ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে চোখের ক্ষতি! বিশেষজ্ঞ দিলেন রক্ষার সহজ টিপস

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ৭ আগস্ট ২০২৫

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে চোখের ক্ষতি! বিশেষজ্ঞ দিলেন রক্ষার সহজ টিপস

ছবিঃ সংগৃহীত

বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের দৈনিক স্ক্রিন টাইম গড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা—এই সময় আরও বেড়ে যায় যখন অবসরে মোবাইল, ট্যাব কিংবা কম্পিউটারে ভিডিও দেখা বা গেম খেলার মতো বিনোদনমূলক স্ক্রিন ব্যবহারের সময় যুক্ত হয়। দীর্ঘসময় ধরে ডিজিটাল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে, যেহেতু কাজের প্রয়োজনেই অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, তাই চোখের আরাম রক্ষা করতে হলে কিছু সাবধানতা ও পরামর্শ মেনে চলাই সমাধান।

স্ক্রিন সেটিংস কেমন হওয়া উচিত? জানালেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ

হেলথ শটসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মুবারক পারকার, ক্যাটারাক্ট ও ল্যাসিক সার্জন, ডা. আগরওয়ালস আই হসপিটাল (ভাসি), বলেন—"স্ক্রিনের ব্রাইটনেস, কনট্রাস্ট ও ফন্ট সাইজ আপনার চারপাশের আলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত, যাতে চোখে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।"

চোখের আরামের জন্য স্ক্রিন সেটিংস কেমন হওয়া উচিত?
ব্রাইটনেস: আশেপাশের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা ঠিক করুন। অন্ধকার ঘরে স্ক্রিন যেন আলোর উৎস না হয়ে যায় আবার উজ্জ্বল ঘরে যেন স্ক্রিন খুব ফ্যাকাশে না লাগে।

কনট্রাস্ট: মাঝারি থেকে উচ্চ কনট্রাস্ট ভালো (সাদা বা হালকা ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো লেখা)। কম কনট্রাস্টে চোখ বেশি পরিশ্রম করে।

ফন্ট সাইজ: পাঠযোগ্যতা বজায় রাখতে এমন ফন্ট সাইজ ব্যবহার করুন যা পড়তে গিয়ে চোখ ছোট করে তাকাতে বা সামনের দিকে ঝুঁকে যেতে না হয়। প্রয়োজনে ফন্ট সাইজ ১২৫–১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিন।

কালার টেম্পারেচার: রাতে কম নীল আলো অর্থাৎ ওয়ার্ম টোন ব্যবহার করলে ঘুমে বিঘ্ন কম হয়। Windows-এ ‘Night Light’ ও Mac/iOS-এ ‘Night Shift’ ফিচার ব্যবহার করুন।

চোখের চাপ কমাতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
বিশেষ করে যারা আইটি পেশাজীবী, সাংবাদিক বা শিক্ষার্থী এবং দীর্ঘসময় স্ক্রিনে কাজ করেন, তাদের জন্য ড. পারকার কিছু কার্যকর টিপস দিয়েছেন:

১. ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন: প্রতি ২০ মিনিটে অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কিছু দেখুন।

২. বারবার চোখের পলক ফেলুন: স্ক্রিন ব্যবহার করলে চোখের পলক পড়ার হার ৩০–৫০ শতাংশ কমে যায়। চোখের শুষ্কতা ঠেকাতে সচেতনভাবে পলক ফেলুন।

৩. আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ব্যবহার করুন: চোখ শুকিয়ে গেলে প্রিজারভেটিভবিহীন লুব্রিকেটিং ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।

৪. সঠিক ভঙ্গিমায় বসুন: স্ক্রিনটি চোখ থেকে ২০–২৮ ইঞ্চি দূরে এবং চোখের স্তর থেকে ৪–৫ ইঞ্চি নিচে রাখুন। অ্যান্টি-গ্লেয়ার স্ক্রিন ব্যবহার করুন বা জানালার গ্লেয়ার থেকে দূরে বসুন।

৫. ডার্ক মোড না লাইট মোড?: পরিবেশ অনুযায়ী বেছে নিন—উজ্জ্বল আলোতে লাইট মোড, অন্ধকারে ডার্ক মোড ব্যবহার উপযোগী।

৬. বিরতি নিন: প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৫–১০ মিনিট স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে বিশ্রাম নিন।

চোখের স্বাস্থ্যে পুষ্টি ও হাইড্রেশনের ভূমিকা
চোখ ভালো রাখতে শুধু বাহ্যিক সতর্কতা নয়, ভেতর থেকেও পুষ্টি ও পানিশূন্যতা রোধ করা জরুরি।

ড. পারকার বলেন, “শরীরের মতো চোখও হাইড্রেশন ও পুষ্টির উপর নির্ভর করে। পানিশূন্যতা চোখের শুষ্কতা ও ক্লান্তির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে এয়ারকন্ডিশনড বা গরম পরিবেশে বেশি পানি পান করুন।”

চোখের জন্য জরুরি পুষ্টি উপাদানগুলো হলো:

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছ বা ফ্ল্যাক্সসিডে পাওয়া যায়। চোখের শুষ্কতা কমায়।

লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন: পালং শাক, কেল শাকসহ সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজিতে থাকে। ব্লু লাইটের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, রেটিনার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ভিটামিন এ, সি, ই ও জিঙ্ক: দৃষ্টিশক্তি রক্ষা ও চোখের কোষে অক্সিডেটিভ চাপ কমাতে সাহায্য করে।

স্ক্রিনে সময় কাটানো যেহেতু এড়ানো কঠিন, তাই চোখের যত্ন নেওয়া এখন আর বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। সংবেদনশীল অঙ্গ চোখের জন্য এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই হতে পারে বড় সুরক্ষা।

নোভা

×