নিজেকে সহজলভ্য করে তুলবেন না, তাহলে আপনার মূল্য কমে যাবে

বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইয়ং এর মতে, মানুষ যখন নিজেকে সবার কাছে সবসময় সহজলভ্য করে তোলে, তখন তার মূল্য কমে যায়। মানুষ যা সহজে পায়, তার কদর কমিয়ে ফেলে। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা সবসময় সাহায্য করতে চান, সবার কথা শুনতে চান, মন থেকে ভালোবাসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেক সময় তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হন।

মনোবিজ্ঞানে একটি শব্দ রয়েছে— হ্যাবিচুয়েশন বা অভ্যস্ততা। এর মানে, কোনো কিছু নিয়মিত হতে থাকলে তা মস্তিষ্কে গুরুত্ব হারায়। যেমন, ঘড়ির টিকটিক শব্দ একসময় আমাদের কানে আর বাজে না। তেমনি, ভালো মানুষদের উপস্থিতিও একসময় অনেকের কাছে গুরুত্ব হারায়।

কার্ল ইয়ং বলেন, যদি আপনি নিজেই নিজের মর্যাদা না বোঝেন, তাহলে অন্যরা কেন বুঝবে? সহজে পাওয়া যায় এমন জিনিস বা মানুষকে সমাজ সাধারণত তেমন গুরুত্ব দেয় না। আপনি যদি নিজেকে সবসময় সবার জন্য উন্মুক্ত রাখেন, তাহলে অনেকে আপনাকে তাদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করবে।

এমনকি কেউ যদি নিজের ভুল বা হিংসা আপনার ওপর চাপিয়ে দেয়, আপনি যদি নিজের আত্মমর্যাদা ধরে রাখতে না পারেন, তাহলে একসময় নিজেকেই দোষী ভাবতে শুরু করবেন। এটি একটি বিপজ্জনক মানসিক অবস্থা, যা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

তৃতীয় হুশিয়ারি হলো— সুযোগসন্ধানী মানুষের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। এই মানুষগুলো সরাসরি ক্ষতি করে না, কিন্তু আপনার আবেগ, দুর্বলতা ও অভ্যাস জেনে তারা সময়মতো বোতামে চাপ দেয়। তারা জানে, কীভাবে আপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলে আপনি অনেক সময় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন।

চতুর্থত, ইয়ং বলেন—নীরবতা অনেক সময় শক্তি। আবেগের বশে অনেক কথা বলার চেয়ে চুপ থেকে পরিস্থিতি বোঝা ভালো। অনেক ভালোবাসার সম্পর্কেও বেশি বলা, বেশি আবেগ দেখানো সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে।

সবশেষ হুশিয়ারি— সামাজিক মুখোশ। ইয়ং বলেন, মানুষ অনেক সময় সমাজে টিকে থাকার জন্য অভিনয় করে। কিন্তু এই মুখোশ পরে থাকতে থাকতে একসময় মানুষ নিজেকেই হারিয়ে ফেলে। সবাইকে খুশি করার এই চেষ্টার নাম দ্বিচারিতা। কেউ যদি সব মানুষের কাছে ভালো থাকতে চায়, তাহলে তার একেক জায়গায় একেক রকম মুখোশ পরা লাগবে। এটা ধ্বংসাত্মক।

তাহলে কি সমাজ থেকে দূরে থাকতে হবে? কার্ল ইয়ং উত্তর দেন, না। বরং সহজলভ্যতার পরিমাণ নয়, গুণগত মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাদের সঙ্গে সত্যিকারের সম্পর্ক, তাদের জন্য সময় দেওয়া, সহানুভূতি দেখানো— এগুলো জরুরি। তবে সেটিও হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ।

সবশেষে, ইয়ং মনে করিয়ে দেন— নিজের প্রতি সম্মান রাখুন, নিজের মূল্য বোঝান। তখনই অন্যরা আপনাকে গুরুত্ব দিতে শিখবে। অতিরিক্ত সহজলভ্যতা কখনোই শ্রেষ্ঠতা আনে না, বরং তাতে নিজের মর্যাদা হারায়।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/5AMDcN03etQ?si=UXBVXnDxFFTgzriw