ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে যাত্রী হয়রানি না করতে আবারও নির্দেশনা বিমান প্রতিমন্ত্রীর

মাঙ্কিপক্স নিয়ে সব বিমানবন্দরে সতর্ক অবস্থা

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৪ মে ২০২২

মাঙ্কিপক্স নিয়ে সব বিমানবন্দরে সতর্ক অবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রী হয়রানি না করার জন্য আবারও সতর্ক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসকে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী সোমবার দুুুুপুরে বিমানবন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি জানালেন, দেশের এ্যাভিয়েশন খাতে বর্তমানে বিপ্লব ঘটে গেছে। থার্ড টার্মিনাল আগামী সেপ্টেম্বরে চালুর পরই পাল্টে যাবে এ খাত। বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিস্থিতির আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। তবে আরও উন্নতি ঘটাতে হবে যাতে যাত্রীদের কোন অভিযোগ না থাকে। একই সময় বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানালেন, মাঙ্কিপক্স নিয়ে শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে আসা সব যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হবে। এম মফিদুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশে আসা সব যাত্রীকে একটি হেলথ ডিক্লারেশন ফরম দেয়া হবে। সেখানে ওই ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কি না, তার মাঙ্কিপক্সের কোনো লক্ষণ আছে কি না এবং সে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত কোনো দেশে ভ্রমণ করেছে কি নাÑ এমন তথ্য জানতে চাওয়া হবে। তারা যে উত্তর দেবেন সেটিকে ভেরিফাই করবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসকরা। এ ছাড়া মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে যাত্রীর চেহারা ও শরীর দেখেই বোঝা যাবে। চিকিৎসকরা স্বচক্ষে যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া এয়ারলাইন্সের ক্রুদের মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে ব্রিফ করবে বেবিচক। সোমবার সকালে বিমান প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী তার সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বিমানের এমডি ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরে এসে হাজির হন। বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক নিয়ে তিনি প্রথমেই গ্রীন চ্যানেলে প্রবেশের সময় বেশ ক’জন সৌদি ফেরত ওমরাহ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে জানতে চান, লাগেজ পেতে কিংবা বিমানে খেতে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। তারা বেশ সন্তোষের সঙ্গেই জানালেন, সবই ঠিক আছে। কোথাও কোন সমস্যা হয়নি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ জানালেন- তিনি ওমরাহ করে এসেছেন। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে থাকা লাঠিটা হারিয়ে গেছে। এ সময় বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান তাকে সান্ত¦না দিয়ে বলেন, আপনি তো বেশ ভালই আছেন লাঠি ছাড়া। এটা তো সুস্থতার লক্ষণ। এমন জবাব শুনে বৃদ্ধ বেশ খুশি হয়ে মুচকি হাসেন। প্রতিমন্ত্রী গ্রীন চ্যানেলে গিয়ে দেখেন সব যাত্রীরই লাগেজ ব্যাগেজ চেক করা হচ্ছে। স্ক্যানারে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে যাত্রীদের। এটা দেখে কাস্টমসের ডিসিকে নির্দেশনা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবাইকে চেক করার দরকার কি? যাকে দরকার যাকে সন্দেহ হয়, যার সম্পর্কে তথ্য আছে শুধু তাদেরই দূরে ডেকে নিয়ে চেক করা যেতে পারে। তবে কিছুতেই কোন যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। সবার সঙ্গেই যেন ভাল আচরণ করা হয়। গ্রীন চ্যানেল থেকে বেল্টে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বেশ ক’জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানতে চান লাগেজ পেতে কোন সমস্যা হয়েছে। এ সময় সবাই আগের চেয়ে লাগেজের সেবা উন্নত হয়েছে বলে জানান। তবে একজনের অনুরোধ ছিল লাগেজ যেন আরও দ্রুত সময়ে দেয়া যায় সেটার দিকে নজর রাখা। অপর এক যাত্রীর অনুরোধ ছিল- যাতে লাগেজ নিয়ে কার পার্কিং এরিয়া পর্যন্ত যাওয়া যায়। বর্তমানে ক্যানপীর সীমানা পর্যন্ত লাগেজ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এটা যেন বিবেচনা করা হয়। পরিদর্শন শেষে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে এখানে এসেছি এয়ারপোর্টের ব্যবস্থাপনা, যাত্রীসেবাসহ সবাই যথাযথভাবে কাজ করে কি-না সেটা দেখতে। আমরা সর্বক্ষণিক এগুলো দেখি। আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা টিম করেছি। সপ্তাহে তিনদিন মন্ত্রণালয়ের লোকজন এখানে থাকে। কোন ধরনের অবস্থাপনা হয় কি না তারা দেখেন। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সামনেই এখানে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন সেবার মান ভাল। ইমিগ্রেশনে তাদের কোন সমস্যা হয় নেই। যাত্রী হয়রানি বন্ধের বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হলেন, এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্দেহ হলে যাকে চেক করা দরকার শুধু তাকেই করুন। আমাদের প্রতিদিন ২১ হাজারের মতো যাত্রী আসা-যাওয়া। সবাইকে যদি চেকের সম্মুখীন হতে হয় তবে সেটা যাত্রী সেবার অনুকূল হবে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যেক যাত্রীকে যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা না হয়। হয়রানি না করা হয়। যাদের তারা প্রয়োজন মনে করবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। প্রয়োজনে তাদের আলাদা করে জিজ্ঞাসা করবেন। এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্যই আজকে এখানে আসা। যাত্রী সেবার মান বাড়ানো নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ট্রলি সঙ্কট ছিল। সেটা এখন আর নেই। লাগেজ বেল্টে যেন কোন সমস্যা না হয় এ জন্য অনেকগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছি। গত ২৬ মার্চ আমরা টরেন্টোতে গিয়েছি। আগামী জুনের মধ্যে যেন টরেন্টোর ফ্লাইট কীভাবে সহজ ও যাত্রীসেবা সহজ হয় এ ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটা টিম এসেছিল সিকিউরিটির ওপরে। তারা অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। আগামী ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু করার প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী বলেছেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অন্যান্য গন্তব্যের সিডিউল ফ্লাইট কমানো হবে। হজ ফ্লাইট প্রসঙ্গে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ৩১ মে যেন হজ ফ্লাইট শুরু করা যায়, সে জন্য প্রস্তুতি আছে। কিন্তু হজে যারা যাবেন; তাদের জন্য বাড়ি ভাড়া এবং মোয়াল্লেম নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো করতে পারেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়গুলো এখনও ক্লিয়ার হয়নি। তবে আমাদের বিশ্বাস নির্দিষ্ট সময়ে কাজগুলো সম্পন্ন করবে দেশটি। ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো দেখছে, আমাদের বিশ্বাস এই সময়ের মধ্যে সব হয়ে যাবে। হজ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সিডিউল ফ্লাইট বিঘœ হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমানের বহরে ২১টি এর মধ্যে চারটি বোয়িং-৭৭৭। ২০১৯ সালে এই চারটি দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছিল। এ বছরও সেটি করা হবে। এতে বিমানের অন্যান্য গন্তব্যের সিডিউল ফ্লাইট এর ফ্রিকোয়েন্সি আমরা কমিয়ে দেব। কম গুরুত্বপূর্ণ ও কম লাভজনক রুটের ফ্রিকোয়েন্সি কমানো হবে। এটা দুই মাসের বিষয়। সিডিউল ফ্লাইটে কোনও ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সিং কমানো হবে না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন- দেশে বর্তমানে এ্যাভিয়েশন খাতে বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে থার্ড টার্মিনাল চালু করা হবে। চট্টগ্রাম সমুদ্র ও বিমানবন্দরে সতর্কতা ॥ স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, করোনার পর বিশে^ আরেক আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে ‘মাঙ্কিপক্স’। বেশ কয়েকটি দেশে ধীরে ধীরে এর সংক্রমণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে করে সতর্কতা অবলম্বন করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও শাহ আমানত বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবীর জানান, সমুদ্রবন্দর ও বিমান বন্দরে পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নতুন এই ভাইরাস দেখা দেয়ার পর এ সংক্রমণ যেন বাংলাদেশে হতে না পারে সে জন্য এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। এ লক্ষ্যে বন্দরে চিকিৎসকদের পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তা কর্মীও নিয়োজিত রাখা হয়েছে। মাঙ্কিপক্সের চিহ্ন বা লক্ষণ কারও মধ্যে দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গেই তা অবহিত করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×