ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্যা পরিস্থিতি এবার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১১ আগস্ট ২০২০

বন্যা পরিস্থিতি এবার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্যা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না এখনই। দেশের সব নদ নদীর পানি কমতে শুরু করলেও আরও এক দফায় পানি বাড়ার আভাস রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ১৬ আগস্ট থেকে আরেক দফা পানি বাড়তে পারে। এই এই সময়ে উজানে এবং দেশের ভেতরে ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হতে পারে। এই দফায় পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতি এবার আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, চতুর্থ দফায় বন্যা বেড়ে সমতলে নদ নদীর পানি আবারও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবার বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ না করলেও স্থায়িত্বের দিক দিয়ে অতীতের যে কোন সময়ের কের্ড অতিক্রম করেছে। গত ৪৭ দিন ধরে দেশের উত্তর মধ্য এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল বন্যায় আক্রান্ত। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করলেও তার গতি ছিল খুব ধীর। গত ২৬ জুন থেকে দেশের বন্যার প্রকোপ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় বন্যা পানি কমতে শুরু করতে না করতে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের দ্বিতীয় দফা এবং দ্বিতীয় দফায় পানি কমতে না কমতেই জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের তৃতীয় দফায় বন্যার প্রকোপ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বন্যার কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। প্রধান প্রধান নদ নদীসহ ৮টি নদীর পানি ১১টি পয়েন্ট দিয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে একযোগে পানি কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় আরও এক দফা পানি বেড়ে যাওয়ার আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, কমতে থাকা ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি স্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে আজকের মধ্যে। তবে অন্য সব নদীর পানি সমতলে কমছে। যা অব্যাহত থাকবে। এদিকে বন্যা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘ হয়ে পড়তে পারে বলে এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতি স্থায়ী হয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে বন্যা হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে বন্যা ও পুনর্বাসন কর্মসূচী নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার বেশ নিচে চলে গেছে। পদ্মা নদীর পানির স্তর ও গতি কমেছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগের প্রেডিকশন অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী পার্টিকুলারলি এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন প্রস্তুত থাকতে। বিষেজ্ঞরা বলছেন, পানি এখন কমছে। কিন্তু আরও এক দফা ভারি বৃষ্টি হতে পারে। মধ্য আগস্টের পর পরে আরেকবার ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে পানি এখনই পুরোপুরি নামবে না। আরও কিছু দিন বন্যার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১৬ আগস্টের পর আবারও নদ নদীর পানি বাড়বে। এই সময়ে নদ নদীর পানি আবারও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু ঢাকা ও এর আশপাশের বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হতে পারে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ১৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পানি স্থিতিশীল হয়ে পড়বে। এরপর আবার বাড়তে শুরু করবে। ফলে পানি কমতে শুরু করলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা ও তার আশপাশের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। ফলে ঢাকার বন্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ার আভাস দেয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি সামনে বাড়তে পারে। বুয়েটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এই মৌসুমে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রস্তুত থাকতে হবে। যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহীর মতো যেসব জায়গায় এবার বন্যা হয়নি, সেসব এলাকাতেও সামনে শঙ্কা থাকছে, কারণ গত বছর গঙ্গায় বন্যা এসেছিল অক্টোবরের দিকে। তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ু বেশি সক্রিয় থাকায় এবার বর্ষায় ভারিবর্ষণ হয়েছে। নদীর গতিপ্রকৃতি বদলে দেয়ায় আটকে থাকা পানি নামতে দেরি হচ্ছে। আর সে কারণেই মানুষকে গত দেড় মাস ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে পানি কমতে শুরু করায় বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু। এসব এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষদের হাত, পা ও আঙ্গুল ফেটে যাচ্ছে। শরীরে বাসা বাঁধছে নানান জটিল রোগ। লোকজন রোগব্যাধি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। হাতে কাজ নেই। ঘরবাড়ি মেরামত করা, ভেঙ্গেপড়া নলকূপ ও বাথরুম সংস্কার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। মাদারীপুর ॥ নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসি ও নদী ভাঙ্গন এলাকার মানুষের। বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও জেলার পদ্মা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের দুপাশের অনেক গ্রামের নিচু এলাকার ঘরবাড়ি এখনও পানির নিচে। পাশাপাশি বিভিন্ন নদ-নদীতে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এখনও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। টাঙ্গাইল ॥ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এর ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। তবে জেলায় এখনও ৫টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ১১টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে আছে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘড়-বাড়ি, ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার পৌর এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। গাইবান্ধা ॥ নদ-নদীর পানি কমায় গাইবান্ধায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলগুলো থেকে পানি নেমে গেছে। ফলে এসব এলাকার যেসব পরিবার বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের অধিকাংশই ইতোমধ্যে ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
×