
মেহেদি
রেঞ্জ দিয়ে পদ্মা সেতুর নাট খুলে ঢিল করে পরে হাত দিয়ে খোলার ভিডিও বানায় দ্বিতীয় ব্যক্তি মাহদি হাসান ওরফে মেহেদি (২৭)। উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাট খোলার জন্যই সে সঙ্গে করে রেঞ্জ নিয়ে গিয়েছিল। পদ্মা সেতুর অবকাঠামোর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ভিডিও ধারণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতারকৃত মাহদি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে আলিম-দাখিল শেষ করেছেন। তিনি মাদ্রাসায় পড়াকালীন শিবিরকর্মী ছিলেন। রাতে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। এ সময় তার কাছ থেকে নাট খোলার ভিডিও ধারণে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরেরদিন যখন সবার জন্য সেতু উন্মুক্ত করা হয় সেদিন মাহদি রেঞ্জ নিয়ে সেখানে যায়। সে রেঞ্জ দিয়ে সেতুর নাট-বল্টু খোলে। সে নাট-বল্টু খোলার পরিকল্পনা করেই সেতুতে যায়। সিটিটিসির প্রধান জানান, গ্রেফতারকৃত মাহদি সেই মাদ্রাসা থেকে দাখিল আলিম পাসের পর কবি নজরুল কলেজে ভর্তি হয়। তবে তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। তবে পড়াশোনা না করলেও সে গ্রামের বাড়িতে থাকত না, ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে থাকত।
সিটিটিসির প্রধান জানান, গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করেন এবং এই দিনটিকে এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন হিসেবে অবহিত করেন। একদল অসাধু চক্র পদ্মা সেতু যাতে নির্মিত না হয় তার জন্য আগ থেকেই বিভিন্ন অপপ্রচারসহ সেতু ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতিজনিত কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই বিভিন্ন গোষ্ঠী সেতুর বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
আসাদুজ্জামান জানান, বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের এই মাইলফলক দেশের বর্তমান সরকারের একটি অবিস্মরণীয় সাফল্য। এই সাফল্যকে ছোট করা ও জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি মহল সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কিছু অসাধু ব্যক্তিকে দেখা যায়, যারা স্থাপনায় উঠে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এরমধ্যে ২৬ জুন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যায়, যেখানে গ্রেফতারকৃত মাহদি হাসান সেতুর রেলিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত নাট-বল্টু খুলে প্রদর্শন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রেফতারকৃত মাহদি হাসান সেতুর রেলিং থেকে নাট-বল্টু খুলছে আবার লাগিয়ে দিচ্ছে।
তিনি জানান, সিটিটিসির সাইবার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের নজরদারির ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এলাকা থেকে মাহদিকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু উত্তর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাহদি এই কাজ করেছে উল্লেখ করে মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, ঘটনার আগের রাতে মাহদি তার সঙ্গীদের নিয়ে পদ্মা সেতুতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ২৬ জুন সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার দিন ভোরে মাহদি সঙ্গীদের নিয়ে মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু পার হয়ে ওই পাড়ে যায়। তারা এমন ঘটনার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে, কিন্তু মানুষজন বেশি থাকায় তারা সেটা পারছিল না। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অপরপ্রান্ত থেকে ফেরার সময় মাওয়া প্রান্তে এসে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে ভিডিও করেন মাহদি।
তিনি জানান, মাহদি ভিডিওতে বলছিলেন, ‘আমি কিন্তু রেঞ্জ ব্যবহার করছি না’। সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আপত্তিকর রেঞ্জ শব্দটি ব্যবহার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহদি স্বীকার করেছে, রেঞ্জ দিয়ে প্রথমে নাট খুলে লুজ করে, পরে হাত দিয়ে খুলে ভিডিও বানানো হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাহদিসহ তার সঙ্গীরা সেতুর নাট খুলতে রেঞ্জ নিয়ে গিয়েছিল। আমরা মাহদির সঙ্গীদের খুঁজছি, তাদের গ্রেফতার করা গেলে হয়ত নাট খোলায় ব্যবহৃত রেঞ্জটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। মাহদিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আর কোন উদ্দেশ ছিল কি না তা জানা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে যাতে কেউ কোন অপতৎপরতা চালাতে না পারে এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সেতু এলাকায়ও আমাদের সার্ভিলেন্স রয়েছে।
মাহদি নাট-বল্টু হাত দিয়ে খুলেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, মোবাইলে ভিডিও ধারণের আগে তিনি গোপনে রেঞ্জ দিয়ে নাট-বল্টু খুলেন। এ সময় তার সহযোগীরা এ কাজে সহায়তা করেন। এরপর ভিডিও ধারণের সময় হাত দিয়ে খুলে তা ভিডিও করে ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন। তার অন্য সহযোগীদের নাম-পরিচয় না জানালেও তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান।
এর আগে পদ্মা সেতুর নাট বল্টু খোলার ঘটনায় বায়েজিদ তালহা (৩১) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে সিআইডি। তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গত সোমবার সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে বায়েজিদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি।