ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

-

প্রকাশিত: ০০:৪১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

কবিতা

-

ইস্তফা

ইমামুল ইসলাম মুরাদ

মহানন্দা, আমি আর কবিতা লিখবো না!
ছন্দহীন-অমাধুর্য রসশূন্য অশ্রাব্য ভাষায়;
অসার-অভাবার্থ-অমৌলিকত্ব-অবিন্যস্ত কবিতা -
আমি লিখবো না।
অবোধ অজ্ঞতায় কাব্য-দেব রবিঠাকুরের সুনিপুণ
সুশ্রী সৃষ্টির গাঁয়ে ক্ষত করতে;
ক্ষেপা দুর্বাসার ন্যায় ক্ষিপ্ত যুগান্তকারী কাব্য- মহাধ্যানী
নজরুলের ধ্যান ভঙ্গ করে,
এমন অভিশপ্ত কবিতা আমি লিখবো না!

অথচ তুমি বারবার বলছো কবিতা লিখতে!
কিন্তু, কেন? কি কবিতা? কেমন কবিতা লিখবো?
ঐ মূর্খ কোন্দলবাজ গ্রাম্য মাতব্বরকে নিয়ে?
সুবিদাবাদী পরনিন্দাকারী সুশীলের গুণকীর্তন গাইতে?
আজকের অযোগ্য সমাজপতিকে কুর্ণিশ করতে?
উন্মত্ত কোন পাতিনেতার মিছিলের সেøাগান-শ্লোক?
আদর্শচ্যুত শিক্ষক, অসভ্য নেশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের জন্য?
পিএইচডিধারী কোন গণ্ডমূর্খের গবেষণাকে কেন্দ্র করে?
অকুশল প্রকৌশলীর দক্ষতার প্রশংসা করে?
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ ধর্মান্ধদের সাধুবাদ জ্ঞাপন করে?
ভাষাজ্ঞান শূন্য অজ্ঞ সাহিত্য সম্পাদক আর
অর্থলোভী গ্রন্থ প্রকাশককে ভজনগীত শুনাতে?
মানস-প্রিয়া মিথ্যাময়ী অবিশ্বস্ত প্রেমিকাদের কণ্ঠে
জড়াতে প্রতিটি প্রেম পঙ্ক্তিমালা;
অবশ্য তুমি আমার বিশ্বস্ত প্রেমিকা!
তবুও এসব কবিতা আমি লিখবো না।
মহানন্দা, বিশ্বাস করো!
এতে যদি তোমার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়,
তবুও আমি আর কোনদিন কবিতা লিখবো না!

আজ ভারাক্রান্ত মনে আমি ঘোষণা করছি,
উপস্থিত দেশের বরেণ্য টিভি চ্যানেল ও পত্র পত্রিকার-
গণ্য-মান্য-জঘন্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বগণ।

 


জঘন্য শব্দটি এজন্য বলছি,- কেননা ক’জন
ভুয়া মিডিয়ার অশিক্ষিত সাংবাদিকও এখানে আছেন!

শুনুন, যারা এদেশের মস্তক রন্ধ্র-বিবর করে চুষে খাচ্ছে
ঐ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ী, অসুর পুঁজিবাদী, শিক্ষার  দোকানদার,
চিকিৎসার দালাল, ঘুষখোর আমলাকে অঞ্জলি দিতে;
এমন তৈল ম্রক্ষণ কবিতা আমি লিখবো না।

যে কবিতায় কৃষক-শ্রমিক- মেহনতী মজুরের সর্বোপরি
সর্বসাধারণের কোন প্রকার দাবি কিংবা স্বত্ব-স্বামিত্ব উল্লেখ নাই;
শুধু যশ-খ্যাতি স্বর্ণপদকে ভূষিত হওয়ার স্পৃহায়!
আমি কবিতা লিখবো না;
যদি আমার কবিতা ঐ সব বিচার-বঞ্চিত,
চিকিৎসা-বঞ্চিত, উন্নয়ন-বঞ্চিত অধিকার-বঞ্চিত
মানুষের পাশে বিস্ফোরিত হয়ে প্রতিবাদের তিক্ষ্ম ধ্বনিতে
পৌঁছে না! এসব বস্তা ভরা সস্তা কবিতা, আমি লিখবো না।

‘স্টপ’! সাইলেন্ট  মোডে’ থাকুন!
কেউ উচ্চস্বরে কথা বলবেন না! আজকে শুধু আমি বলবো,-
আপনারা গোবেচারার মতো শ্রবণ করবেন;
ভুলে যাবেন না আমি কবি! যেমন কোমল সুলেল স্নিগ্ধ
 তেমনি আমার লিখিত অলিখিত উচ্চারিত
এক-একটি বাক্য মিসাইলের মতো ধ্বংসাত্মক শক্তিধর অস্ত্র;
প্রতিটি শব্দ বুলেটের স্ফুলিঙ্গ অগ্নিঝরা ধ্বনি,
তাই সাবধান! আমি চাইলেই নিমিষেই উড়িয়ে দিতে পারি সব কিছু!  

আমি ঘোষণা করছি, সবার সম্মুখে এই ভরা মজলিসে
আমি ইস্তফা দিলাম! ইস্তফা দিলাম
আজকের পর থেকে আর কোন কবিতা লিখব না,
এই আমার শেষ-বাক্য, শেষ শব্দ উচ্চারণ
এখন থেকে আমি নীরব, বোবা- প্রেমিক আর বাকস্তব্ধ প্রাণী
কিন্তু, আমার এ নীরবতাই একবিংশ  শতাব্দীর
একটি শ্রেষ্ঠ মৌন-যুদ্ধের ঘোষণা।


** অনিরুদ্ধের প্রিয় বইটি

সোমা মুৎসুদ্দী

অনিরুদ্ধ তার প্রিয় বইটি উড়িয়েছিল মহাশূন্যতায়
বংশ পরম্পরায় নয় বলতে পারো
মৃত্তিকার প্রেম পরম্পরায়
অনেকেই দাবিদার
কেউ পেতে চায়
কেউ ছুঁতে চায়
কেউ সে অভিশপ্ত অথবা উদ্ভাসিত বই পেঁচিয়ে রাখতে চায় আধছেঁড়া লালসবুজের পতাকায়।

একদিন হয়তো বইটি চলে যাবে ইতিহাসের হাতে
কেউ অনুপ্রাণিত হবে হয়তো ক্ষুদিরামের মতো
কেউ বা সূর্য সেন অথবা প্রীতিলতার মতো
অনিরুদ্ধ একার নয়

সে সৃষ্টির শুরু থেকেই সবার
তোমার, আমার, আমাদের।


** ও পথেই আলো নেমে আসে

জহুরুল ইসলাম

সাদা রাতের কালো কাশফুলে ছুঁয়ে দেই হাত,
ও তখন ঘুমন্ত নদীর মতো জেগে থাকে।
কাশবনে বসে থাকি-
কতো ভয় আসে চুপি চুপি বুকের তলায়,
সব ভাসিয়ে দেই জলে।

কাশফুলে রাত নেমে আসে,
তখন কপালে ঠেকাই আঁধার।
আঁধারেই পথ চিনে চলি।

এলাচের ঘ্রাণ শুঁকে পথ ধরে হেঁটে যাই,
ও পথেই আলো নেমে আসে।

×