
ছবি: সংগৃহীত
"আপনার সাফল্যকে যদি মাত্র একটি শব্দে প্রকাশ করতে হয়—আপনি কী বলবেন?"
এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল দুই জন কিংবদন্তিকে—ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটস।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই দুই ভিন্ন জগতের সফল ব্যক্তিত্ব এক কথায় একমত হন:
"মনোযোগ"।
এই ছোট্ট উত্তরেই লুকিয়ে আছে বিশাল এক শিক্ষা—জীবনে এগিয়ে যেতে চাইলে একক লক্ষ্যেই স্থির থাকতে হবে। বিভ্রান্তি নয়, নির্বিচারে কাজ করে যাওয়া।
গেটসের কৈশোরে গড়ে ওঠা ভবিষ্যৎ
বিল গেটস এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সে তুমি যা নিয়ে পাগল হয়ে থাকো, সেটাই ভবিষ্যতে তোমার পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়।”
এই কথারই বাস্তব উদাহরণ তিনি নিজেই। কিশোর বয়সে প্রোগ্রামিং নিয়ে তার অদম্য আগ্রহই গড়ে তোলে মাইক্রোসফটের ভিত। ২০ বছর বয়সে মিলিয়নিয়ার, আর এখন? ফোর্বস অনুযায়ী, তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১২৭ বিলিয়ন ডলার—বিশ্বের সপ্তম ধনী ব্যক্তি।
শৈশবেই বিনিয়োগ শিক্ষা নেন বাফেট
ওয়ারেন বাফেটের অর্থনীতির প্রতি ঝোঁক শুরু ১১ বছর বয়সে, যখন তিনি নিজের জমানো টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন শেয়ার।
সেই ছোট্ট সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতে গড়ে তোলে Berkshire Hathaway-এর মতো এক বিশাল কনগ্লোমারেটকে, যার মালিকানায় রয়েছে Geico, Duracell ও Dairy Queen-এর মতো নামি কোম্পানি।বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলার—বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি।
দুই কিংবদন্তির অভিন্ন দর্শন
একবার বিল গেটসের বাবার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অতিথিদের অনুরোধ করা হয়, তারা যেন কাগজে একটি শব্দ লেখেন যা তাদের সাফল্যকে সংজ্ঞায়িত করে। কেউ কাউকে না জানিয়ে, গেটস ও বাফেট দু’জনেই লিখলেন: "Focus"।
বাফেট তখন বলেছিলেন, “গেটস সফটওয়্যারে মন দিয়েছিল, আমি দিয়েছিলাম বিনিয়োগে। এবং আমরা দু’জনেই তা শুরু করেছিলাম খুব অল্প বয়সে।”
মনোযোগ থেকেই জন্ম নেয় রূপান্তর
এই ঘটনা শুধু দুই বিলিয়নিয়ারের গল্প নয়। এটি আমাদের সকলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
আমি নিজেও একসময় ১৮ বছর বয়সে একটি ব্লগ শুরু করেছিলাম—শুধু নিজের ভাবনা লিখতাম।
আজ সেটিই পেশায় রূপ নিয়েছে।
শুধু আগ্রহ ধরে রাখার ও তাতে মনোযোগ দেওয়ার ফলেই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
তাহলে দেরি কেন? এখনই শুরু করুন!
কিশোর বয়সে আপনি লক্ষ্য খুঁজে না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখনও সময় আছে। শুধু দরকার কিছু চর্চা, কিছু মন্ত্র:
১. সময়কে কাজে লাগান
ওয়ারেন বাফেট বারবার বলেন—চক্রবৃদ্ধি সুদের শক্তি সবচেয়ে বড় সম্পদ।
যত আগে শুরু করবেন, ততই লাভ। হোক তা স্টকে বিনিয়োগ, রিটায়ারমেন্ট ফান্ড বা সঞ্চয়—আজই ভাবতে শুরু করুন।
২. ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন
বিল গেটস কিংবা বাফেট কেউই তাদের পথে ঘনঘন পরিবর্তন আনেননি।
একটি লক্ষ্য ঠিক করে দিনে দিনে সেই দিকে এগিয়ে যাওয়ার ফলেই তারা সফল।
৩. গুণমানকেই প্রাধান্য দিন
বাফেট এমন কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করেন, যাদের মৌলিক ভিত্তি মজবুত—কম ঋণ, ভালো নগদ প্রবাহ, ও ভবিষ্যতের স্থায়িত্ব।
দীর্ঘমেয়াদে Apple, Coca-Cola ও American Express-এর মতো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগই তার লাভজনক সিদ্ধান্ত হয়ে উঠেছে।
সফলতা জাদু নয়—নিয়মের ফল
সফল হওয়ার জন্য কোনো গোপন ফর্মুলা নেই। দরকার কেবল তিনটি জিনিস: মনোযোগ, ধারাবাহিকতা আর সময়ের সদ্ব্যবহার। আপনার ভেতরেও সেই সম্ভাবনা রয়েছে—শুধু জানতে হবে, কোন পথে হাঁটলে আপনি সত্যিকারের এগিয়ে যেতে পারবেন।
আপনি যদি আপনার যাত্রাকে মাত্র একটি শব্দে প্রকাশ করতে চান—সেটি কী হবে?
গেটস ও বাফেটের গল্প কি আপনার নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলে?
আপনার ভাবনা পাঠান আমাদের—শেয়ার করুন অন্যদের সঙ্গে, হোক সবাই একে অন্যের অনুপ্রেরণা!
Mily