কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, এমনকি আপনি তা বুঝতেও পারবেন না। এই ছোটখাটো, প্রায়শই উপেক্ষা করা আচরণগুলি আপনার রক্তচাপের অস্থায়ী বা স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, যা সময়ের সাথে সাথে আপনাকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
১. অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া
“স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার সমৃদ্ধ খাবার এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশন এবং ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে, উভয়ই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়,” বলেছেন জন পি. হিগিন্স, এমডি, এমবিএ, ইউটি হেলথ হিউস্টনের ম্যাকগভর্ন মেডিকেল স্কুলের কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিনের অধ্যাপক।
এই খাবারগুলি সীমিত করুন এবং ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, উপকারী চর্বি এবং চর্বিহীন প্রোটিনের মতো পুষ্টিকর ঘন বিকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দিন।
২. উচ্চ পরিমাণে চিনি খাওয়া
“উচ্চ চিনি গ্রহণ ইনসুলিন প্রতিরোধের সূত্রপাত করে, যা সোডিয়াম ধারণকে উৎসাহিত করে এবং সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে,” জেএফকে ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট অ্যারন ফিনগোল্ড, এমডি বলেছেন। “ফলস্বরূপ প্রদাহ রক্তনালীর দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সঠিকভাবে প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস করে।”
তিনি আরও যোগ করেন যে ফ্রুক্টোজ বিশেষভাবে সমস্যাযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। গ্লুকোজের বিপরীতে, এটি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়, যা একটি বর্জ্য পদার্থ যা নাইট্রিক অক্সাইডের সাথে হস্তক্ষেপ করে, একটি অণু যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৩. পর্যাপ্ত পটাসিয়াম না খাওয়া
পটাসিয়াম আপনার শরীরকে সোডিয়াম নিঃসরণ করতে এবং রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে, যার ফলে রক্তচাপ কমে।
“কম পটাশিয়ামের মাত্রা তরল ধারণের কারণ হতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে,” ভিসিইউ হেলথের কার্ডিওলজির ভাইস চেয়ার, এমডি হেম ভরদ্বাজ বলেন। “কম পটাশিয়ামের ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবও বাড়তে পারে, যা রক্তনালীগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।”
এটি এড়াতে, শাকসবজি, মিষ্টি আলু, কলা এবং ডালের মতো উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাবার থেকে প্রতিদিন ৩,৫০০ থেকে ৫,০০০ মিলিগ্রাম (মিগ্রা) পটাসিয়াম গ্রহণের লক্ষ্য রাখুন।
৪. কিছু পরিপূরক বা ওষুধ গ্রহণ
হিগিন্সের মতে, অনেক ওভার-দ্য-কাউন্টার পণ্য আপনার রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে বা আপনার শরীরে জল ধরে রেখে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে বা আরও খারাপ করতে পারে।
আপনি যদি নিম্নলিখিত ওষুধ গ্রহণ করেন তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন:
- উদ্দীপক বা ক্যাফেইনযুক্ত ওষুধ যেমন ADHD ঔষধ বা ওজন কমানোর সম্পূরক
- সিউডোএফেড্রিন এবং ফেনাইলেফ্রিনের মতো ডিকনজেস্ট্যান্ট
- আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিনের মতো NSAIDs
- কর্টিকোস্টেরয়েড
- কোকেন এবং মেথামফেটামিনের মতো অবৈধ ওষুধ
- জিন্সেং, লিকোরিস এবং এফেড্রার মতো ভেষজ সম্পূরক
৫. চাপ অনুভব করা
“কাজ, সম্পর্ক বা আর্থিক উদ্বেগের কারণে দীর্ঘস্থায়ী চাপ কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণকে ট্রিগার করে, হরমোন যা রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে এবং হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে,” ফিনগোল্ড বলেন
সময়ের সাথে সাথে চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসম্পন্ন ঘুম এবং অ্যালকোহল সীমিত করা এবং ধূমপান এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলিকে অগ্রাধিকার দিন। আপনার উপভোগ্য কার্যকলাপের জন্য সময় বের করা আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতেও একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে।১
৬. প্রচুর প্রস্রাব করা
"ডায়াবেটিসের মতো অবস্থার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, যা ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে," ভরদ্বাজ বলেন।
একইভাবে, গবেষণা থেকে জানা যায় যে, হঠাৎ প্রস্রাব করার তাগিদ দেখা দিলে অতিরিক্ত সক্রিয় মূত্রাশয় - সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপের বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিতে পারে, যা রক্তচাপ বৃদ্ধির সাথে যুক্ত। এই চাপের প্রতিক্রিয়া রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে এবং হৃদস্পন্দনকে ত্বরান্বিত করে, যা রক্তচাপ বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
৭. ব্যথা অনুভব করা
মাথাব্যথা, আঘাত, অথবা আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যাই হোক না কেন, ব্যথা আপনার স্নায়ুতন্ত্রকেও ট্রিগার করে এবং আপনার রক্তচাপ বাড়ায়, ফিনগোল্ড বলেন।
“ব্যথা-রক্তচাপের সংযোগ একটি চ্যালেঞ্জিং চক্র তৈরি করে: উচ্চ রক্তচাপ মাথাব্যথাকে আরও খারাপ করতে পারে, অন্যদিকে মাথাব্যথার ব্যথা রক্তচাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়,” তিনি বলেন।
ব্যথার চিকিৎসা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৮. ঘুম কমানো
“সাত ঘণ্টারও কম সময় ধরে ভালো ঘুম হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত করে এবং রক্তচাপ সরাসরি বাড়ানোর চাপের পথগুলিকে সক্রিয় করে,” ফিনগোল্ড বলেন।
প্রকৃতপক্ষে, গবেষণা দীর্ঘস্থায়ী দুর্বল ঘুম, বিশেষ করে স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো অবস্থা থেকে, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধী হওয়ার সাথে সম্পর্কিত।
৯. অতিরিক্ত মদ্যপান
হিগিন্স বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে এবং রক্তনালীর কার্যকারিতা হ্রাস করে তীব্রভাবে এবং সময়ের সাথে সাথে আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই সমস্যাগুলি এড়াতে, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশকৃত নির্দেশিকা অনুসরণ করুন: পুরুষদের জন্য প্রতিদিন দুটির বেশি পানীয় এবং মহিলাদের জন্য একটি পানীয় পান করা উচিত নয়।
১০. ধূমপান
প্রতিবার সিগারেটের ঝাঁকুনি সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে রক্তচাপের অস্থায়ী বৃদ্ধি ঘটায়। সময়ের সাথে সাথে, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর এই বারবার চাপ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে শক্ত ধমনী এবং দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ।
১১. খুব বেশি বসে থাকা
হিগিন্স বলেন, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ওজন বৃদ্ধি, স্নায়ুতন্ত্রের সক্রিয়তা এবং রক্তনালীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়, যা রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনাকে এই সমস্যাগুলি এড়াতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে নিয়মিত কার্ডিও কার্যকলাপ সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রিডিং গড়ে 5 থেকে 7 mmHg কমাতে পারে।
সূত্র: https://www.verywellhealth.com/everyday-habits-that-are-spiking-blood-pressure-11748528
