ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩

অপূর্ব কুমার কুন্ডু

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ৯ মার্চ ২০২৩

চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩

.

১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত দেশব্যাপী শিল্পকলা একাডেমিতে একযোগে উদযাপিত হলোতৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩

প্রতিটি জেলায় প্রদর্শিত হলো মক্তিযুদ্ধ, রিফিউজি, বেকারত্ব, সাহিত্য, জীবন, আশ্রিত হাওয়া, পরাণ, সাঁতার, হাসিনা: অ্যা ডটার টেল, কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া, নোনা জলের কাব্য প্রভৃতির মতো ৩৫টি চলচ্চিত্র। খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোর, ঠাকুরগাঁও, সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ নিয়ে মোট দশটি জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সম্পন্ন করা হল ফিল্ম অ্যাপ্রেসিয়েশন কোর্স। চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বশেষ বাস্তব অবস্থা অনুধাবন এবং আগামীর পথ চলা সাবলীল বেগবান করার জন্যে সারা দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা-শিল্পী কলাকুশলী, প্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটর এবং হল মালিকদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে দুই দিনব্যাপী চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রায়োগিক এবং ব্যবহারিক বিষয়ের উপর সেমিনার আদলে বিষয়ভিত্তিক প্যানেল আলোচনা।

বিষয়ভিত্তিক প্যানেল আলোচনায় মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় নির্ধারিত প্রথম পর্বের আলোচনার বিষয়, ‘চলচ্চিত্র শিক্ষা : বাজার বাস্তবতা একাডেমিক প্রেক্ষিত।

চলচ্চিত্র নির্মাতা শিক্ষক জাহিদুর রহিম অঞ্জন যা যা বললেন তার সারাংশ করলে দাঁড়ায়, ফিনিক্স পাখির মতো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চলচ্চিত্র বিভাগের উত্থান প্রশংসনীয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে কোনো একটি বিভাগ পাবার মতো ফিল্ম স্টাডিজে পড়তে আসাটা বেদনার। তার কাছে যোগ্য স্টুডেন্টই কাম্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু ব্যবসায়িক দিকটা তুলনামূলক মুখ্য সেহেতু সৃজনশীল অনুশীলন যতটা হওয়া উচিত ততটা না হওয়াই বাস্তবতায় রূঢ়।

ফিল্মে একাডেমিক শিক্ষা চালু সত্ত্বেও আশানুরূপ যোগ্য ফিল্মমেকার না পাবার ক্ষেত্রে গুরুমুখী চর্চা না থাকাটাও একটা বড় বিষয় বলেই তার কাছে বিবেচ্য। বিভাগীয় পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন নীতি নির্ধারকদের চলচ্চিত্রবান্ধব মানসিকতা প্রদর্শন করাটাও তার কাছে বিবেচ্য। বিবেচনার দিক দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম বিভাগের শিক্ষক জুনায়েদ আহমেদ হালিম বললেন, শুধুমাত্র ফিল্ম বিষয় নয় বরং শিল্পের সকল শাখা সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের একটা সচেতন জ্ঞান থাকা দরকার। একটা সময় ফিল্ম নিয়ে অনেকেই পড়াশোনার কথা ভাবতে পারত না। তবে এখন ভাবে। আমরা স্নাতক স্নাতোকোত্তর স্তরে ত্রিশের মতো ছাত্র-ছাত্রী পাই। অনেকে পড়ে আবার কেউ কেউ ঝড়ে যায়। ধরে রাখা বিকাশের স্বার্থে নীতি নির্ধারক-নিয়ন্ত্রকদের আরেকটু সমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। মননশীল এবং কারিগরি দুটো চর্চাই অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। প্রয়োজনের প্রশ্নে সত্যজিৎ রায় ইনস্টিটিউট থেকে পড়ে আসা এডিটর চৈতালী সমাদ্দারের বিশ্বাস, অনেকেই অনুৎসাহিত করতে পারে, পেশাগত প্রলোভনে করণীয় পথ থেকে সরে যাওয়া হতে পারে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থামিয়ে দিতে পারে। তথাপি হোক এডিটিং অথবা মেকিং ব্যক্তিকেই চলচ্চিত্রের একটা রিদম সেটা নৃত্য-গীত-অভিনয় আঙ্গিকে নিজের মধ্যে ধারণ এবং নিমগ্ন থেকে ধারাবাহিক বহন করাটাই জরুরি। যা করব ভেবেছি সেটা জেনে বুঝেই করার বলিষ্ঠ মানসিকতা তাকে সফলতার পথে পৌঁছে  দেবেই।

চলচ্চিত্রের সবদর্শক ওটিটি কেড়ে নেবে নাকি ওটিটি চলচ্চিত্রের প্রতিযোগী তা প্রশ্নে টফির মার্কেটিং ডেপুটি ডিরেক্টর মো. আবুল খায়ের চৌধুরীর দৃষ্টিভঙ্গি পজিটিভ এবং যৌক্তিক। বললেন, হলের সময় নির্ধারিত কিন্তু ওটিটি রসময় সীমাহীন। প্রথমে দুই মাস হলে প্রদর্শন হলে পরে হলে যারা যেতে পারেনি তারাও ওটিটিতে দেখে নিচ্ছে। ওটিটিতে দেশ বিদেশের সকল কনটেন্ট দেখা যাচ্ছে। ওটিটির দর্শক নারী, পুরুষ, শিশু রুচি বিবেচনায় পোগ্রাম বানানো হচ্ছে এবং তা তারা দেখছেন। ওটিটির ক্ষেত্রে এবং হলের সিনেমার ক্ষেত্রেও অনুকরণ কমাতে হবে। নির্মাণে যেন আমরা আমাদের পাই। আয়নাবাজি চলচিত্রের নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর

জিজ্ঞাসা, আমরা প্রযোজনাকে পেশা দারিত্বের প্রযোজক প্রতিষ্ঠান রূপে দাঁড় করাতে পারলাম না কেন? গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, আইটি সেকশানের মতো আমরা কেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দাঁড় করাতে পারলাম না?

নিউইয়র্ক থেকে ফিল্মে পড়ালেখা করানোনা জলের কাব্যনির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র ব্যবসা অভিজ্ঞতায় ঠিক কি? উত্তরে প্রযোজক জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের প্রযোজকরা বরাবরই পরিচালকের ভাবনা-চিন্তার ওপর ভর করে চলচ্চিত্রে অর্থ লগ্নি করতেন এবং আজও সেটা করেন। সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের উৎকর্ষতা দরকার। তা সত্ত্বেও আমরা প্রচলিত চলমান ধারায় চলছি। প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, চলচ্চিত্র তার নিজস্ব শক্তিতেই ব্যবসায়িক দিক থেকে গার্মেন্টস কিংবা আইটিসি থেকে এগিয়ে ছিল বরাবর। কিন্তু কিভাবে পুণ্যগোলা শূন্য করা হলো তা তিনি যৌক্তিকভাবে দেখিয়ে দিলেন তথ্য-উপাত্ত-উদাহরণ সহকারে। মূলত চলচ্চিত্রের প্রটেকশ নের বিভিন্ন পদক্ষেপই চলচ্চিত্রকে করল ডাউন অ্যান্ড ডাউন। নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ব্যাখ্যায়, ক্রিয়েটিভ মেকিংই তৈরি করবে বাণিজ্য সমাগম।

 

 

×