এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের গুলিতে আরও এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপের ক্যাডারদের কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট জটিল আকার ধারণ করছে। কৌশলে বিলম্বিত করা হচ্ছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের গুলিতে চার নারী-পুরুষ নিহত হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত সন্ত্রাসী আনাছ ও মাস্টার মুন্না গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর, গুলিবর্ষণের ঘটনায় আরও এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইয়াছিন ডি-৪, ২ ওয়েস্ট ক্যাম্পের মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র। ডি-৪ ক্যাম্পের হেড মাঝি মোঃ ওসমান জানিয়েছেন। ক্যাম্প ২ ওয়েস্ট ডি-ব্লকে রবিবার রাতে ৪শ’-৫শ’ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী যুবকরা দা-লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পের ১শ’ ঝুপড়ি ঘর ও ৫০টি দোকান ভাংচুর করেছে।
কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ জানান, দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে ২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। বর্তমানে ক্যাম্পের অভ্যন্তে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন। গত ৫ দিনের ঘটনায় ক্যাম্পে ১ নারীসহ ৪ জন খুন হওয়ায় ক্যাম্পে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সূত্রে জানা গেছে, কুতুপালং ক্যাম্পের ডি-৪, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া ক্যাম্পে রবিবার রাত ১টা থেকে ভোর পর্যন্ত দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে আবারও দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে হামলা, ভাংচুর, গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে রোহিঙ্গা মাঝি মোঃ আয়ুব খান জানিয়েছেন। এছাড়াও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত ১৪ এপিবিএনের উপপরিদর্শক ইয়াসিন ফারুক জানান, নতুন এবং পুরাতন রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনাগুলো ঘটছে।
সূত্রে জানা যায়, অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে বিরত রাখতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রত্যেহ রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে বুঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করতে আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) একটি ব্যাটালিয়ন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। আর্মড পুলিশের পাশাপাশি অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে নিরাপত্তায় কাজ করছে। এই আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে এক হাজার ৬শ’ পুলিশ সদস্য কাজ করছে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। রোহিঙ্গারা যেন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য শিবিরে তারকাঁটারের বেড়া দেয়ার কাজও চলছে। তবে ওই কাঁটাতারের বেড়া ছেদ করে বেরিয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। মোট কথা হচ্ছে- রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় রেখে সম্মানের সহিত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনকল্পে সরকারের পক্ষ থেকে নানান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারপরও আশ্রয় ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের দফায় দফায় গুলি বিনিময়, অগ্নিসংযোগ, প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, হত্যা-গুম, মুক্তিপণ, ইয়াবা-স্বর্ণ চোরাচালান ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকা-ে ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন জেগেছে, উদ্বাস্তুদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে কারা? এক সপ্তাহ ধরে একাধিক শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের ক্যাডারদের মধ্যে গোলাগুলি, খুন এটা কিসের ইঙ্গিত? এসব কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান কবে হবে জানে না কেউ। করোনা সঙ্কটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে যায়। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার পর সরকার এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে পারে সন্দেহে স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে আশ্রয় শিবিরে অস্ত্রের মহড়া চালাচ্ছে। এদিকে উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াটাই যেন কাল হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। কিছু সংখ্যক এনজিওর ইন্ধন ও পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের সহযোগিতায় কেউ কিরিচ, কেউ অস্ত্র আবার কেউ কম্পু-ক্যারাতে ট্রেনিং নিচ্ছে। শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র্যাব। অস্ত্র বানানোর দুই কারিগরসহ তিনটি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাব।