‘আমি এখন অনেক বেশি আনন্দে!’—জীবন নিয়ে ৯০-এ পৌঁছে যা বললেন এক নারী

“৯০ পেরিয়ে এসেও ভাবিনি, জীবনে এত আনন্দ অপেক্ষা করছে!”—এমন কথাই বললেন এক প্রাজ্ঞ নারী, যিনি MSN-কে দেওয়া এক হৃদয়গ্রাহী সাক্ষাৎকারে শেয়ার করেছেন তার বর্ণিল অভিজ্ঞতা।

বয়স তার কাছে শুধুই একটি সংখ্যা। বরং জীবনের এই পরিণত অধ্যায়ে এসেই তিনি আবিষ্কার করেছেন—আসল সুখ লুকিয়ে থাকে ছোট ছোট অভ্যাস, সম্পর্ক, কৃতজ্ঞতা ও হাসির মধ্যেই।

তাঁর ভাষায়, “আফসোস আর নয়, এখন আমি কৃতজ্ঞ। প্রতিটি দিনকে ভালোবাসি, কারণ আমি এখন জানি—বাঁচার মানেই উপভোগ করা।”

চলুন জেনে নিই, ৯০ বছর বয়সেও কীভাবে তিনি জীবনকে প্রাণবন্ত ও অর্থবহ করে রেখেছেন তাঁর ৯টি মূলমন্ত্রের মাধ্যমে—

১. নিজের প্রতি দয়া দেখান, যেমনটা আপনি অন্যের প্রতি দেখান

বয়স বাড়ার সঙ্গে ভুল করা, ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেজন্য নিজেকে দোষারোপ না করে তিনি শিখেছেন নিজেকে ক্ষমা করতে। “আমি এখন নিজেকে বলি—এটা তো বয়সের স্বাভাবিক অংশ,”—এই একটাই বাক্য বদলে দিয়েছে তাঁর মানসিক প্রশান্তি।

২. প্রতিদিন কৃতজ্ঞতার চর্চা করুন

প্রতিদিন সকালে তিনটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। কখনো নতুন, কখনো পুরোনো।
এই অভ্যাস তাকে শক্ত রাখে, মাটির কাছাকাছি রাখে। আর যেদিন এই চর্চা বাদ যায়, সেদিন মনও ভারী লাগে—বলে জানান তিনি।

৩. রুটিনে গড়ুন সুনিয়ন্ত্রিত জীবন

ছোট ছোট নিয়ম তাকে সাহায্য করেছে দিনকে সহজ করতে।
নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যপরীক্ষা, খাবারে সংযম—সবই এখন অভ্যাস।
এমনকি ফোন রাখার জন্য নির্দিষ্ট তিনটি জায়গা ঠিক করে জীবনকে বানিয়েছেন অনেক কম বিশৃঙ্খল।

৪. সম্পর্ক রক্ষা করুন, তা যত দূরেই থাকুক না কেন

“সুখী থাকতে চাইলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়।”
তিনি নিয়মিত ফোন করেন, বার্তা পাঠান—বিশেষ করে যাদের সময়টা কঠিন যাচ্ছে।
এভাবে তিনি ভালো থাকেন, অন্যকেও ভালো রাখেন।

৫. জীবনের অর্থ খুঁজুন প্রিয় কাজে

অবসর মানে থেমে যাওয়া নয়। বরং এটি এক নতুন সূচনা।
তিনি লেখালেখি করেন, কমিউনিটিতে সক্রিয় থাকেন, আর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটান।এইসবেই খুঁজে পান জীবনের মানে।

৬. শোককে দমন নয়, আলিঙ্গন করুন

জীবনের পথে প্রিয়জন চলে যাওয়া বা শারীরিক দুর্বলতা আসবে—তা অস্বীকার নয়, মেনে নেওয়াতেই মুক্তি। তিনি একা সময় কাটান, ডায়েরি লেখেন, প্রার্থনা করেন। এসবই তাঁর ভেতরের ভার হালকা করে।

৭. শেখার আগ্রহ ধরে রাখুন আজীবন

“৬ মাস আগে আমি ফরাসি ভাষা শিখতে শুরু করেছি, এবং সেটা উপভোগ করছি!”
এই কথাই প্রমাণ করে, শেখার কোনো বয়স নেই। নতুন কিছু শেখা মানে মস্তিষ্ককে চনমনে রাখা, মনকে তরুণ রাখা।

৮. ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিবাচক থাকুন

দুঃখ এড়ানো যাবে না, তবে মনোভাব ঠিক রাখলে সুখ ধরা দেয়।
তিনি বলেন, “আমি অতীত নিয়ে পড়ে থাকি না, ভবিষ্যতের ভয়েও থাকি না—আমি এই মুহূর্তটাই ভালোবাসি।”

৯. হাসুন, কারণ জীবন এক মহা কমেডি

৯ সপ্তাহের এক কমেডি ক্লাসে অংশ নিয়ে তিনি হাসতে শিখেছেন নতুনভাবে।
স্ক্রিপ্ট ফেলে দেওয়া, ভুল বলা, ভুলে যাওয়া—এসবই হয়ে উঠেছে নিখাদ আনন্দের উৎস।
“জীবনের হাস্যরস বুঝতে পারলে, বাঁচাটাও সহজ হয়”—এটাই তাঁর উপলব্ধি।

এই গল্প শুধু একজন বৃদ্ধার নয়, বরং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের অনন্য উদাহরণ।
বয়স যতই হোক, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা, সম্পর্ক আর কিছুটা হাসি থাকলেই জীবন হয়ে ওঠে আশ্চর্য রঙিন।