দা-ছুরি-চাপাতিতে ধার দিতে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন শানদাররা
গরুর পেছনে ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেছে। কেউ গরু। কেউ খাসি। কেউ আবার উটও কোরবানি দেবেন। প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরেই। পশুর খোঁজ খবর করা, কেনা, রশি ধরে টেনে বাড়ি নিয়ে আসা- এমন অনেক ছবিই এখন রাস্তায় নামলে দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার পুরনো ছুরি চাকু দা-বঁটি বের করে ধার দিচ্ছেন। পাশাপাশি চলছে বহুবিদ কেনাকাটা। সব মিলিয়ে রাজধানীতে এখন ঈদের আমেজ।
আগামী রবিবার ঈদ। তার আগে জোরেশোরেই চলছে প্রস্তুতি। তবে কোরবানির ঈদ যেহেতু, গরুতেই বেশি মনোযোগ। ছাগল-ভেড়াসহ মরুভূমির উটও আছে কেনার তালিকায়। কে কোন্টি কিনবেন, কত টাকায় কিনবেন ইত্যাদি ইস্যুতে চলছে জোর আলোচনা। হাটগুলোতেও ব্যাপক আয়োজন। প্রচুর পশুর আমদানি হয়েছে। চলছে বিক্রিও। সবার আগে পশু বিক্রি শুরু হয় রাজধানীর দুটি স্থায়ী হাটে। হাট দুটির একটি গাবতলী। অন্যটি সারুলিয়া। উভয় হাটে এখন বিপুলসংখ্যক পশু। ভাল বিক্রি হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পাশাপাশি প্রস্তুত করা হয়েছে ১৭টি অস্থায়ী হাট। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এসব হাট পরিচালনা করবে। অস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবে ১০টি। আর উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবে ৭টি হাট। আজ বুধবার থেকে অস্থায়ী হাটে পশু বিক্রি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আগের দিন মঙ্গলবার আমুলিয়া, আফতাবনগর, উত্তরাসহ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। পশু বেঁধে রাখার খুঁটি, অস্থায়ী শেড, ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি বসানো হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ী ও খামারিরা ট্রাকভর্তি পশু নিয়ে আসছেন হাটে। হাটগুলো চালু হলে প্রথম দিনই বদলে যাবে ঢাকার চেহারা। যেদিকে চোখ যাবে সেদিকেই দেখা যাবে কোরবানির পশু।
এদিকে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছর কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অনুমান করা যায়, ঈদের আগে আগে সব পশু বিক্রি হয়ে যাবে।
পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য ছুরি, চাকু, দা, বঁটি চাই। অনেকে নতুন করে এসব কিনছেন। ভিড় বেড়েছে কাওরান বাজারের কামারশালায়। কেউ কেউ আবার পুরনোগুলোকে ধার দিয়ে চকচকে করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যারা ধার দেয়ার কাজটি করেন তারাও বাসার সামনে এসে হাজির হচ্ছেন। কাঁধে বাইসাইকেলের মতো একটি যন্ত্র। এটিতে আরাম করে বসে দা-বঁটি ধার দিতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
ঈদ সামনে রেখে চলছে রান্নার প্রস্তুতিও। ঢাকার মসলার বাজার এখন জমজমাট। মাংস রান্নার কাজে নানা জাতের মসলার প্রয়োজন হয়। ভাল জাতের মসলা খুঁজে কেনার চেষ্টা করছেন গৃহিণীরা। নিউ মার্কেট, গাউছিয়া ঘুরে নতুন হাঁড়ি-পাতিলও কিনছেন তারা।
কোরবানি ঈদ বলেই পোশাক বা জামা-জুতা কেনায় অত আগ্রহ নেই। মঙ্গলবার বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে গিয়ে তো অবাকই হতে হলো। এত বড় শপিং মল। কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি সাধারণ সময়ের মতো। আয়েশী ভঙ্গিতে চলছিল কেনাকাটা।
ঢাকায় বসবাসকারীদের বড় অংশটি আবার চলে যাবে গ্রামের বাড়ি। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার দৃশ্য এরই মাঝে সামনে এসেছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস। এদিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রেনের আসন পূর্ণ। অনেকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। শনিবার পর্যন্ত চলবে বিশেষ ট্রেন। আর বাসে করে বাড়ি ফেরা, সে তো অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।
সব মিলিয়ে ঈদ যে আসন্ন, বেশ বোঝা যাচ্ছে। তবে কোরবানি ঈদ শুধু পশু জবাই করার জন্য নয়। রসনা বিলাস নয়। এ ঈদ আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত করে। আত্মত্যাগের আনন্দটাই পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবেই সার্থক হবে ঈদ। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বললে, ‘ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’, শক্তির উদ্বোধন।’ অন্য জায়গায় কবির উচ্চারণ : মনের পশুরে করো জবাই,/পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই। এর চেয়ে সুন্দর কথা আর কি হতে পারে? মনের ভেতরে যে পশুত্ব, সেটি আগে ধ্বংস করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। আত্মশুদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। ক’দিন পর যারা পশু কোরবানি দেবেন তাদের ভাবনায় কি আছে এসব মহৎ চাওয়া? যেন থাকে। থাকলেই হবে প্রকৃত ঈদ।