ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ২২:২৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা

-

মাশুল

রেজাউদ্দিন স্টালিন

রক্তাক্ত হওয়ার এখনো অনেক বাকি
দিনের আলোতেও পথ হাতড়ে চলা
লক্ষ নিযুত ভুলের দেয়ালে মাথা কুটে
স্বপ্ন বিসর্জন 
প্রকৃত পথ আরো দীর্ঘ দূর
হোঁচট খেতে খেতে পার হওয়া লক্ষ যোজন
 
মানুষ বিচ্ছিন্ন হোক- একাকী থাকুক
সে ফিরবে সমগ্রতায়
একাত্ম হতে হতে আবার ভেঙে পড়বে 
অনেক দূর এগিয়ে বদলে নেবে পথ
মৃত্যুর সালামি দিয়ে বোধি প্রাপ্তি

সামান্য শিখতে দক্ষিণা আশ্চর্য আঙুল
সারাজীবন কাটবে নতুন জীবনের খোঁজে ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে
মৃত্যুর মুহূর্তে মনে হবে এপথে নয়
অন্য কোনো পথে


** যোদ্ধার উচ্চারণ

শেখ সালাহ্উদ্দীন 

যদি মৃত্যু হয় রণক্ষেত্রে, লাশটা কফিনবন্দি করে 
পৌঁছে দিও তোমরা আমার ঘরে 
পদকগুলি আমার বুকের ওপর রেখে দিও
সেরাটা দিয়েছিলাম- জননীকে এ কথা জানিও

বলে দিও- পিতা যেন শির নত না করেন তার
আমি তাঁকে জ্বালাতন করব না আর   

অনুজাকে বলো- যেন বিমর্ষ না থাকে 
এই সূর্যাস্তের পর কখনো সে 
জাগতে দেখবে না আমাকে

অনুজকে বলে দিও ভালোভাবে যেন 
পড়ালেখা করে, আর-
আজ থেকে আজীবন বাইকের চাবিটাও তার

স্বদেশবাসীকে বলো না করতে অশ্রু বিসর্জন
কারণ আমি যে যোদ্ধা- জন্মেছি করতে
মৃত্যুকেই আলিঙ্গন।  

(এক অজ্ঞাত ইংরেজ কবির ‘ঐবধৎঃ ঃড়ঁপযরহম ঢ়ড়বস নু ধ ংড়ষফরবৎ’ কবিতার ভাবানুবাদ) 


** আমার চাঁদ দেখা

(রাশিদা আসমার জন্যে)
আনিসুর রহমান

সময়গুলো মনে কি পড়ে, গোপন করিডরে?
মনের স্বর্ণসিন্দুক ভরে, কথাগুলো বলি কাহারে?

’চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যায়’,  এ চাঁদ কে ফিরে পায়? 
এ চাঁদের নাম দেব কি, এ চাঁদ আলো করে কোন্ ঘরে? 
আঁধারকে নিষিদ্ধ করে, সময়ের নতুন নিয়ম চালু করে
অন্ধকার ঠেলে তারে আর, রাতের আলোর বাগান করে!

মন্ত্রী চাঁদদেখা কমিটি করে, আকাশে চাঁদের খোঁজ করে,
মন্ত্রীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি, এ কোন্ চাঁদ দেখে গেলাম
এ কোন্ আদমি অভাজন, চাঁদের বুকে মাথা ঠুকালাম।

** যুদ্ধ শেষ হয়নি

সালাউদ্দিন বাদল

যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি
ওরা ভেবেছে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে
আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি,
ওরা ভেবেছে
সবুজের বুকে লাল সূর্যের আলো দেখেই
আমরা তৃপ্ত।
ছদ্মবেশের পোশাক খুলে
শত্রুরা আবার এক হয়েছে
স্বদেশজুড়ে ওদের বিষাক্ত ছোবল
কেড়ে নিচ্ছে কত তাজা প্রাণ
গোয়েবলীয় মিথ্যাচারে কলঙ্কিত করছে
ইতিহাসকে ওরা,
ওরা চাচ্ছে ষড়যন্ত্রের জালে
বাংলাদেশের মানচিত্র ঢেকে দিতে।

আমরা মনু মিয়া ও নূর হোসেনের স্বজন
আমরা মরতেও জানি, মারতেও জানি,
জানি না শুধু মাথানত করতে
দেশের শত্রুর সঙ্গে কোনো আপোস করতে।

শোনো চিহ্নিত শত্রুরা-
রাজাকার, স্বৈরাচার, স্বাধীনতার পরাজিত গোষ্ঠী
যুদ্ধ শেষে হাতের রাইফেল, স্টেনগান, গ্রেনেড,
এলএমজি সব জমা দিয়েছি, কিন্তু
একটি বড় অস্ত্র জমা দিইনি
তা হলো আমাদের দেশপ্রেম।

হে চিহ্নিত শত্রুরা শোনো
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত
আমরা আবার জেগেছি,
৫৬ হাজার বর্গ মাইলে আমরা ছড়িয়ে আছি,
কোনো ষড়যন্ত্রের দেওয়াল আমাদের রুখতে পারবে না
তোমাদের বিষদাঁত ভাঙাবোই
এই যুদ্ধে আমরা জিতবোই।