের দোসররা দেখুক, প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর মাজারে কত মানুষের ঢল নামে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়েও আমাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। 

বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম, কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেনি। কারণ আমার সবচেয়ে বড় শক্তিই হচ্ছে দেশের জনগণের শক্তি। আর এ শক্তি থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবো এবং সেটা করেছি। জাতিকে কথা দিয়েছিলাম, শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেব, তাও আমরা দিয়েছি। 

প্রধানমন্ত্রী  বৈশ্বিক এই অস্বাভাবিক অবস্থায় কষ্টে থাকা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের বিত্তবানদের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। জয়বাংলা স্লোগানও মুছে দিতে পারেনি। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। দেশের নতুন প্রজন্ম আর বিকৃত ইতিহাস নয়, প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি, এই অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে পারে না, আমরা বৃথা যেতে দেব না। 

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকান্ড কোন ব্যক্তি বা পরিবারের বিরুদ্ধে ছিল না, এই হত্যাকান্ড ছিল এদেশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত করে পাকিস্তানের সঙ্গে লুজ ফেডারেশন সৃষ্টির চক্রান্ত। জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই খুনীদের পুরস্কৃত করেছে, ২০ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। জিয়ার সৃষ্ট হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এখনও তাদের উত্তরসূরীরা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯ বার বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এখনও মানুষকে বিভ্রান্ত করে অপরাজনীতি করছে বিএনপি। সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। 

অপর প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। আজও পাকিস্তানের দাসত্বে আবব্ধ থাকতাম। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক বিশ্বের বরেণ্য নেতা। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে রক্ত দিয়ে জাতির রক্তের ঋণ শোধ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু আর কোনদিন ফিরে আসবেন না, আর শুনতে পারবো না সেই বজ্রকন্ঠ- ‘ভাইয়েরা আমার..’। ’৮১ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম। আজ তাঁর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।
স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুধু মুখে নয়, বাস্তবে দ্রুত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ জাতির সামনে উম্মোচন করার দাবী জানিয়ে বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন কমিশন গঠন করবেন। 

আমরা মুখে নয়, বাস্তবে দ্রুত এই কমিশন চাই। ১৫ আগস্টের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের পেছনে অনেক রহস্যময় পুরুষ রয়েছে। নেপথ্যে’র নায়কদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার প্রমাণ তুলে ধরে তিনি বলেন, জিয়া যদি সত্যিই মুক্তিযোদ্ধা হতো তবে জয়বাংলা স্লোগান, কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ কেন নিষিদ্ধ ছিল? খুনীদের পুরস্কৃত করে কেন দেশকে স্বাধীনতার সব আদর্শ ধ্বংস করলো। ইতিহাস কখনো এই বেঈমানকে কখনো ক্ষমা করবে না। ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। 
 

সম্পর্কিত বিষয়:

×