ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পাঁচবার রং বদলায় সুগন্ধী তুলসীমালা ধান

প্রকাশিত: ২১:১৪, ১৪ এপ্রিল ২০২১

পাঁচবার রং বদলায় সুগন্ধী তুলসীমালা ধান

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ স্থানীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় উচ্চমানের সুগন্ধী ধানের জাত তুলসীমালা। পদ্মার এপারের ২০ জেলার মধ্যে সুগন্ধী তুলসীমালা ধানের জাতটি এবার প্রথম চাষ করা হয় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার দাউনিয়াফাদ গ্রামে। পার্শ্ববর্তী গুপ্তমারী গ্রামের রণজিৎ ম-ল গত আমন মৌসুমে এই ধান চাষ করেন। ৫ শতক জমিতে চাষ করে এই ধান পাওয়া গেছে দেড় মণ। সে হিসেবে একর প্রতি তুলসীমালা ধানের ফলন হয়েছে ৩০ মণ। উৎপাদিত সব ধানই বীজ হিসেবে আগামী মৌসুমের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফুল হওয়া থেকে পাকা পর্যন্ত এ ধানে পাঁচবার রং বদলায়। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুগন্ধী তুলসীমালা ধান মূলত ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা ও আশপাশের কিছু এলাকায় চাষীরা শখের বশে জামাই বা আত্মীয়-স্বজন আপ্যায়নের জন্য চাষ করে থাকেন। সুগন্ধী কালোজিরা ধানের চালের চেয়েও আকারে ছোট তুলসীমালা ধানের চাল দিয়ে তৈরি যে কোন খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। ধান ও খড় থেকে শুরু করে মাঠময় সুগন্ধ ছড়ায়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে, দেশে মাত্র ২০-২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিলুপ্তপ্রায় এই ধান চাষ হয়। এর শতকরা ৫০ ভাগই আবাদ হয় শেরপুর জেলায়। উচ্চফলনশীল না হলেও এই ধানের চালের কদর এখনও বেশি। গত আমন মৌসুমে এ অঞ্চলে ২১ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে তুলসীমালা চাষ হয়। এরমধ্যে শেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। হেক্টরপ্রতি চালের উৎপাদন ১.৫৭ টন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান বলেন, শখের বশে তিনি শেরপুর থেকে মাত্র ২ কেজি তুলসীমালা ধানের বীজ সংগ্রহ করে বটিয়াঘাটার কৃষক রনজিৎ ম-লকে দেন এবং চাষ তত্ত্বাবধান করেন। তিনি জানান, এই ধানটি লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকায় হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু বাস্তবে ভাল হয়েছে। বটিয়াঘাটার স্থানীয় রানী স্যালুট, হরকোচ, কাচড়া জাতের ধানের একটির আকার ও ওজনের সমান তুলসীমালা ধানের ৩টি ধান। এই ধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ধানের ফুল আসার পর থেকে পাকা পর্যন্ত ৫ বার রং পাল্টায়। তুলসীমালা ধান দেখে অনেকেই বীজ নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে এ বছর ৫ থেকে ১০ জনকে কিছু বীজ দিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালযের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি তার ল্যাবে তুলসীমালা ধান নিয়ে অধিকতর গবেষণা করে চালের কিছু বৈশিষ্ট্য অন্য কোন জাতে প্রবেশ করানো যায় কিনা সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি এই ধানের বীজ সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং আগামী মৌসুমে গবেষণার জন্য তা কাজে লাগাবেন এবং টিস্যুকালচারও করবেন বলে তিনি জানান।
×