ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তপথে অনুপ্রবেশ অব্যাহত

সমান অধিকার না পেলে ফিরতে চায় না রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ অক্টোবর ২০১৭

সমান অধিকার না পেলে ফিরতে চায় না রোহিঙ্গারা

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। সীমান্তপথে অনুপ্রবেশে এখন বাধা নেই। আর এই সুযোগে দ্বিগুণ উৎসাহে নির্যাতন চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ফলে নতুন করে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এর মধ্যেই প্রায় সাড়ে ৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। আশ্রিতরা বলছে, মিয়ানমার সরকার তাদের জন্য সেখানে বসবাসকারী অন্যদের মতো সমান সুবিধা নিশ্চিত না করলে তারা ফিরে যাবে না। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মিয়ানমার যথাযথ অধিকার নিশ্চিতের আশ্বাস না দিলে রোহিঙ্গারা কি চিরতরে এদেশেই থেকে যাবে? বাংলাদেশই কি বহন করে যাবে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার চাপ? এমন অনেক প্রশ্ন বদ্ধমূল হচ্ছে জনমনে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার বাসিন্দারা রয়েছে এক ধরনের অস্বস্তিতে। কারণ তারা পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘুতে। এমন কোন দিন নেই, যেদিন অন্তত কয়েক হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে না। উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্তপথ এবং শাহপরীর দ্বীপ হয়ে রোহিঙ্গা ঢল অব্যাহত আছে প্রবল স্রোতের মতো। গত দুইদিনে এসেছে আরও অন্তত অর্ধলক্ষ। রাখাইন রাজ্য যেন রোহিঙ্গাশূন্য হওয়ার পথে। ত্রাণ নিতে এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য কুতুপালংয়ে আগের স্থায়ী ক্যাম্পের পাশাপাশি করা হয়েছে ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র। সকল ক্যাম্পেই এখন ত্রাণের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত। জাতিসংঘের সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিদিনই যাচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। রোহিঙ্গা পরিবারগুলোও ত্রাণের জন্য ছুটছে এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে। ঘরে পর্যাপ্ত ত্রাণ সত্ত্বে¡ও তারা আরও বেশি পাওয়ার লোভে যাচ্ছে একাধিক ক্যাম্পে। অনেকেই একাধিক ক্যাম্পের তালিকায় নাম লিখিয়ে রেখেছে। বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শেষ না হওয়ায় তাদের পুরোপুরি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা এখনও সম্ভব হয়নি। আশ্রিতরা রাখাইন প্রদেশের তুলনায় ভাল থাকায় উৎসাহিত হচ্ছে ওপারে থাকা রোহিঙ্গারাও। এক্ষেত্রে তাদের সহায়ক হয়েছে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কিং। অতিরিক্ত ত্রাণ পেয়ে বিক্রি করছে রোহিঙ্গারা ॥ উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল নিজ নিজ কক্ষে এখন প্রচুর ত্রাণসামগ্রী। কিন্তু তারপরও প্রতিদিনই তারা ত্রাণের জন্য ছুটছে এদিক ওদিক। এমনকি ত্রাণ বিতরণের খবরে অনেক দূরে পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। পরিবারের সকলেই দাঁড়াচ্ছে ত্রাণের লাইনে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় টেকনাফ ও উখিয়ার প্রতিটি ক্যাম্পে এখন পৌঁছে যাচ্ছে ত্রাণ। দেখা যাচ্ছে অনেক বেসরকারী উদ্যোগও। বিভিন্ন রোহিঙ্গা ঘরে গিয়ে দেখা যায় ত্রাণের মজুদ। শুধু ভোগ্যপণ্য বা নিত্যপণ্যই নয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে নগদ টাকাও। বিশেষ করে বস্তিতে গিয়ে টাকা দিচ্ছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। রোহিঙ্গাদের জন্য সিঙ্গাপুরের ত্রাণ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য এবার ত্রাণ এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে। মঙ্গলবার সকালে ৭ দশমিক ১৬ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সিঙ্গাপুরের একটি কার্গো বিমান চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ মালিকি ওসমান এবং কনসুলেট অব সিঙ্গাপুর উইলিয়াম চেক চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নানের কাছে এই ত্রাণ হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সিঙ্গাপুরের ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মেডিক্যাল সরঞ্জাম, তাবু, কম্বল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। নৌকাডুবির ঘটনায় আরও নয় মরদেহ উদ্ধার ॥ টেকনাফে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার হয়েছে আরও ৯টি মরদেহ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ ও হাবিরছড়া পয়েন্টে লাশগুলো ভেসে আসে। উদ্ধার হওয়া মৃতদেহসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। টেকনাফ থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নৌকাডুবির ঘটনার পর সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একজন শিশু ও আটজন নারীর মরদেহ উদ্ধার হয়। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত ॥ মঙ্গলবার সকাল ও বিকেলে উখিয়া সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে বানের পানির মতো বাংলাদেশে অব্যাহত থাকে রোহিঙ্গা ঢল। স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গা প্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে আবাসন, স্যানিটেশন ও চিকিৎসা সমস্যা। মিয়ানমারে উগ্রপন্থী মগদের কমিটি গঠন ॥ মিয়ানমারে রাখাইনে সামরিক বাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইনদের যাঁতাকলে পিষ্ট হলেও যেসব রোহিঙ্গা কোনভাবে সেখানে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে, এবার তাদের বয়কট করতে উগ্রপন্থী মগরা এলাকাভিত্তিক কমিটি গঠন করছে। রোহিঙ্গা গ্রাম অবরুদ্ধ রাখা, হাট-বাজারে রোহিঙ্গাদের বেচা-কেনা করতে না দেয়া, কোন ব্যবসায়ীকে পণ্য নিয়ে রোহিঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করতে বারণসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত করতে কাজ করবে গঠিত কমিটির সদস্যরা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে গ্রামছাড়া করার চেষ্টাও চালানো হবে। মিয়ানমার নাগরিককে কারাগারে প্রেরণ ॥ বাংলাদেশে মিথ্যা পরিচয়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী ওয়েবুং হ্লা মার্মা (৪৫) নামে আটক এক বর্মী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে প্রশাসন। রাখাইন প্রদেশের ক্যতম্রোত জেলার পাওয়ারা থানার পাওয়ারা গ্রামের বাসিন্দা মংচিংচা মার্মার পুত্র বান্দরবানের লামার হরিণঝিরি বৌদ্ধ বিহারের ভান্তে পরিচয়ে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছিলেন। টেকনাফে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা ॥ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে টেকনাফে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা ওপেন হাউসডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। থানা ভবনের সম্মেলন কক্ষে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে যা যা করা দরকার পুলিশ বাহিনী সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দির সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আফরুজুল হক টুটুল, সহকারী পুলিশ সুপার (উখিয়া-টেকনাফ সার্কেল) চাই লাউ মারমা, সহকারী পুলিশ সুপার (মহেশখালী সার্কেল) রতন কুমার দাস সুপ্ত, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল ভৌমিক, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শহিদুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা নুর আহমদ আনোয়রি, হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার, টেকনাফ বৌদ্ধ বিহার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ স¤পাদক হুই থুয়ে অং, খারাংখালী বৌদ্ধ বিহার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ স¤পাদক অং সু চুয়ে, হোয়াইক্যং লাতুরিখোলা বৌদ্ধ বিহার ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা আব্দুলু চাকমা প্রমুখ।
×