ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

শিল্প-সাহিত্যে নন্দনতত্ত্ব 

আবু আফজাল সালেহ 

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৪ জানুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ২২:২৭, ৪ জানুয়ারি ২০২৪

শিল্প-সাহিত্যে নন্দনতত্ত্ব 

নন্দনতত্ত্ব মানুষের সংবেদনশীলতা ও আবেগের মূল্য

নন্দনতত্ত্ব দর্শনের একটি শাখা যেখানে সৌন্দর্য, শিল্প, স্বাদ এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি ও উপভোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈজ্ঞানিকভাবে বললে নন্দনতত্ত্ব মানুষের সংবেদনশীলতা ও আবেগের মূল্য এবং অনুভূতি ও স্বাদের বিচার নিয়ে আলোচনা করে। নন্দন শব্দের অর্থ হতে পারে¯যা থেকে আনন্দ পাওয়া যায় বা যার দ্বারা আনন্দ দেওয়া যায়। আমরা জানি, পৃথিবীর সব কিছুই সুন্দর বা নান্দনিক নয়, সবকিছুর অনুভূতিও নান্দনিক হয় না বা শিল্পিতও হয় না। সুন্দর অনুভূতি বা প্রকাশভঙ্গির নামই ‘নন্দনতত্ত্ব’।  
আসলে নান্দনিকতার মূল সুর হচ্ছে ‘সৌন্দর্য’। নান্দনিকতা দর্শন-নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং একটি বিমূর্ত সত্তা। রুচি, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, বিচার, মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সঙ্গে নান্দনিকতার রূপ নির্ভর করে। কবিতায় নান্দনিকতার সমষ্টিবোধ ক্রমশ ব্যক্তিবোধে রূপান্তরিত হয়। নান্দনিকতা কিন্তু খুব পুরাতন এক ধারণা, তবে পাঠক ও লেখক সমাজে (সাহিত্য-শিল্পের ক্ষেত্রে) এর পঠন ও আলোচনা কম। নান্দনিক সর্বজনীন আছে কিনা তা নিয়েও একটি সমস্যা রয়েছে।

তারপরেও কিছু সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনেকেই নান্দনিকতার চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য আঁকতে চেষ্টা করেছেন। ডেনিস ডাটন (Denis Dutton) সাতটি সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন; যা এখানে উল্লেখ করা হলো :  দক্ষতা (Expertise), গুণিতা (virtuosity), অ-উপযোগী আনন্দ (Non-utilitarian pleasure), শৈলী (Style), সমালোচনা (Criticism), বিশেষ ফোকাস (Special focus), কল্পনা (Imagination)।  নান্দনিক আন্দোলনের বা নন্দনতত্ত্ব নিয়ে কিছু কি-ওয়ার্ড বাছাই করতে পারি। 
১. নন্দনতত্ত্বের প্রধান ধারণা হচ্ছে সৌন্দর্য। এটি এই ভিত্তির উপর ভিত্তি করে যে সৌন্দর্যের সাধনা এবং স্বাদের উচ্চতা ছিল শিল্পের প্রধান লক্ষ্য। 
২. প্রাচীনকাল থেকে নন্দনতত্ত্ব ধারণা চলে আসছে। তবে মূলত এটি একটি ভিক্টোরিয়ান বিরোধী আন্দোলন যা ১৯-শতকে সংঘটিত হয়েছিল।
৩.  প্রতীকের ভারী ব্যবহার, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা, বক্তব্যের পরিবর্তে পরামর্শ এবং সিনেসথেসিয়া প্রভাবগুলো নান্দনিকতার কিছু বৈশিষ্ট্য।
শিল্পসাহিত্যের নন্দনতাত্ত্বিক বিচার-বিবেচনার ধারাটি প্রাচীন। শিল্পসাহিত্য সৃষ্টির পেছনে দুটো শক্তি সক্রিয়। প্রথমত, শ্রম (তা মূলত মানসিক, কিছুটা দৈহিক), পরিবেশ এবং নিসর্গ প্রভাব। ‘নিসর্গ’ কখনো হয়ে ওঠে সৃষ্টির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রেরণা। নান্দনিকতার ধারণাটি আমাদের কাছে প্রাচীন গ্রিস থেকে এসেছিল। প্রাচীন দার্শনিকরা মানব ক্রিয়াকলাপের বিভিন্ন বিভাগ এবং সংজ্ঞা স¤পর্কে চিন্তাভাবনা করেছিলেন। তারা সুন্দর এবং কদর্য স¤পর্কে প্রতিচ্ছবিগুলোর পাশাপাশি ‘ইন্দ্রিয় দ্বারা’ এই ঘটনার উপলব্ধি স¤পর্কে এই নাম দিয়েছেন।

যুগে যুগে নান্দনিকতা ও সৌন্দর্সের ধারণা বা বহিঃপ্রকাশে ভিন্নতা দেখা যায়। প্রাচীন শিল্প প্রাচীন মিসর, মেসোপটেমিয়া, প্রাচীন গ্রিস, প্রাচীন রোম, সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা এবং চীনের সভ্যতার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল প্রাচীন নন্দনতত্ত্ব। গ্রিকরা মানবদেহকে সুন্দর হিসেবে দেখেছিল। তারা নগ্ন, পেশীবহুল শরীরকে ভদ্রতা, সৌন্দর্য এবং সঠিক অনুপাতের সাথে প্রকাশ করেছিল। পশ্চিমা মধ্যযুগীয় শিল্প মূলত রোমান ক্যাথলিক ছিল। এটি ছিল ধর্মীয় প্রকৃতির। এর উদ্দেশ্যও ছিল মানুষকে ধর্মের বিষয়বস্তু শেখানো।

১৭-শতকের শেষ থেকে ২০-শতকের গোড়ার দিকে, পশ্চিমা নন্দনতত্ত্ব একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়েছিল। যেমন বামগার্টেনের মতে, নন্দনতত্ত্ব হলো ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যার একটি ছোট বোন। তাঁর জন্য সৌন্দর্য ছিল এক নিখুঁত ধরনের জ্ঞান। আবার হেগেল বলেছিলেন যে, সমস্ত সংস্কৃতি শিল্পের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয় যা সৌন্দর্যের বস্তুনিষ্ঠ প্রকাশ। শোপেনহাওয়ার নন্দনতত্ত্বকে ‘বিশুদ্ধ বুদ্ধির বিষয়’ বলে অভিহিত করেছেন। উত্তর-আধুনিক যুগে অভিব্যক্তি শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। মার্শাল ম্যাকলুহান পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, শিল্প সর্বদা একটি প্রতি-পরিবেশ হিসাবে কাজ করে।

অ্যাডর্নো অনুভব করেছিলেন যে, শিল্পকে সংস্কৃতি শিল্পের মুখোমুখি হতে হবে। ভারতীয় নন্দনতত্ত্বে নাট্যশাস্ত্রকে ‘ষষ্ঠ বেদ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্যালিগ্রাফি ইসলামিক শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। চিত্রকল্পও ইসলামী শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। চীনা শিল্প দাওবাদ, কনফুসিয়ানিজম এবং বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কনফুসিয়াস শিল্প ও মানবিকতার ভূমিকার উপর জোর দিয়েছেন। আফ্রিকান নান্দনিকতায় বা সৌন্দর্যের তিনটি চূড়ান্ত মোড রয়েছে: (১) কামুক সৌন্দর্য (Sensuous beauty); (২) রূপের সৌন্দর্য (beauty of form); (৩) অর্থ বা প্রকাশের সৌন্দর্য (beauty of meaning or expression)। জানা মতে, বাংলা ভাষায় ‘নন্দনতত্ত্ব’ শব্দটির প্রথম ব্যবহার করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

তিনি ইংরেজি শব্দ ‘এসথেটিক্স’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ‘নন্দনতত্ত্ব’ শব্দটিকে গ্রহণ করেছিলেন। এসব ছাপিয়ে বলা যায় যে, নান্দনিকতা ১৮ এবং ১৯ শতকের একটি সাহিত্যিক এবং শৈল্পিক আন্দোলন, যা সৌন্দর্যের গুরুত্বের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। সৌন্দর্য ছিল এসব কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। শিল্পীদের জন্য, সৌন্দর্যের নিজস্ব মূল্য ছিল যা অনুসরণ করা মূল্যবান। ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ স্লোগান নান্দনিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। 
নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics) এমন একটি বৈজ্ঞানিক দর্শন, যেটির মূল্য (Values) নিয়ে আলোচনা করা। কোনো তথ্য বা ঘটনার মূল্য নির্ধারণ করাই নন্দনতত্ত্বের কাজ। মূল্য বলতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির নৈতিক-অনৈতিক দিকের মূল্যায়ন হলো এই মূল্যের অর্থ। নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে সাহিত্যের পার¯পরিক নিবিড় স¤পর্ক রয়েছে। নন্দনতত্ত্ব এক সুগভীর চেতনা। এ চেতনা শিল্পের জগৎজুড়ে ব্যাপ্তি। অনন্য উপলব্ধি যার অন্তরাত্মা। ভাবের পরিপূর্ণতা এবং প্রকাশের তীব্র আকুতি নন্দনতত্ত্ব নির্ভরশীল।

সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে পরীক্ষা বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়। তাই বলা চলে, বৃহত্তর এক উপলব্ধির নাম নন্দনতত্ত্ব।  নন্দনশাস্ত্রের জনক বমগার্টেন তাঁর Aesthetica (১৭৫০) গ্রন্থে নন্দনতত্ত্বকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞানরূপে প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন। কবিতাকে তিনি perfect sensate discourse হিসাবে দেখতে চেয়েছেন। অতীন্দ্রিয় সৌন্দর্য (transcendental beauty) হচ্ছে শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। নান্দনিকতা সর্বজনীন হয়ে বিশ্ববোধে রূপান্তরিত হয়। নন্দনতত্তের মাহাত্ম্য এখানেই।  
আগেই বলেছি যে, সৌন্দর্যদর্শন বা নন্দনতত্ত্বের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সৌন্দর্য। কিন্তু সৌন্দর্য বিষয়টি স¤পূর্ণ আপেক্ষিক, যা স্থান-কাল-পাত্রভেদে পরিবর্তিত হয়। একজনের কাছে যা সুন্দর, অন্যজনের কাছে তা সুন্দর না-ও হতে পারে। সৌন্দর্য অনির্দিষ্ট, যেহেতু বিভিন্ন দার্শনিক এবং শিল্পের প-িতগণ একই সংজ্ঞায় উপসংহারে আসতে পারেননি। এর মধ্যে প্লেটো, সক্রেটিস এবং নিটশে উল্লেখযোগ্য। প্রত্যেকেই সমাজকে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছে।

কনফুসিয়াসের ভাষায়: Everything has beauty, but not everyone sees it. সৌন্দর্য কী, তা বর্ননা দিয়ে অপরকে বোঝানো যায় না, এটি অসংজ্ঞায়িত। সৌন্দর্য উপলব্ধির বিষয়, তাই এটি বুঝে নিতে হয়। 
নান্দনিকতা বা সৌন্দর্যের উদাহরণ দিতে হলে কীটসের (বিশেষত উল্লিখিত প্রথম লাইন) কবিতার লাইন তুলে ধরি : 
A thing of beauty is a joy for ever:
Its loveliness increases; it will never
Pass into nothingness; (Keats)
আর একটি উদাহরণ দিতে পারি। প্রেমের কবি, নান্দনিকতার কবি নেরুদার সনেট থেকে একটি কবিতাংশ-
I do not love you except because I love you;
I go from loving to not loving you,
From waiting to not waiting for you
My heart moves from cold to fire. (I Do Not Love You Except Because I Love You, Pablo Neruda)
বিশ্বকবি বলেছেন, আমরা যেরূপে উপলব্ধি করি, জগৎ সেরূপেই ধরা দেয়। সহজভাবে মানব মস্তিষ্ক চোখে আলোর প্রতিফলনে বস্তুকে যে রঙে দেখায়, আমরা সেই রঙই দেখি। তাই বর্ণান্ধ ব্যক্তির পুরো জগৎটাই সাদাকালো। মানবিক চেতনাকে প্রাধান্য দেওয়া বিশ্বকবির বিখ্যাত পঙ্ক্তি স্মরণযোগ্য : 
‘আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ
চুনি উঠল রাঙা হয়ে। 
আমি চোখ মেললুম আকাশে 
জ্বলে উঠলো আলো
পুবে-পশ্চিমে 
গোলাপের দিকে তাকিয়ে বললুম, সুন্দর
সুন্দর হল সে। 
... বিধাতা কি আবার বসবেন সাধনা করতে
 যুগ যুগান্তর ধ’রে।
 প্রলয়সন্ধ্যায় জপ করবেন-
 ‘কথা কও, কথা কও’,
 বলবেন ‘বলো, তুমি সুন্দর’,
 বলবেন ‘বলো, আমি ভালোবাসি?’ (আমি)

শিল্পী, সমালোচক এবং চিন্তাবিদরা শিল্পকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নান্দনিক মূল্যের বিচার অর্থনৈতিক, নৈতিক বা রাজনৈতিক মূল্যের সাথে যুক্ত হতে পারে। এইভাবে নান্দনিক বিচার ইন্দ্রিয়, আবেগ, বুদ্ধিবৃত্তিক মতামত, ইচ্ছা, সংস্কৃতি, পছন্দ, মূল্যবোধ, অবচেতন আচরণ, প্রশিক্ষণ, প্রবৃত্তি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে। নন্দনতত্ত্বে প্লেটো, অ্যারিস্টটল, অ্যাকুইনাস, হিউম, কান্ট, হেগেল, ক্রোচ এবং কয়েক ডজন সমসাময়িক দার্শনিকরা সকলেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দান্তে গ্যাব্রিয়েল রোসেটি এবং জন মিলাইসের মতো শিল্পী ও লেখকরা নান্দনিকতাকে বিকশিত করতে চেয়েছেন।

পরবর্তীতে  শেলি, বায়রন এবং কিটস নন্দনতত্ত্ব নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন, কবিতায় বাস্তবায়ন করেছেন। তবে অস্কার ওয়াইল্ডের একমাত্র উপন্যাস The Picture of Dorian Gray-এর ছবি নান্দনিকতার সবচেয়ে পরিচিত সাহিত্য উদাহরণ। দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট অবদান রেখেছেন। নান্দনিকতার তত্ত্বে তিনি বিষয়বস্তুর চেয়ে ফর্মের দিকে বেশি মনোযোগ দিতেন। তাঁর সৌন্দর্য তত্ত্বের চারটি দিক ছিল: ধারণা থেকে স্বাধীনতা, বস্তুনিষ্ঠতা, দর্শকের অনাগ্রহ; এবং  এর বাধ্যবাধকতা। সৌন্দর্যের বিচার একই সময়ে সংবেদনশীল, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক।
অ্যাডর্নো বলেছিলেন যে, শিল্পে স্বতঃসিদ্ধ কিছু নেই। শিল্পকে সৃজনশীল শিল্প বা চারুকলার সংক্ষিপ্ত রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। লিও টলস্টয় বলেছিলেন, যে কোন জিনিসকে শিল্প করে বা না করে তা  হলো শ্রোতারা কী ভাবে অনুভব করে এবং লেখকের উদ্দেশ্য দ্বারা নয় (what makes something art or not is how it is experienced by the audience and not by the intention of its author)।

নন্দনতত্ত্ব নান্দনিক অভিজ্ঞতা এবং বিচারের প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উৎস উভয়ই নিয়েই। আমরা বলতে পারি যিু বি ষরশব, যিধঃ বি ষরশব. আমাদের রুচির ক্ষেত্রে এটা প্রথম বিষয়। কাব্যের ক্ষেত্রেও তাই। সাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব বা নান্দনিকতার ক্ষেত্রে এটাই মূলমন্ত্র। এ ধারণা অনেকের পছন্দে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তবে মোটামুটি সর্বজনীন একটি বিশ্বস্ততা থাকতে হবে; দর্শন থাকতে হবে। কবিতার বিচারের ক্ষেত্রে নান্দনিকতায় ‘স্বতন্ত্র স্বাদ’ গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। ব্যক্তিভেদ থাকতে পারের।

তবে কিছু বিষয় ধারাবাহিকভাবে একটি কবিতা কতটা উপভোগ্য হতে পারে এবং পাঠকের কাছে সেটি প্রভাবিত করে থাকে। এ উপভোগ্যের অনুপাত যত বেশি হবে, কবিতায় নান্দনিকতার অংশ ততই বেশি বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। একটি কবিতার প্রাণবন্ততা ধারাবাহিকভাবে এর নান্দনিক আবেদনের পূর্বাভাস দেয়। বলা যায়, কবিতায় নান্দনিকতার ক্ষেত্র মানসিক চিত্রের প্রাণবন্ততা একটি মূল উপাদান, যা পছন্দের গভীরতায় প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
কবিতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে a promising beginning Ges an excellent ending  অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলতে পারি। the production of beauty (Noel Carroll, Beyond Aesthetics, NY, 2991, p 42) নান্দনিক সমালোচনার অন্যতম ধারণা। সাহিত্যের পাঠক সৌন্দর্যের ওপর আগ্রহী। নন্দনতাত্ত্বিক সমালোচনা সহাবস্থানে থেকে সাহিত্য সমালোচনার পরিপূর্ণতা দিতে পারে। Aesthetic Value পেতে হলে অবশ্যই সে কাব্যকে পাঠকের নিকট আনন্দদায়ী হতে হবে।

সে হিসাবে Aesthetic Value-কে আমরা artistic value বলতে পারি। নন্দনতত্ত্ব স¤পর্কে অতি সংক্ষেপে উপসংহারে বলতে পারি যে, এ শিল্প একটি ফর্ম এবং সৌন্দর্য:  শিল্পের স্বায়ত্তশাসন; একটি উদ্দেশ্যমূলক কার্যকলাপ; শিল্পীকেন্দ্রিক দর্শন; দর্শককেন্দ্রিক দর্শন;  সামাজিক বস্তু প্রধান; এবং এটি আবেগের অভিব্যক্তি।

×