স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের গৌরব অহংকারের চট্টগ্রাম বন্দর। জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ প্রবাহিনী শিরা হিসেবে খ্যাত এ বন্দর। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর তার গৌরবের ১৩২ বছর পার করে ১৩৩-এ পদার্পণ করছে বৃহস্পতিবার। প্রতি বছর দিনটিকে কর্তৃপক্ষ ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। বছরে এই একটি দিনের জন্য মুখিয়ে থাকেন বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এ উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও ব্যাপক আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতা। বুধবার এক মতবিনিময় সভায় বন্দরের দীর্ঘপথ চলার ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণে গৃহীত পরিকল্পনা ও চলমান প্রকল্পগুলো তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, দেশের আমদানি-রফতানি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরও নিজের সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। প্রতিবছরই বাড়ছে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি। ভবিষ্যত চাহিদা বিবেচনায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন টার্মিনাল। সংগৃহীত হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। কন্টেনার হ্যান্ডলিং ও দক্ষতার বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিশ্বের ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দরগুলোর অন্যতম। বন্দরের শহীদ বজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মোঃ জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর খন্দকার আখতার হোসেন, সচিব মোঃ ওমর ফারুক এবং শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বন্দরের দক্ষতার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতির কর্মকা-ের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই সামাল দিচ্ছে এই বন্দর। আজকের বন্দর বিগত দিনের চেয়ে আরও কর্মক্ষম এবং আগামীর বন্দর হতে যাচ্ছে আরও আকর্ষণীয়, আরও সমৃদ্ধ ও কার্যকর। বর্তমানে কন্টেনারবাহী জাহাজ বহির্নোঙ্গরে আসার এক থেকে দু’দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়তে পারছে। আবার একদিনও অপেক্ষা না করে সরাসরি জেটিতে ভেড়ার রেকর্ডও রয়েছে। ২০১৭ সালে জাহাজের গড় সর্বোচ্চ অবস্থান কাল ছিল ৭ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত। পণ্য ওঠানামায় গতিও বেড়েছে। ফলে কন্টেনারবাহী জাহাজকে কম সময় জেটিতে অবস্থান করতে হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজের জেটি খালি থাকায় সেখানেও ভেড়ানো যাচ্ছে কন্টেনারবাহী জাহাজ। এতে করে একসঙ্গে ১২ থেকে ১৪টি জাহাজে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। বন্দরের দক্ষতা ও ব্যস্ততা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০১৭ সালে জাহাজ এসেছিল ৩ হাজার ৩৭০টি। আর ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪৭টি। দেশের শিল্পায়ন ও আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন নতুন জেটি স্থাপনের মাধ্যমে সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে চলেছে।
কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি তুলে ধরে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ২০১৭ সালে কন্টেনার ওঠানামা হয়েছিল ২৬ লাখ ৬৭ হাজার টিইইউএস। ২০১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ২৯ লাখ ৩ হাজার টিইইউএস। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। সাধারণ কার্গো ওঠানামা হয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ মেট্রিকটন। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৩ শতাংশ। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের এ পরিসংখ্যান চট্টগ্রাম বন্দরের ত্রিশ বছর মেয়াদী প্রজ্ঞাপনকে ছাড়িয়ে গেছে। ইয়ার্ডে কন্টেনার ধারণক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি কন্টেনার রাখা সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যত চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি), লালদিয়া টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল (কেসিটি) নামে চারটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছে। এরমধ্যে বে-টার্মিনাল ও পিসিটি নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। মীরসরাইয়ে নির্মাণাধীন দেশের বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর’কে সাপোর্ট দিতে সীতাকু- এলাকায় আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়ে তিনগুণ হবে। একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বন্দর উন্নীত হচ্ছে নতুন থেকে নতুনতর উচ্চতায়।
চট্টগ্রাম বন্দর দিবসকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উৎসব আমেজ। রং-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়েছে বন্দর ভবন এবং আশপাশ। বছরে এই একটি দিন বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। কেননা, দুই ঈদের সকালের শিফট ছাড়া বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টাই বন্দর চালু থাকে। বিশেষ এ দিনে সকলেই আনন্দে মেতে উঠেন। থাকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান, আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: