-
কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই এখন আর আমার
ইচ্ছে করে না। কোনো আগুনকেই আর বলতে ইচ্ছে
করে না; আগামী শীতে তুমি মানুষকে উষ্ণতা দিও।
কিংবা শ্রাবণের বৃষ্টিকে সাক্ষী করে যে প্রেমিকা-
তার প্রেমিকের জন্যে চায় পরিশুদ্ধ পৃথিবী, তাকেও
বলতে ইচ্ছে করে না-
তোমার প্রার্থনা সার্থকতা পাক !
ট্যাক্সাসের উভালদে শহরের এলিমেন্টরি স্কুলে যে শিশুরা
নিহত হয়েছে- যে শিক্ষক তাদের বাঁচাতে গিয়ে দিয়েছেন
প্রাণ; তাদের জন্যেও শোক প্রকাশের কোনো ভাষা জানা
নেই আমার! অথচ আমি জানি- এরা আমার সন্তান!
এই শিক্ষক আমার সহোদরা!
আমি এই সন্তানদের গুলিবিদ্ধ নিহত পিতা!
বিশ্বে আমি আজ সৎকারবিহীন শবদেহ!
আচ্ছা, নিহত মানুষেরা কী প্রার্থনা করতে পারে!
গান গাইতে পারে! বাজাতে পারে বাজনা!
কিংবা বিউগলে তুলতে পারে সুর!
আমি জানি, কতিপয় মানুষের হাতেই নিহত হয়েছে
এই বিশ্ব বহু আগে! আর যারা মৃতের মতো
কাতরাতে কাতরাতে পাহারা দিচ্ছে এই গ্রহম-ল,
কে তাকাবে তাদের দিকে,
কে আরেকবার চিৎকার দিয়ে বলবে-
নমিত পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকাই
শেষ কথা নয় মিস্টার প্রেসিডেন্ট!
** অস্তিত্বহীন অশ^ত্থের শীতলতায়
সুপ্রসাদ গোস্বামী
অস্তিত্বহীন অশ^ত্থের মতো কিংবা নির্ভুল কম্পাস যন্ত্রের মতো
এক জোড়া বৃষণ আগেও ছিল।
অর্থাৎ আমার ও আমার পূর্ব পুরুষের জন্মেরও আগে ছিল
যা আমার কাছে নির্ভুল ও সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মতো কিংবা অমাবস্যা ও পূর্ণিমার মতো
সেই সত্য এখনও বিদ্যমান।
আমার ধমনীতে প্রবাহিত রক্ত¯্রােতের উল্লাসে গীত হয় মানুষের কণ্ঠস্বর
ব্যাখ্যাতীত এক অনবদ্য কণ্ঠস্বর।
চৈতন্যের গভীরে কারু উপস্থিতির অস্তিত্ব উপলব্ধি করি
গভীর সূক্ষ্মতায় তাকালে বিমূর্ত চিত্রের মতো দুর্বোধ্য আর
অস্পষ্টতায় ভরা অস্তিত্বহীন অশ^ত্থের শীতলতায় অবগাহন করি
পৃথিবীর মানচিত্রে নবগঠিত কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মতো
আমি তাকে স্বীকৃতি দেই।
** শ্যামনারী
প্রত্যয় জসীম
পরান পাখি কেবল শব্দ নয় গহীন ভালোবাসা
একটি শব্দে লুকিয়ে থাকে মনের সকল আশা
কেউ না জানুক, তুমি তো জানো কতো ভালোবাসি
কেউ না বুঝুক তুমি তো বোঝ, কেমন প্রেমের চাষী!
তোমার বিরহে কাটে না যে সকাল সন্ধ্যা রাত্রি দুপুর
বুকের পাঁজরে সঙ্গোপনে বাজতে থাকে প্রেমের নূপুর
তোমার জন্য খুন করেছি কতো দিন, কতো রাত
তুমি আমার প্রার্থনা তুমিই আমার সব বরাত।
উথাল পাথাল সাগর নদী তোমার জন্য দেই পাড়ি
বুকের ভেতর কবিকে রেখো শ্যাম বাংলার শ্যামনারী।
** আমিও ফিরেছি ফের
শাদমান শরীফ
বিশ^াসের ধূপ জে¦লে আগুন ওড়াই আকাশের বুকে
তোমার একান্ত দিনে আমাকে বিকিয়েছো বেদনার হাটে
আমিও ফিরেছি ফের; অভিমান ভুলে তোমার সম্মুখে।
কতটা পাগল হলে
সূর্যের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলি অনুরাগ, প্রেম
পেছনে ফেলে আসি দুঃখের নাজাত
অথচ আমার পুরনো ডায়েরিতে উইপোকা বাঁধে বাসা।
কোলাহলে অবোধ শিশুর কান্নায় এপাশে মেঘ
ওপাশে তুমি হর্ষ-বিলোলমুখর অরণ্যা।
** মানুষ বোঝেনি আমাকে
জাকিয়া এস আরা
কিছু লাল পিঁপড়ে কামড় দিচ্ছে মননে
বেতের চাবুক পড়ছে মগজে!
আবছায়ার মতো চোখের দৃষ্টি, কানে বাজে
শুধু মার্চপাস্টের আওয়াজ - বাম ডান বাম
পিপাসা, পিপাসা! আহা! কেউ যদি ভালোবেসে
এক চা- চামচ জল পান করাতো! চারদিক
আঁধার হয়ে আসছে, এখন কি রাত তবে?
শরীরের উপরে কি যেন হেঁটে যাচ্ছে
সে কি জন্মান্ধ! নাকি চোখ থেকেও অন্ধ!
বুঝি বৃষ্টি হচ্ছে, মুখে নাকে জলের পরশ
ওহ! এখন তো শ্রাবণ, এই ভোঁতা বোধ শ্রাবণকে
ভোলেনি, আসলে জন্ম তো বাংলার মাটিতে!
আমি ভুলেছি, মাটি তো ভোলেনি
আবার আওয়াজ শুনছি, বাম ডান বাম
মাটি, তুমি আমাকে ভুল বুঝিও না!
মানুষ বোঝেনি আমাকে, বিধাতাও নয়!