
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার বোট ক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা, গ্রেফতারের সূত্র ধরে রাজধানীর অভিজাত সামাজিক ক্লাবগুলোতে মদ, জুয়া ও নর্তকীনাচসহ সব ধরণের অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ক্লাবের সাধারণ সদস্যরা।
বিভিন্ন ক্লাবের কতিপয় সদস্যের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়ে পরিবার নিয়ে ক্লাবে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। ক্লাব বিমুখ সদস্যরা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনায় আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকার অভিজাত এলাকা বনানী ক্লাবের কয়েকজন সিনিয়র সদস্য বলেছেন, ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, পরীমনির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার ক্লাবগুলোর কার্যক্রম নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তখন বিভিন্ন ক্লাবের নানা অনিয়মের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এসব ঘটনার জের ধরে ক্লাবগুলোতে বেড়েছে গোয়েন্দা নজরদারী। সদস্যদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভীতি। বন্ধ হয়ে গেছে ক্লাবে যাতায়াত। পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন ঢাকার বাইরের কোন রিসোর্টে।
তারা বলেন, সাধারণ ভাবে ঢাকার সামাজিক ক্লাবগুলো রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তবে মহামারী করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও ভোররাত পর্যন্ত বনানীর একটি ক্লাবে পার্টি চলতো। সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে সামাজিক ক্লাবে ভোররাত ৪টা পর্যন্ত মদ ও নর্তকী নাচ করার দায় ওই ক্লাবের সভাপতি এড়াতে পারেন না।
সদস্যদের অভিযোগ ঢাকার অভিজাত সামাজিক ক্লাবগুলোতে কতিপয় ব্যক্তি নাইট ক্লাবে পরিণত করেছেন। ঘুরে ফিরে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি এসব ক্লাবের নেতৃত্বে থাকার কারণে সামাজিক ক্লাবগুলো নাইট ক্লাব হয়েছে। নাইট ক্লাবের সংস্কৃতি থেকে বের হতে না পারলে পারিবারিক ক্লাব হবে না কোনদিন। অধিকাংশ সিনিয়র সদস্য স্ত্রী, সন্ত্রান, পরিবার নিয়ে আর ক্লাবমুখী হবেন না।
বেশ কয়েক বছর ধরে বনানী ক্লাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন ক্লাব, পার্টি, মডেলসহ নানা কারণে আলোচনার তুঙ্গে ওঠা রুবেল আজিজ। তিনি পারটেক্স গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত এমএ হাশেমের সন্তান।
রুবেল আজিজ ও তার যমজ ভাই শওকত আজিজ রাসেলের সঙ্গে ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাসহ কয়েকজন মডেল মদের গ্লাস হাতে নাচের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বনানী ক্লাবের পিছনের একটি আবাসিক ভবনের তিনটি ফ্লোর ক্রয় করে ক্লাবের গেস্ট রুম করেছেন রুবেল আজিজ। বিভিন্ন সময় ক্লাবের গেস্টদের যাতায়াতের কারণে বিপাকে পড়েছেন ওই ভবনের বাসিন্দারা। তারা আবাসিক ভবন থেকে বনানী ক্লাবের গেস্ট হাউস স্থানান্তর বা বন্ধ করার জন্য উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছেন।
এসব বিষয়ে বনানী ক্লাবের প্রেসিডেন্ট রুবেল আজিজের বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
ক্লাবের সদস্যরা বলেছেন, ক্লাব সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবের অভিযোগও রয়েছে। আমাদের ঢাকা শহরে বিভিন্ন ক্লাব আছে, সে সব ক্লাবের অনুমোদন নেওয়ার সময় যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো আসলে কি পরিপালন করা হচ্ছে। চিত্রনায়িকা পরীমনির দায়ের করা মামলায় ঢাকা বোট ক্লাবের তিনজন সদস্যকে গ্রেফতারের পর পুলিশ তাদের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা জেলও খেটেছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, ক্লাব গঠন বা মানুষের সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার থাকলেও কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। ক্লাব কালচার বলতেই যে সেটা খারাপ মনে করা যায়না। সেই ক্লাব কী করছে, কোন ধরনের নাগরিককে কী ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে, কারা সদস্য হচ্ছেন, কি করেন এসব দেখার বিষয় আছে।
যদিও সরকারের নানা শর্ত পূরণ করে লিমিটেড কোম্পানি গঠন করে এসব ক্লাব তৈরি করা হয়েছে। এসব ক্লাব প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার যেসব শর্ত দিয়েছে, ভবিষ্যতে যেন তার সবগুলোই মেনে চলা হয়। সে বিষয়টি নিশ্চিত করার সময় এসেছে। তা না হলে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীরা ভবিষ্যতেও বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা চালাবে ভাঙচুর করবে। ফলে ক্লাবের সদস্য হিসেবে আমাদের সর্ম্পকে পরিবার তো বটেই সমাজের চোখেও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
চলতি বছরের ৮ জুন গুলশানে অল কমিউনিটি ক্লাব ভাঙচুর করে পরীমনি। ক্লাব কর্তৃপক্ষ ৯৯৯ ফোন দিলে ওই রাতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবের পর বনানী ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে। বনানী ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েও ভাঙচুর করেন পরীমিন। ৯ জুন মধ্যরাতে সাভারের ঢাকা বোট ক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা হলে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট খন্দকার মশিউজ্জামান সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকার সবগুলো ক্লাবই সামাজিক ক্লাব। যাদের কিছু নিয়ম কানুন আছে- সেই নিয়ম মেনেই করা হয়। "ক্লাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এখানে স্পোর্টস হয়। এর সাথে কিছু রিফ্রেশমেন্ট থাকে। এখানে নিয়মের কোন ব্যতয় হয় না।
তিনি আরও বলেন, "হতে পারে নিউ জেনারেশন ক্লাবগুলোতে নতুন আঙ্গিক বা কিছু নতুন মাত্রা হয়তো যোগ হতে পারে। কিন্তু বেসিক যে কোড অব কন্ডাক্ট-এটা প্রায় সব ক্লাবেই একই থাকে এবং মানতে হয়।"