ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রতিদিন বাদামের দুধ খেলে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ৩১ জুলাই ২০২৫

প্রতিদিন বাদামের দুধ খেলে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন

ছবিঃ সংগৃহীত

আজকাল অনেকেই গরুর দুধ ছেড়ে বাদামের দুধ বেছে নিচ্ছেন। এটি ভেগান, ল্যাকটোজ-অসহিষ্ণু ও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি বিকল্প। বাদামের দুধে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-ও যোগ করা থাকে অনেক সময়, যা স্বাস্থ্যকর মনে হয়।

তবে আপনি কি জানেন—প্রতিদিন বাদামের দুধ খেলে কিছু অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে? চলুন, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি—কোন কোন দিকগুলো আমাদের জানাও উচিত, খেয়ালও রাখা উচিত।

১. হজমে গোলমাল বা পেটের অস্বস্তি
আপনি যদি প্রতিদিন বাদামের দুধ খান, তবে মনে রাখবেন—অনেক দুধেই এমন কিছু উপাদান থাকে যা প্রাকৃতিক নয়, যেমন: ক্যারাজিনান। এটি এক ধরনের খাদ্যনিরাপত্তা উপাদান যা দুধকে জমতে না দিয়ে তরল রাখে।

সমস্যা তখনই হয়, যখন আপনি নিয়মিত ও বেশিদিন ধরে এটি খান। এতে পেটে গ্যাস, ব্যথা, বমিভাব, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।

ভয় পাবেন না—স্বাভাবিক পরিমাণে খেলে সাধারণত এসব হয় না।

২. অতিরিক্ত চিনি লুকিয়ে থাকতে পারে!
অনেকেই ভাবেন বাদামের দুধ মানেই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু যদি আপনি মিষ্টি বা ফ্লেভারযুক্ত দুধ খাচ্ছেন, তবে আপনি প্রতিদিন অজান্তেই অনেক চিনি খেয়ে ফেলছেন।

এই চিনি:

  • ওজন বাড়ায়,
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়,
  • এমনকি হৃদরোগের পথও তৈরি করে।

আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে এই দুধ আপনার জন্য উপযুক্ত নয়—বিশেষ করে যদি সেটা মিষ্টি হয়। সবসময় “অমিষ্ট” বা “Unsweetened” লেখা বোতলটাই বেছে নিন।

৩. ছোট্ট শিশুর জন্য নয়
এই দুধ দেখতে মোলায়েম, খেতে মজার—তাই অনেক বাবা-মা ভাবেন, শিশুর জন্যও ভালো হতে পারে।
কিন্তু ভুল করবেন না। এক বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য বাদামের দুধ একেবারেই নিরাপদ নয়। এতে প্রয়োজনীয় চর্বি, প্রোটিন বা আয়রন নেই। এমনকি এটি শিশুর শরীরে আয়রন শোষণেও বাধা দিতে পারে।

শিশুর পুষ্টির জন্য সবচেয়ে ভালো হলো মায়ের দুধ বা শিশু ফর্মুলা।

৪. প্রোটিন? খুবই কম!
আপনি হয়তো জানেন, বাদামে প্রচুর প্রোটিন থাকে। কিন্তু বাদামের দুধ? বেশিরভাগই তো পানি!

এক কাপ বাদামের দুধে থাকে মাত্র ১ গ্রাম প্রোটিন—যেখানে গরুর দুধে থাকে প্রায় ৮ গ্রাম।

প্রোটিন দরকার আমাদের:

  • পেশি তৈরিতে
  • শরীরের ক্ষয়রোধে 
  • ত্বক ও হরমোনের কাজে

তাই বাদামের দুধ খাচ্ছেন? খুব ভালো—তবে অন্য কোনো খাবার থেকে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করছেন তো?

৫. বাদামের অ্যালার্জি থাকলে ভুলেও খাবেন না
এইটুকু বলাই বাহুল্য—আপনি যদি বাদাম বা অন্যান্য নাট (Nut) জাতীয় খাবারে অ্যালার্জিক হন, তাহলে বাদামের দুধ আপনার জন্য বিপজ্জনক। কখনও কখনও এটি জীবনঘাতী প্রতিক্রিয়াও তৈরি করতে পারে।

বাদামের দুধ খেতে চাইলে যা মাথায় রাখবেন

  • Unsweetened বা অমিষ্ট দুধ বেছে নিন
  • ফর্টিফায়েড (যাতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যোগ করা থাকে) দুধ কিনুন
  • প্রতিদিন অতিমাত্রায় না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ পান করুন
  • প্রোটিন, আয়রন ও অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা অন্য খাবার থেকে পূরণ করুন

তাহলে কি বাদামের দুধ খাওয়া যাবে না?
না, তা নয়।
বাদামের দুধ অনেক দিক থেকে স্বাস্থ্যকর হতে পারে—যদি সঠিকভাবে বাছাই করে খাওয়া হয়।

এটি:

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  • হার্টের জন্য ভালো
  • ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে (ভিটামিন ই-এর কারণে)

তবে একে একমাত্র উৎস হিসেবে ধরে না নিয়ে ব্যালান্সড ডায়েটের অংশ হিসেবে খাওয়া উচিত।


আপনি যদি প্রতিদিন বাদামের দুধ খান বা খেতে শুরু করতে চান, একটু সচেতন হলেই উপকার পাবেন। আর যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে বা অনিশ্চিত থাকেন—একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।

শরীরের যত্ন, নিজের জানা থেকেই শুরু হয়।

এই লেখাটি ভালো লাগলে, অন্যদের সঙ্গেও শেয়ার করুন। সুস্থ থাকুন!

নোট: এই প্রতিবেদনটি কেবল সাধারণ তথ্যের জন্য। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে নিজের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
 

 

মারিয়া

×