
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম বাবা হওয়ার অনুভুতিটা সত্যিই বিষ্ময়কর! যা সহজ ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। হয় যার উপলব্দি শুধুই তার! একজন পুরুষের জীবনের প্রথম সন্তান যখন মায়ের কোল আলোকিত করে সুন্দর এই পৃথিবীতে আসে তখন বিশ্বাসই হয়না যে আমি এখন একজন বাবা! কিন্তু মনের মধ্যে এক বিষ্ময়কর অনুভুতি সৃষ্টি হয়! সেই বিষ্ময়কর অনুভূতিটাই বদলে দেয় একজন নারী পুরুষের জীবনযাত্রা।
যে দিন পৃথিবীতে নবজাতকের শুভাগমন ঘটে তখন কেমন যেন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নতুন অতিথির আগমনের পরোক্ষণেই মাথায় হাজার চিন্তা তখন মাথায় ঘুরপাক খায়। বিশেষ করে পুরুষদের বেশি ভাবায়। বাবার মনে একটি চিন্তাই বেশি ভাবিয়ে তোলে- আমার কলিজার টুকরোটার পরম যত্ম নিতে কোন প্রকার ত্রুটি হচ্ছে নাতো। সেই সাথে ওর মায়ের প্রতিও বিশেষ যত্নের কথা ভাবতে হয়! তবে তা একটি কথা হলো সন্তান জন্মের পর মায়ের থেকে বাবার ভূমিকাটাও কোন অংশে কম নয়। সন্তান জন্মের পর প্রায় বেশকিছু মাস পর্যন্ত প্রতি রাতে মায়ের সাথে বাবাদেরও কত রাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয় তার কোনো হিসেব নেই। শত কষ্ট হলেও বিশ্বাস করুন তাতে একটুও ক্লান্তি বোধ করেননা বরং এক মুহুর্তের জন্যও বিরক্ত হন না বাবা-মা। কিসের যেন একটা মোহে বাহিরের সব কাজ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা সেরে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় যাওয়ার তাগিদ অনুভব করে প্রতিটি বাবা। এভাবেই দেখতে দেখতে আদরের সন্তানটি বড়ো হয়ে যায়।
যখন সন্তানটি শিশু থেকে আরেক ধাপ উপরে উঠতে শুরু করে তখনি শুরু হয় বাবা-মায়ের দুঃশ্চিন্তার অধ্যায়। বর্তমান যুগের শিশু-কিশোররা চায় অবাধ স্বাধীনতা। একালের সন্তানদের আবদারটা একটু মাত্রাই থাকে। যা কিনা আশি-নব্বই দশকে ছিলনা বললেই চলে। বর্তমানের সন্তানরা অনেকটা উচ্চাভিলাসী মনোভাব পোষণ করে থাকে। তারা ভেবেও দেখেনা তার বাবার আর্থিক অবস্থা কেমন বা তার পরিবারটি কোন ধরনের পরিবার।
বর্তমানে অনেক পরিবারেই দেখা যায় সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে বাবা-মা সন্তানদের অধিক শাসন করে থাকেন। তারা ভাবেন শাসনের মাধ্যমেই একজন সুশিক্ষিত ও সুসন্তান গড়ে তোলা সম্ভব। বাস্তবত এ ধরনের অতিরিক্ত শাসনে মোটেও লাভজনক কোনো ফল বয়ে আনে না বরং হিতে বিপরীত হতে দেখা যায়।
তাই বর্তমান যুগে সন্তানদের লালনপালনের ক্ষেত্রে শুধু খাওয়ানো, ভালো পোশাক পরানো বা শাসনেই যথেষ্ট নয়। তাদের সাথে সময় কাটাতে হবে। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তার ভাবনা জানুন এবং যৌক্তিক আলোচনা করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং সঠিক-ভুল বাছাই করার ক্ষমতা তৈরি হবে।
শুধু শাসন বা শুধু ভালোবাসা নয়, দুটোই হতে হবে সঠিক মাত্রায়। ভুল করলে শাস্তি নয়, বরং বুঝিয়ে বলুন কেন ভুলটা ভুল। আবার ভালো কিছু করলে উৎসাহ দিন, প্রশংসা করুন। এতে শিশু বুঝবে কোন আচরণ সমাজের গ্রহণযোগ্য।
সন্তান মানুষ বলেই ভুল করবে, ব্যর্থতাও আসবে। সেসময় তাকে বকাঝকা না দিয়ে বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ান, তাকে বোঝান, ভুল থেকে শেখার সুযোগ দিন। এতে সন্তান ভরসা করতে শিখবে, জীবনে বারবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
সন্তান মানুষ করাটা কোনো একদিনের কাজ নয়। এটি ধৈর্য, বোঝাপড়া এবং ধারাবাহিকতার একটি দীর্ঘ পথ। একজন প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা, সময়, সদিচ্ছা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। সন্তান আপনার আয়না, আপনি যেমন হবেন, ভবিষ্যতে সেও অনেকটা তেমনই হবে। তাই আগে নিজেকে মানুষ করে তুলুন, তবেই আপনি আপনার সন্তানকে মানুষ বানাতে পারবেন।
আসিফ