ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ত্বকের ক্যান্সারের ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যেগুলো আমরা সহজেই উপেক্ষা করি

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৬ জুলাই ২০২৫

ত্বকের ক্যান্সারের ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যেগুলো আমরা সহজেই উপেক্ষা করি

ছবি:সংগৃহীত

ত্বকের ক্যান্সার বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দেখা ক্যান্সারগুলোর একটি। এটি তখনই হয়, যখন ত্বকের কোষে অস্বাভাবিক (ক্যান্সারাস) কোষ জন্ম নেয়। এর পেছনে মূলত দুইটি কারণ কাজ করে—একটি হলো জেনেটিক বা বংশগত, আরেকটি হলো বছরের পর বছর সূর্যের অতিরিক্ত এক্সপোজার।

শুরুতে এর উপসর্গগুলো সাধারণ চর্মরোগের মতোই মনে হতে পারে, কিন্তু ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে, তা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। যেমন সব ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই হয়, তেমনিভাবে ত্বকের ক্যান্সারও যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসা সম্ভব এবং আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।

চলুন জেনে নিই এমন ৫টি লক্ষণ, যেগুলো প্রাথমিক স্তরে দেখা দিলেও অনেক সময় আমরা সেগুলোকে পাত্তা দিই না:

১. শুষ্ক, আঁশযুক্ত বা কাঁটার মতো প্যাচ
ত্বকের উপরে যদি কোনো জায়গায় শুকনো, খসখসে বা আঁশযুক্ত প্যাচ দেখা যায়, যা দেখতে অনেকটা ওয়ার্ট বা খোস-পাঁচড়ার মতো, তবে সেটা হতে পারে বেসাল সেল কার্সিনোমা-এর প্রথম লক্ষণ। সাধারণত এগুলো মুখ, গলা বা হাতে দেখা যায়—যে অংশগুলোতে রোদ বেশি পড়ে। লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারেও যদি এসব জায়গা ভালো না হয়, তখন সাবধান হওয়া জরুরি।

২. চুলকানি বা জ্বালাপোড়া যা কিছুতেই কমে না
সাধারণ চর্মরোগের মতোই মনে হয় শুরুতে। কিন্তু যদি দেখেন কোনো লালচে দাগ বা চুলকানি বারবার হচ্ছে এবং কোনো ওষুধ বা ক্রিমে কাজ দিচ্ছে না—তাহলে সেটা ত্বকের নিচে ক্যান্সার কোষ থাকার ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক সময় শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই (immune system) এভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।

৩. উজ্জ্বল, চকচকে বা মুক্তার মতো ছোট ফুঁসকুড়ি
বেসাল সেল কার্সিনোমা অনেক সময় ছোট ছোট উজ্জ্বল বা মোমের ফোঁটার মতো দেখতে ফুঁসকুড়ি দিয়ে শুরু হয়। এগুলো সাধারণত নির্দোষ বলে মনে হয়, ব্যথাও করে না, কিন্তু এদের ভেতর ছোট রক্তনালিও দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে নাক, কপাল, কান বা গাল—যেখানে রোদ বেশি লাগে, সেখানে এগুলো বেশি দেখা যায়।

৪. ঘা বা ক্ষত যা সারেও না, আবার ফিরে আসে
যদি কোনো ক্ষত বারবার হয় বা সারতে সময় নেয়, বা মাঝেমাঝে শুকিয়ে আবার হয়—তাহলে সেটা হতে পারে ত্বকের ক্যান্সার। স্কোয়ামাস সেল বা বেসাল সেল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এমন হয়। কিছু কিছু ক্ষত রক্তপাত করে বা খোসা পড়ে যায়, কিন্তু পুরোপুরি আরাম পাওয়া যায় না। এমন হলে দ্রুত ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৫. তিলের আকার, রঙ বা গঠনে পরিবর্তন
ত্বকে থাকা সাধারণ তিল যদি হঠাৎ করে বড় হয়ে যায়, রঙ বদলায় বা আকৃতি বদলায়, তাহলে সেটা হতে পারে মেলানোমা—ত্বকের সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্যান্সার। একে বোঝার জন্য একটি সহজ নিয়ম আছে, যাকে বলে ABCDE রুল:

  • A = Asymmetry: তিলের দুই পাশ অসমান
  • B = Border: তিলের কিনারা অস্পষ্ট বা কাঁটা কাঁটা
  • C = Colour: একাধিক রঙ (বাদামী, কালো, লালচে ইত্যাদি)
  • D = Diameter: তিলের আকার ৬ মিমি-র বেশি (একটি পেন্সিল ইরেজারের সমান)
  • E = Evolving: সময়ের সঙ্গে তিলের আকার, রঙ বা আচরণে পরিবর্তন

হঠাৎ নতুন কোনো তিল দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো সচেতনতা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ। আপনার শরীরের প্রতিটি পরিবর্তন লক্ষ করুন। যদি কোনো দাগ, ক্ষত বা তিল নিয়ে সন্দেহ হয়—দ্রুত বিশেষজ্ঞের কাছে যান। প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ এবং কার্যকর।
 

 

মারিয়া

×