ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে উদ্বাস্তু

নদী-সাগর গিলে খাচ্ছে চালিতাবুনিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৫ জুলাই ২০১৮

নদী-সাগর গিলে খাচ্ছে  চালিতাবুনিয়া

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ তিনদিকে নদী। একদিকে সাগর। চারদিক থেকে অব্যাহত ভাঙ্গন গিলে খাচ্ছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন। চলতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন আরও ভয়াবহ হয়ে রূপ ধারণ করেছে। ভাঙ্গনে আয়তনে যেমন কমছে ইউনিয়নটি, তেমনি কমছে জনসংখ্যা। অন্যদিকে বাড়ছে উদ্বাস্তু। কর্মসংস্থানের অভাবে বাস্তুহারাদের জনস্রোত হচ্ছে শহরমুখী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেয়ে ইউনিয়নটির রক্ষায় নদী ভাঙ্গনের ওপর জোর দিতে চাইছেন। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের অভাবে কার্যক্রম এগোচ্ছে না। আয়তন ও জনসংখ্যায় এমনিতেই চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন সবচেয়ে ছোট। তার ওপরে গত চার-পাঁচ দশক ধরে চলছে অব্যাহত ভাঙ্গন। ইউনিয়নটির দক্ষিণে বিস্তীর্ণ সাগর এবং অপর তিনদিক নদী দ্বারা বেষ্টিত। এর মধ্যে প্রমত্তা ডিগ্রী ও দারচিড়া নদী ক্রমে গিলে খাচ্ছে ইউনিয়নটিকে। আরেক প্রমত্তা নদী আগুনমুখার তীব্র স্রোত কোড়ালিয়ার চরে বাধা পেয়ে ডিগ্রী ও দারচিড়া নদীকে সর্বগ্রাসী করে তুলছে। আটটি গ্রাম নিয়ে গঠিত চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রামই পড়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে। ভাঙ্গনের কবলে পড়া গ্রামগুলো হচ্ছে- উত্তর চালিতাবুনিয়া, বিবিরহাওলা, মরাজাঙ্গি ও গোলবুনিয়া গ্রাম। সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনে ভাঙ্গন আরও তীব্র হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, গত এক-দেড় মাসে অন্তত ৫০টি বাড়িঘর ও বিপুল পরিমাণ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত তিন বছরে বিলীন হয়েছে অন্তত দেড় শ’ বাড়িঘর। নতুন করে আরও অন্তত এক হাজার বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে রয়েছে। বাড়িঘর বিলীন হওয়া লোকজনের একটি অংশ বেড়িবাঁধসহ রাস্তার ওপর পলিথিন টানিয়ে উদ্বাস্তু জীবন-যাপন করছে। অপর একটি অংশ শহরমুখী হচ্ছে। এছাড়া ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার একর ধানী জমিসহ বহু সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের অসিম মীর (৩৫) জানান, তার ভিটেমাটি ডিগ্রী নদী গিলে খেয়েছে। তিন সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে এখন বেড়িবাঁধের ওপর পলিথিন টানিয়ে বাস করছেন। তিনি বলেন, ভাঙ্গনের হাত থাইক্কা আমাগো নিস্তার নাই। নদী আমাগো সব শ্যাষ কইর‌্যা দেছে। এ্যাহন আমি সরকারী জাগায় থাহি। নদী এ্যাহন এহানেও আইছে। চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান হাওলাদার জানান, নদী ভাঙ্গনে চারটি গ্রামের বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। অনেক ধনী পরিবার জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আগুনমুখা ও ডিগ্রী নদীতে বালু উত্তোলন এবং চর ড্রেজিং না করায় ভাঙ্গনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। অনেক জায়গায় এখন আর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবস্থা এমন পর্যায়ে এসেছে, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা না হলে মানচিত্র থেকে চালিতাবুনিয়া পুরোপুরি হারিয়ে যাবে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করে জানান, আগে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ, তারপর বেড়িবাঁধ নির্মাণে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন বরাদ্দই পাওয়া যাচ্ছে না। . জামালপুর নিজস্ব সংবাদদাতা জামালপুর থেকে জানান, জামালপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হরিপুর গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত চারদিনে স্থানীয় পাঁচটি পরিবারের ১১টি ঘরসহ বসতভিটা ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন এবং অন্তত ২৫টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। তীব্র ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের জামালপুর পৌরসভার হরিপুর অংশ ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙ্গন কবলিত পৌরসভার হরিপুর গ্রামে জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়ক থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ মাত্র ৩০ ফুট দূরত্বে রয়েছে। স্থানীয়রা জানালেন, ভাঙ্গন রোধে এখনই জরুরী পদক্ষেপ না নেয়া হলে সড়কটিসহ বিস্তীর্ণ জনবসতি এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদে দ্রুত বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত সাতদিন ধরে আকস্মিক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত দু’দিনে নূরুল মিস্ত্রি, রেনু বেগম, হাশেম আলী, আজিজুল হক ও মমতাজ আলীর ১১টি টিনের ঘর ও বসতভিটা ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। অন্তত আরও ২৫টি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। স্থানীয় বৃদ্ধ মোফাজ্জল হোসেন (৬৫) বলেন, ‘ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে এইখান দিয়া নদী মেলা গভীর অইছে। এহন আমগরে বাড়িঘর, জমিজমা, গাছগাছালি সবই নদীয়ে খাইতাছে। আমরা অহন কই যামু।’ তার মতো ক্ষতিগ্রস্ত আরও অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরঘেঁষা এলাকা থেকে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের গভীরতা বেড়েছে। চলতি বর্ষায় এসব স্থানে পানি প্রবাহের সময় ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি হয়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
×