
ছবি: সংগৃহীত
অতীতে কাগজপত্র লাগানোর জন্য আজকের মতো আইকা গাম বা সুপার গ্লুর মতো কোনো আঠা ছিল না। সেকালে আঠা সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন গাছ বা গাছের ফল থেকে। এগুলোর মধ্যে সুলভ ছিল জিওলগাছের আঠা বা গদ। এ গাছকে কিতাবি ভাষায় বলে জিকা বা জিগাগাছ।
কাণ্ডে ক্ষত করে দিলে সেখান থেকে ঘন জেলির মতো আঠা জমা হতো। ছোটবেলায় এ গাছগুলোকে পাহাড় কিংবা বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়ে প্রায় সবজায়গায় দেখা যেতো, যার নরম পাকা ফল টিপলে খোসা ফেটে বেরিয়ে আসত গাম টিউবের মতো তরল আঠা।
দুই আঙুলে মাখলে চটচটে আঠায় আটকে ধরত আঙুল। এসব আঠা দিয়েই আমরা ছোটবেলায় রঙিন কাগজ বা পুরনো খবরের কাগজ কেটে ঘুড়ি বানাতাম, ঘরের বেড়ায় ছবি কেটে লাগাতাম, বই ছিঁড়ে গেলে জোড়া দিতাম। এসব এখন অতীত এখন শুথুই স্মৃতি। এসব আঠা-উৎপাদী গাছপালা যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ গিয়েছিলাম একদিন ঝিনাইগাতীর বিশাল পাহাড়ের ইন্ডিয়া বর্ডারে। সেখানে ইন্ডিয়া থেকে বয়ে আসা একটি ঝোড়ার ধারে একটি ছোট্ট হিজল-তমালবীথি আছে। সেসব গাছের নীল ছায়ায় বসে থাকলে হিজল-তমালের অনেক সাহিত্য মনে আসে। এ গাছটি বর্তমানে বাংলায় বাস্তবের চেয়ে বেশি বেঁচে আছে বাংলা কবিতায়। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে সেই হিজল-তমালবীথির পাশে একটা গাছের নিচে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছি, সামনের উচু পাহাড় থেকে ঠান্ডা বাতাস এসে চোখে-মুখে ঝাপটা দিচ্ছে। কিন্তু সে বাতাসের পরশের চেয়ে বেশি শান্তি পেলাম সে ঝোড়ার পারে থাকা বিলুপ্তপ্রায় একটা গাছ দেখে।
ছোটবেলায় দেখা সেই গাছ! প্রায় ২০ বছর পর আবার দেখা পেলাম! অবশ্য এর মধ্যে ২০২২ সালে পাকা ফলে ভরা এর একটি গাছের দেখা পেয়েছিলাম রাঙ্গামাটির পাহাড়ে। একেবারে সীমান্তে তাই ভয়ে ভয়ে গাছটিকে দেখে আর বসে থাকতে পারলাম না। উঠে কাছে গিয়ে দেখলাম, ছোট হলেও গাছ ভরে সবুজ কাঁচা ফল ধরে আছে। ছোটবেলায় এ গাছকে আমরা বলতাম বলাগাছ, পাকা ফলের রসকে বলতাম বলার আঠা। শেরপুর-ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকায় এ নামটাই প্রচলিত ছিল।
আরএম সেলিম শাহী/রাকিব