ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাজাতিক অন্বেষা

আতাতুর্ক কামাল পাশা 

প্রকাশিত: ০১:২৪, ১৭ মার্চ ২০২৩

স্বাজাতিক অন্বেষা

ড. আজিজুল আম্বিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে

ড. আজিজুল আম্বিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে। প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকা সংস্করণেও লিখছেন প্রবাসীদের নিয়ে, কবিতা ও অন্যান্য রচনাও। এবারের বইমেলায় এসেছে তার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্বেষণ। মূলত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত কলামগুলো নিয়ে এ বইটি। হর হামেশাই জাতীয় দৈনিকগুলো দেশের বিভিন্ন সমস্যা, বিভিন্ন জরুরি বিষয় নিয়ে অনেক লেখকের কলাম প্রকাশ করে থাকে। এগুলোই তার একটি সংগহ।

কলামগুলো দৈনিক একুশে সংবাদ ডটকম, দৈনিক যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, যায় যায় দিন, দৈনিক মানববণ্ঠ, দৈনিক রেড টাইমস্, ঢাকা টাইমস্, দৈনিক বাংলাদেশ সময়, দৈনিক আজকের সিলেট ডটকম, প্রথম আলো, দৈনিক ভোরের দর্পণ, ঢাকা প্রতিদিন-এ প্রকাশিত। লেখক যুক্তরাজ্য প্রবাসী হলেও দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তার মন পুড়ে। দেশের মানুষের দুর্দশা, অসুবিধা, নিত্যদিনের সমস্যা তাকে বিচলিত করে, প্রবাসে বড় আশা নিয়ে আসা মানুষরা প্রায়শই হোঁচট খেয়ে পড়েন, এসব নিয়ে তিনি লেখেন, সুচিন্তিত যুক্তিতে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।

অসুবিধা ও সমস্যাগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং তা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বাস্তবতার নিরিখে সমাধানে সম্ভাব্য পন্থা তুলে দেন। এ বৈশিষ্ট্যের লেখা নিঃসন্দেহে পাঠকদের আগ্রহ জন্ম দেয়। 
আমরা প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়ি, পরদিন তা স্তূপ করে সেদিনেরটা পড়া শুরু করি। কলামের বা উপ-সম্পাদকীয়-এর বেলাতেও তাই হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু সমস্যা রয়ে যায় যেগুলো সমাধান হতে হতেও শেষ হয় না। একদিকে সমাধান হতে শুরু করলে আবারও অন্যদিকে সমস্যার সৃষ্টি হয়। মূলত: এ ধরনের কলামগুলোকেই ড. আজিজুল আম্বিয়া এ বইয়ে সাজিয়েছেন। তেইশটি কলাম রয়েছে। 
তিনি যে কলামগুলো লিখেছেন তার মধ্যে একটি ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জন্ম এবং ভাগ্য বিপর্যয়ের ইতিহাস।’ লিখেছেন, ‘মোট জনসংখ্যার এক দশমাংশ ছিল ইয়াহুদি, যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে তা ৩৫ হাজারে উন্নীত হয়, ১৯৩১ সালে তা ৮১ হাজারে উন্নীত হয়, যা ১৯৪১ সালে ২ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হয়।’ (পৃ-৭৯)। এভাবে বেশ কিছু তথ্য দিতে পেরেছেন ইতিহাস থেকে। 
বইটি শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা’ লেখাটি দিয়ে। স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু তা সফল করতে মূলত একটি ফব ভধপঃড় সরকারের প্রয়োজন ছিল সারা বিশে^র সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ড়িৎষফ ৎবপড়মহরঃরড়হ-এর প্রয়োজনে। এই সত্যটি চিরদিন মনে রাখতে হবে আমাদের। সে ইতিহাসটিই লেখক তুলে ধরেছেন। বর্তমান বাংলাদেশে যে বিশাল এবং বহুমুখী অবকাঠামো গড়ে উঠছে, তার চিত্রও লেখক তুলে ধরেছেন।

বিলেত একটি স্বপ্নময় দেশ। কিন্তু এখানেও প্রবাসীরা যে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত, সে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এসব আমাদের কিছু সাবধানবাণী দেয় বৈকি। দেশের স্বাস্থ্য খাত এখনো যে অনেক অনিয়মে পড়ে আছে সেটিও ড. আজিজুল আম্বিয়ার কলমে উঠে এসেছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস লিখেছেন একটি কলামে। পরবর্তীতে এ বিশ^বিদ্যালয়কে ঘিরেই ভাষা আন্দোলন এমনকি স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এমনকি এ বিশ^বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করা হয়, তা-ও উঠে এসেছে এই কলামে।

এই বঙ্গে নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা লীলা নাগকে নিয়েও লিখেছেন লেখক। লেখক তার একটি কলামে লিখেছেন, রাজনীতিতে দেশপ্রেমিক আর মহৎ মানুষেরা পুনর্বাসিত হোক। আমাদের আশা জাগায় এ লেখাতে। লেখক বইটির নামকরণ করেছেন গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্বেষণ। অথচ এ নামে কোনো প্রবন্ধ বা কলাম নেই বইটিতে। অথচ গোটা বইটিতেই গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্বেষণ রয়েছে। আমাদের আজ সেই সাহিত্যের প্রয়োজন যে সাহিত্য আমাদের কিছু দেয়। সমাজকে, দেশকে কিছু দেয়। এ বিচারে ড. আজিজুল আম্বিয়ার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্বেষণ বইটি আমাদের পড়ার প্রয়োজন আছে। মুদ্রণ আর অঙ্গসজ্জা রুচিশীল। চারুপিন্টুর প্রচ্ছদ বেশ সুন্দর। 

×