ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে বোরো ধানবীজ সঙ্কট ॥ দ্বিগুণ দাম

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

নীলফামারীতে বোরো ধানবীজ সঙ্কট ॥ দ্বিগুণ দাম

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ বোরো আবাদের বিভিন্ন জাতের ধানবীজের সঙ্কট দেখা দিয়েছে জেলাজুড়ে। বিভিন্ন দোকান ও সরকারী বীজ বিক্রয় কেন্দ্রে পছন্দের বীজ খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষক। যদিও চাহিদা অনুযায়ী বীজ মিলছে তবে দাম গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ। গত বছর ব্রি ধান ২৮ জাতে নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় কৃষকরা অন্য জাতের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষকের চাহিদার তুলনায় এসব জাতের সরবরাহ কম। গত দুইদিন বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ কথা জানা গেছে। সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়নের শাহপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল সাত্তার বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো আবাদের জন্য ১৫ দিন আগে বীজ সংগ্রহ করি। খোঁজাখুঁজির পর দোকান থেকে বিএডিসির ১৯ কেজি বীজ এক হাজার দুই শ’ টাকায় কিনেছি। কিন্তু বস্তার গায়ে প্রতি কেজির সরকার নির্ধারিত মূল্য ৫০ টাকা দেখেছি। একইভাবে ১০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা বীজের সরকারী মূল্য পাঁচ শ’ টাকা হলেও ওই বস্তা ছয় শ’ টাকায় কিনেছেন একই গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দীন, সামসুল ইসলাম। কৃষক জামাল উদ্দীন বলেন, আমি ১৫ দিন আগে ওই বীজ সংগ্রহ করেছি। এখন শুনছি দাম আরও বেশি। এদিকে সদর উপজেলার পৌর এলাকার রেলগেট কুখাপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাওসার বলেন, চার বিঘা জমিতে ব্রি ২৯ জাতের ধান আবাদের জন্য ১০ দিন আগে বীজ সংগ্রহের জন্য বিএডিসির বীজ বিক্রয় কেন্দ্রে যাই, সেখানে গিয়ে বীজ না পেয়ে চলে আসি। ওই বীজ এখন বাজারে বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের উত্তর ধর্মপাল গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, এবারে পাঁচ বিঘা জমিতে হাইব্রীড জাতের বোরো ধান আবাদের পরিকল্পনা নিয়েছি। কিন্তু গত ১০ দিন ধরে ধানের বীজের জন্য বিভিন্ন দোকানে ঘুরছি। বীজ নেই বলে ব্যবসায়ীরা জানালেও গোপন আঁতাতে দ্বিগুণ দামে ওই ব্যবসায়ীদের কাছেই বীজ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, এলাকার অনেকে এভাবে বীজ সংগ্রহ করেছেন। অধিক দামের কারণে আমি সংগ্রহ করতে পারিনি। এদিকে বীজতলা তৈরির সময় পার হচ্ছে। একই গ্রামের কৃষক সন্তোষ কুমার রায় আট বিঘা এবং খয়রাত হোসেন পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো আবাদের প্রস্ততি নিয়ে বীজ সংগ্রহে হোঁচট খেয়েছে। শহরের উকিলের মোড়ের বীজ ব্যবসায়ী শাহ ট্রেডার্সের মালিক মামুনুর রশিদ বলেন, আমি খুচরা ব্যবসায়ী, ডিলারের কাছ থেকে কিনে এনে বীজ বিক্রি করি। এবারে ব্রি ধান ২৯সহ হাইব্রীড জাতের চাহিদা বেশি, এ কারণে বাজারে ওই বীজের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে কেনার কারণে দাম বেশি পড়ছে। সালমা বীজ ভা-ারের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, গত বছর ব্রি ধান ২৮ জাতে নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় কৃষকরা অন্য জাতের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষকের চাহিদার তুলনায় এসব জাতের সরবরাহ কম। জেলার বিএডিসি বীজ বিপণন কর্পোরেশন বিক্রয় কেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক আফসানা বেগম জানান, এবারে ব্রি ধান ২৮ বীজ সরবরাহ পাওয়া গেছে সাড়ে ১২ মেট্রিকটন, ব্রি ধান ২৯ বীজ পাঁচ মেট্রিক টন, সুপার হাইব্রীড এসএল ৮ এইচ ৩৪০ কেজি। ১০ দিন আগে ব্রি ধান ২৯ এবং সুপার হাইব্রীড এসএল ৮ এইচ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ব্রি ধান ২৮ মজুদ রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহসীন রেজা বলেন, জেলায় এবারে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ২৭৯ হেক্টর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি আবাদে বীজের চাহিদা এক হাজার ৬৯৮ মেট্রিকটন। এ ব্যাপারে বিএডিসি বীজ বিপণন কর্পোরেশনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আকতারুন নাহারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন জেলায় কৃষক এবং ডিলার পর্যায়ে এবারে বিএডিসি ২৪৩ মেট্রিকটন বীজ সরবরাহ করেছে। আমি বাজার মনিটরিং করেছি, দাম বেশির বিষয়টি নজরে এসেছে।
×