স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রতিষ্ঠার কাজ হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, যা আগামী ২০২২ সালের শেষের দিকে শতভাগ শেষ করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এই কাজ এগিয়ে গেলে আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ রেল রুট চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী এবং উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এসব প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীকে। এজন্য নির্মাণ কাজে ধীরগতি নেই। রেললাইন প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্কে সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। নতুন যুগের সূচনা হবে রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থায়। পদ্মা সেতুর মতো সরকারের উন্নয়নের সাফল্যের আরেক নতুন মাইলফলক এই প্রকল্পটি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিছু সমস্যার সমাধান হলে কাজ আরও এগিয়ে যেত।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের কাজ দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি বেশ ভাল। কিন্তু রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। রেলমন্ত্রীও পরিদর্শনে এসে জানিয়েছিলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে কক্সবাজার পর্যন্ত কাজ শেষ করা হবে। রেল সূত্র বলছে, তাদের অগ্রাধিকার পর্যটন শহর কক্সবাজারকে সংযুক্ত করা। সে অনুযায়ী দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলেছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এখন চলছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের অবকাঠামোগত সংশ্লিষ্ট কাজ। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ করা হবে কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রতিষ্ঠার, যা এখনও শুরু হয়নি এডিবির ফান্ড ও বিভিন্ন সমস্যায়। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কক্সবাজারের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে। দুই পর্যায়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে কাজের অগ্রগতি ভালই হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। সেগুলো মোকাবেলা করে এগোতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী বছর (২০২২) ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার। কিছু জটিলতা থাকলেও তা বড় কিছু না। সবচেয়ে বড় জটিলতা এখন বিদ্যুতের পোল/টাওয়ার। এসব অপসারণ না হওয়ায় কাজে অসুবিধা হচ্ছে। ভূমি জটিলতা বর্তমানে অনেকাংশে নিরসন হয়েছে, তাই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে গেছে। করোনার কারণে বেশ কিছু মালামাল বিদেশ থেকে আসেনি। তবে আশার কথা হলো, বর্তমানে রেলপথের ট্র্যাক বসানো শুরু হয়েছে। চলতি মাসে ওভারপাসের কাজ শুরু হয়ে যাবে।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে আইকনিক স্টেশন, ছোট-বড় সেতু, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং ও হাইওয়ে ক্রসিংয়ের কাজ চলছে। যা তদারকি করতে মন্ত্রী ও সরকারী উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা আসছে। কাজে যাতে কোন ধীরগতি না হয়, এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন। প্রধানমন্ত্রীকেও এ বিষয়ে অবগত করছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের বিভিন্ন স্থান, রামুর কয়েকটি নির্মাণাধীন ব্রিজ, রামুর জংশন এলাকা পরিদর্শন শেষে রামু রশিদ নগর এলাকায় ৬ কিলোমিটার রেললাইন পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এছাড়া তিনি কক্সবাজার শহরতলীর ঝিলংজা এলাকায় নির্মাণাধীন রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। সেদিন তিনি গণমাধ্যমকে জানান, কক্সবাজার যেহেতু একটি পর্যটন এলাকা, সে কারণে এই এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য আলাদা ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করা হবে। চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করে বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এতে করে অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেন, রেললাইন এখনও নির্মাণাধীন, তাই পানি নিষ্কাশনসহ পরিবেশগত কোন সমস্যা থাকলে তা এখনই সংশোধন করা হবে।