প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি করে মানুষের কষ্ট না বাড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধীদের আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি দেশের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের কষ্ট বাড়াবে, যেটি তাদেরও বোঝা উচিত। তারা (বিএনপি) আন্দোলন করে কতটুকু সফল হবে জানি না। কিন্তু তারা যেভাবে করতে যাচ্ছে, তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা সামাল দিতে পারব, সেই বিশ্বাস আমার আছে।
রবিবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি- খবরদার! যারা আন্দোলন করছে, তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরাও করবে, আমি বলেছি আসতে দেব। কেননা, আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি দেশের কাজ করতে, দেশের মানুষ তো সেটা জানে। মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, সেটা তাঁর সরকার উপলব্ধি করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, অপোজিশনসহ নানাজনে নানা কথা বলবে, এর সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা যদি এসব বেশি করতে যায় তাহলে এর প্রভাবেই মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত। আর একটা শ্রেণী যেন রয়ে গেছে এদেশে, যারা এদেশের মানুষের কোন কল্যাণ হোক, সেটা চায় না। অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্থবহ হোক, স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রত্যেক ঘরে পৌঁছাক, এখানেই একটা বাধা দেয়ার প্রচেষ্টা আমরা সবসময় দেখি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ^ বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশেও সমন্বয় করা হবে। দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। আর যখনই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমবে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই এ্যাডজাস্ট করব, সেটাও আমার নির্দেশ রয়ে গেছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার ইঙ্গিত দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই তৃণমূলে সম্মেলন শেষ করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে দেশব্যাপী তৃণমূলের সব ইউনিটে ব্যাপকহারে দলের সদস্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ সময় ওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়ন, থানা, পৌর, উপজেলা, মহানগর ও জেলার কমিটি ঢেলে সাজানোরও কঠোর নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। প্রতিটি ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পাশাপাশি এসব কমিটিতে কোনভাবেই যেন দুঃসময়ের ত্যাগীরা বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে সব ধরনের দলীয় কোন্দল নিরসন করে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কয়েক সাংগঠনিক সম্পাদক এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট লিখিত আকারে দলীয় সভাপতির কাছে উপস্থাপন করেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে দুপুর একটা পর্যন্ত। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বক্তব্য শুনেন দলীয় প্রধান। তাঁরা নিজ নিজ বিভাগের বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। দলীয় সভাপতি এসব সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও দেন।
বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে সমসাময়িক সঙ্কট কাটাতে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমাদের বিদ্যুত ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবার পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হয়ত আর কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী আবারও উৎপাদন বৃৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, করোনা যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) এবং পাল্টা স্যাংশন জনজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সারাবিশে^র সাধারণ জনগণ। তিনি বলেন, আমেরিকা স্যাংশন দিল রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য। দেখা যাচ্ছে যে, শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আমাদের দেশ বলে নয়, ইউরোপের দেশগুলো এমনকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াÑ প্রত্যেকটি মহাদেশের মানুষেরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব জিনিসের ওপরই এর একটা প্রভাব পড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কিছু লোক তো থাকেই অপ্রয়োজনেও জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় ঐ ছুতা ধরে, সেটাই হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয়। তাঁর সরকার জনগণের কাছে দেয়া সকল প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি এই করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন ও পাল্টাস্যাংশন না হতো তাহলে আমাদের দেশ কখনই সমস্যায় পড়ত না। আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। কেননা যে ক্ষেত্রগুলো আমাদের আমদানি নির্ভর সেখানেই সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে।
অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়ে লাভটা কি হলো? বাস্তবিক যদি লাভ কারো হয় তাহলে সেটা আমেরিকা এবং রাশিয়ারই হয়েছে। বিশ^ বাজারে ডলার এবং রুবলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশবাসীর প্রতি পুনর্বার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকে যার যেখানে যতটুকু জমি আছে সবাই একটু চাষ করে সেখানে খাবার উৎপাদন করেন। যেখানে জায়গা আছে হাঁস,মুরগি, কবুতর, গরু, ছাগল,ভেড়া যে যা পারেন পালন করেন। আর যত পুকুর ও জলাভূমি আছে সেখানে মাছের চাষ করেন। আমাদের খাবারটা যেন আমরা দেশের মধ্যে করতে পারি। আমাদের যেন বাইরের দিকে না তাকিয়ে থাকতে হয়।
১৫ আগস্ট কারবালার থেকেও জঘন্য হত্যাকান্ড ॥ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক বিয়োগান্তক অধ্যায়কে স্মরণ করে তাঁর মনে জেগে থাকা প্রশ্নটি আবারও ছুড়ে দেন- কেন তাঁর বাবা, মা- ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? ১৫ আগস্ট কারবালার থেকেও জঘন্য হত্যাকা- ঘটে। যেখানে জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছর জাতির পিতা দেশ পরিচালনা করতে পেরেছিলেন, যেখানে সম্পদ বলতে ছিল কেবল দেশের মাটি আর মানুষ। সেটাই ছিল তাঁর পুঁজি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা ওই সময় শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, মাটি আর মানুষ হচ্ছে আমার সম্পদ। এই মাটি আর মানুষের ওপর নির্ভর করেই কিন্তু তিনি সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে দিয়ে যান। তাঁর যে লক্ষ্যটা ছিল যে ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙ্গে একটা নতুন সমাজ দেবেন, ঔপনিবেশিক আমলের যে প্রশাসনিক কাঠামো সেটা ভেঙ্গে গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো তিনি করতে চেয়েছিলেন। গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো করার জন্য একটা বিরাট পরিবর্তন বঙ্গবন্ধু আনতে চেয়েছিলেন। এই গণমুখি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তিনি তৃণমূলের মানুষের কাছে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, এ কারণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করলেন এবং একেকটা জেলার উন্নয়নটা যাতে ওই জেলার ভিত্তিতে হয়, যাতে মানুষের দুঃখ-দুদর্শা দূর হয়, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয় সেই পদক্ষেপটাই তিনি নিলেন এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের যে ডাকটা দিলেন সেটার লক্ষ্যই ছিল জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা, আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। মনে হয় যেন এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ যদি কোন অবদান রাখতে যায় তাকে বোধহয় বিপর্যয়ে পড়তে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের যে, যখনই এই দেশের মানুষ একটু ভাল থাকে, ভাল অবস্থায় আসে তখনই যেন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা শ্রেণী সব সময় রয়ে গেছে এই দেশে। যারা এই দেশের মানুষের কল্যাণ হোক, এটা চায় না। অর্থাৎ স্বাধীনতাটা অর্থবহ হোক, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছাক- এখানে একটা বাধা দেয়ার প্রচেষ্টা সব সময় আমরা দেখি। তিনি বলেন, এই সংগঠনের (আওয়ামী লীগ) মাধ্যমেই তো আমরা কাজ করি। আমাদের যে কোন দুযোগ-দুর্বিপাক যাই আসুক আওয়ামী লীগের বা আমাদের সহযোগী সংগঠন সব সময় তারা কিন্তু সজাগ থাকে এবং মানুষের পাশে সকলের আগে দাঁড়ায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সেই সংগঠনকে সুসংহত করা- এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন সরকারে ছিল, আমাদের যখন মেয়াদকাল শেষ হয়ে যায় তখন আমরা কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে আসি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত আর কখনই ক্ষমতার পরিবর্তন এভাবে হয়নি- শান্তিপূর্ণভাবে। প্রতিবারই কিন্তু একেকটা ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটেছে। এটা কিন্তু সকলের একটু মাথায় রাখতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নীতিতে বিশ্বাস করে। জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। সেই জন্যই ওই একবারই শাস্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, তারপরের ঘটনা তো সবাই জানে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১-এর নির্বাচন। সেই সময়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার। মানুষ খুন করা, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার। সেখানে হিন্দু-খ্রীস্টান কেউ বাদ যায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের যে চিত্র ছিল, সেই চিত্র সবার মনে আছে। তারপরে বিএনপি-জামায়াত এসে বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, বোমা হামলা। পনেরোই আগস্টের খুনীদের জিয়াউর রহমান যে শুধু ইনডেমনিটি দিয়ে মাফ করে দিয়ে পুরস্কৃত করেছে, তা তো না। এরশাদ এসে খুনী ফারুককে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করল। আর খালেদা জিয়া এসে আরও একধাপ উপরে। খুনী রশিদ-ফারুক-হুদা তিনজনকে নমিনেশন দেয়। খুনী ফারুককে জেতাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেটা পারেনি। হুদা আর রশিদকে প্রহসনের নির্বাচনে জিতিয়ে সংসদে বসাল।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে খুনী রশিদকে সংসদে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসাল।
তার মানে এই দেশে খুনীদের সৌহার্দ্যটা কত এটা জনগণের জানা উচিত। সেই খুনীদের তারা পুরস্কৃত করার মানে কী? পনেরোই আগস্ট হত্যার সঙ্গে এদের যে সম্পৃক্ততা, জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা, ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের বিচার হবে না। আমরা যারা পনেরোই আগস্ট আপনজন হারিয়েছি আমাদের তো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না, তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। অর্থাৎ বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি এ দেশে চালু করে দিয়েছিল। যেখানে কোনদিন ন্যায়বিচার চাইতেই পারব না। কেউ মারা গেলে যখন আমার কাছে বিচার চায়, তখন কষ্ট লাগে। কারণ আমার তো বিচার পেতে ৩৫ বছর সময় লেগেছে। আমার বাপ, মা, ভাই সব হারানোর পরও বিচার চাইতে পারিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের সেবায় আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। ফলে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। তারা (দেশবাসী) আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে, তাই টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছি। দারিদ্র্যের হার কমেছে, পুষ্টি নিশ্চয়তাসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য-এই দেশে আমার আব্বাই (বঙ্গবন্ধু) শুরু করেছিলেন ভূমিহীনদের মাঝে জমি দেয়া এবং ঘর করে দেয়া। সেটাই আমি সম্পূর্ণভাবে করতে চাই। আশ্রয়ণ নাম দিয়ে সেটা করে যাচ্ছি। ফলে বাংলাদেশে আগামীতে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না।
আবেগজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমার আব্বা তো সারাজীবন এই দেশের মানুষের জন্য ত্যাগ শিকার করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত জীবনটাই দিয়ে গেছেন। একটা মানুষ ঘর পাওয়ার পরে তাঁর মুখের হাসি ও তৃপ্তিটাÑ আমার মনে হয়, আমার বাবা বেহেশত থেকে দেখেন। তাঁর মনটাও নিশ্চয়ই তৃপ্ত হয় যে, দেশের মানুষ কিছু পাচ্ছে।