ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

জিসি দেব ছিলেন মহান মানবতাবাদী দার্শনিক

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

জিসি দেব ছিলেন মহান মানবতাবাদী দার্শনিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক শহীদ অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব। তিনি জিসি দেব নামেই সমধিক পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বিভীষিকাময় কাল রাতে পাকিস্তান হানাদারদের হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার হয়েছিলেন যারা, তাদেরই একজন এই মনীষী। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ধ্বংস করার হিংস্র পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাকিস্তানী সৈন্যরা নিবেদিতপ্রাণ মানবপ্রেমিক এই বরেণ্য শিক্ষককে হত্যা করে। ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সিলেটের বিয়ানী বাজারের লাউতা গ্রামে ড. জিসি দেবের জন্ম। প্রখ্যাত দার্শনিক শহীদ অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব স্মরণে অনলাইনে একক বক্তৃতানুষ্ঠান হয় মঙ্গলবার বিকেলে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদান করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান। স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শহীদ অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব ছিলেন একজন মহান মানবতাবাদী দার্শনিক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৃহৎ মানবের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত ছিল তার দর্শনচিন্তা। যুক্তিবিজ্ঞান, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ এবং চিন্তার স্বাধীনতা ছিল তার দর্শনভাবনার মূলে। আমৃত্যু মানববাদী দর্শনের ধারক ও বাহক অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মানবতাবিরোধী হত্যাযজ্ঞের লক্ষ্যবস্তু হয়ে প্রাণ বিসর্জন দেন। বাংলাদেশের আপামর মানুষের কাছে তিনি চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন। পাকিস্তানী হানাদাররা যখন আক্রমণ করে, তখন তিনি তাদের সামনে দুহাত উর্ধে তুলে ‘গুড সেন্স গুড সেন্স’ বলে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হয়নি। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করে সদা হাস্যোজ্জ্বল জিসি দেব এবং তার মুসলিম দত্তক কন্যার স্বামীকেও। তার পালিত কন্যা রোকেয়া বেগম ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান, বিধায় বেঁচে গিয়েছিলেন। জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও জিসি দেব দেশত্যাগ করেননি। স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি ছিলেন একাত্মতা। জীবনঘনিষ্ঠ মানবিক দর্শন প্রচারের জন্য চিরকুমার ড. জিসি দেব তার সমস্ত সম্পত্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গেছেন, যা দ্বারা পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন কেন্দ্র (ডিসিপিএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। সভাপতির ভাষণে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, শহীদ অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব তার জীবনব্যাপী সাধনায় মানবদর্শনের রূপরেখা আমাদের সামনে উপস্থাপন করে গেছেন। এখন আমাদের উচিত, তার দর্শনভাবনায় প্রাণিত হয়ে মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করা। তাহলেই তার পবিত্র আত্মা শান্তি লাভ করবে।
×