ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

মনোবিজ্ঞানের মতে এই ৭টি গুণই আপনাকে অদম্য করে, যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা দেয়!

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:১৬, ১৩ জুলাই ২০২৫

মনোবিজ্ঞানের মতে এই ৭টি গুণই আপনাকে অদম্য করে, যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা দেয়!

জীবনে প্রতিকূলতা আসবেই। তবে সবাই সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে সামনে এগোতে পারেন না। কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, আবার কেউ একরাশ ধৈর্য, সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আরও দৃঢ়ভাবে উঠে দাঁড়ান। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যাদের ‘রেজিলিয়েন্ট’ বলা হয়, তারা কেবল টিকে থাকেন না, বরং প্রতিকূল সময়কে শক্তিতে রূপান্তর করতে সক্ষম হন।

রেজিলিয়েন্স মানে হলো দুঃখ, বিপর্যয় বা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এবং সেখান থেকে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (APA) বলছে, ‘‘রেজিলিয়েন্ট হওয়ার অর্থ এই নয় যে কেউ কষ্ট অনুভব করেন না। বরং যারা বড় ধরনের ট্রমা বা সংকটের মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যেও গভীর মানসিক যন্ত্রণা ও দুঃখ থাকেই। কিন্তু তার মধ্য দিয়েই তারা ঘুরে দাঁড়ান।’’

গবেষণা বলছে, রেজিলিয়েন্স গঠনের সেরা সময় তখনই, যখন একজন ব্যক্তি নিজের মানসিক প্রতিক্রিয়া চিহ্নিত করতে পারেন এবং তা সামলাতে নতুন কৌশল রপ্ত করেন।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, নিচের সাতটি লক্ষণ থাকলে যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন দুর্দান্ত রেজিলিয়েন্ট—অর্থাৎ এমন একজন ব্যক্তি, যিনি যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারেন।

১. আত্মবিশ্বাস থাকে দৃঢ়
রেজিলিয়েন্ট ব্যক্তিরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন। তারা জানেন, তাদের কী সক্ষমতা আছে এবং অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বুঝে গেছেন যথেষ্ট চেষ্টা করলে তারা পারতেই পারেন। আত্মবিশ্বাস তাদের মেরুদণ্ডের মতো কাজ করে। নানা দুঃসময়ের মধ্যেও যারা আত্মবিশ্বাস হারান না, তারাই পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন দ্রুত ও দৃপ্তভাবে।

২. লক্ষ্য অর্জনে অটল থাকেন
একজন রেজিলিয়েন্ট ব্যক্তি কোনো কাজ বা সংকটময় সময়ের মাঝপথে থেমে যান না। তারা জানেন, শেষ পর্যন্ত যাওয়াই আসল। গবেষণায় দেখা গেছে, ছোটবেলা থেকে সহনীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া মানুষকে পরবর্তী জীবনে মানসিক চাপ সামলাতে আরও প্রস্তুত করে তোলে। তাই সংকল্প ও একাগ্রতা, রেজিলিয়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।

৩. মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা থাকে
জীবনে সব সময় এক রকম পরিকল্পনায় কাজ হয় না। কঠিন পরিস্থিতিতে যে ব্যক্তি নিজের ভাবনা ও সিদ্ধান্ত নমনীয়ভাবে বদলাতে পারেন, তিনিই প্রকৃত অর্থে রেজিলিয়েন্ট। স্থির ধারণা বা একমুখী চিন্তার বদলে যারা পরিস্থিতি অনুযায়ী পথ বদলাতে জানেন, তারা অনেক দ্রুত সমস্যার সমাধান খুঁজে নেন এবং ভেঙে না পড়ে সামনে এগিয়ে যান।

৪. ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখেন
রেজিলিয়েন্ট ব্যক্তিদের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তাদের আশাবাদ। তারা বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত সব ঠিক হবে। গবেষণায় প্রমাণিত, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানসিক চাপ কমায়, সিদ্ধান্তগ্রহণে সাহায্য করে এবং সংকটে আত্মবিশ্বাস জোগায়। আশাবাদী মানুষ কেবল নিজেদেরই নয়, আশপাশের মানুষদের মনোবলও বাড়িয়ে তোলেন।

৫. বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌশলী হন
রেজিলিয়েন্ট মানসিকতা শুধু মনোবলের উপর নির্ভর করে না এর সঙ্গে জড়িত থাকে কৌশল ও সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা। এ ধরনের ব্যক্তিরা জানেন, কোথায় সাহায্য পাওয়া যায়, কীভাবে সমস্যা বিশ্লেষণ করে সমাধানের পথ খুঁজতে হয়। পরিবার, বন্ধু, পূর্ব অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান সবই তারা কাজে লাগাতে পারেন কঠিন সময় পার করার জন্য।

৬. ধৈর্য থাকে দৃঢ়
রেজিলিয়েন্স গঠনের আরেকটি অপরিহার্য দিক হলো ধৈর্য। সংকট কখনোই একদিনে কেটে যায় না। দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন ধৈর্যের সংরক্ষণশীল ব্যবহার। গবেষণায় দেখা গেছে, ধৈর্য শুধু মানসিক স্থিতিই নয়, বরং মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সফলতার সঙ্গে জড়িত।

৭. নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখেন
রেজিলিয়েন্ট ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন, তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ তাদের নিজের হাতেই। তারা পরিস্থিতিকে দোষ না দিয়ে নিজের ভূমিকার কথা ভাবেন। এই 'internal locus of control' মানসিক কাঠামোই তাদের প্ররোচিত করে সমস্যা কাটিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে।


মানসিক স্থিতি, আত্মবিশ্বাস, লক্ষ্যপূরণে অটলতা, নমনীয় চিন্তা, ইতিবাচক মনোভাব, কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ এই সাতটি বৈশিষ্ট্য একজন মানুষকে রেজিলিয়েন্ট করে তোলে। মনোবিজ্ঞান বলছে, এসব গুণ জন্মগত না হলেও সচেতন প্রয়াসে গড়ে তোলা সম্ভব।

প্রতিটি কঠিন সময় একজন মানুষকে শেখায়। সঠিক মানসিক প্রস্তুতি, ধৈর্য এবং ইতিবাচকতার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে শুধরে নিতে পারে, পুনরায় গড়ে তুলতে পারে ভেতরের শক্তিকে। রেজিলিয়েন্স কখনোই একদিনে আসে না, কিন্তু একবার গড়ে উঠলে তা হয়ে ওঠে জীবন বদলে দেওয়ার অন্যতম হাতিয়ার।


সূত্র:https://tinyurl.com/2maemwnu

আফরোজা

×