ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কেন হয়?

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ১৩ জুন ২০২৫

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কেন হয়?

ছবি:সংগৃহীত

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন এমন একটি অবস্থা, যেখানে রক্ত ধমনীর দেওয়ালে অত্যধিক চাপ তৈরি করে। এটি যদি নিয়মিতভাবে বেশি থাকে, তবে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়, যেমন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ক্ষতি ইত্যাদি।

অনেক কারণ এই রোগের পেছনে দায়ী — কিছু প্রতিরোধযোগ্য, আবার কিছু আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নিচে উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ কারণগুলো ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. বয়সজনিত ধমনী কঠোরতা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধমনীগুলো কম লচকদার হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। প্রতিরোধে:

  • নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
  • হার্ট-সুস্থ খাবার খান
  • খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • প্রয়োজনে ডাক্তারি পরামর্শে ওষুধ নিন

২. অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
ডায়েট উচ্চ রক্তচাপের একটি বড় কারণ। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা অতিরিক্ত লবণ ও অ্যাডিটিভ রক্তচাপ বাড়ায়। করণীয়:

  • দৈনিক লবণ ২,৩০০ মি.গ্রা.-এর কম রাখুন (ঝুঁকিপূর্ণ হলে ১,৫০০ মি.গ্রা.)
  • কলা, বিনস, পালং শাক ইত্যাদি পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান
  • ফ্রেশ ও ঘরে তৈরি খাবার বেছে নিন

৩. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
শরীরচর্চার অভাবে ওজন বাড়ে, বিপাকক্রিয়া কমে যায় — দুটোই রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। করণীয়:

  • হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার করুন প্রতি সপ্তাহে কয়েক দিন
  • প্রতি ঘণ্টায় একবার উঠে হাঁটুন
  • সপ্তাহে অন্তত দুইবার স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করুন

৪. অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা
ওজন বেশি হলে হৃদয়কে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে রক্তচাপ বাড়ে। করণীয়:

  • স্বাস্থ্যসম্মত ওজন কমানোর পরিকল্পনা করুন
  • পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • প্রয়োজনে ওজন কমানোর জন্য ওষুধ নিন

৫. দীর্ঘস্থায়ী রোগ
ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, স্লিপ অ্যাপনিয়া — এসব রোগ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়। করণীয়:

  • ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করুন
  • কিডনির যত্ন নিন (লো-সোডিয়াম ডায়েট, ACE ইনহিবিটর ইত্যাদি)
  • ঘুমের সমস্যা থাকলে CPAP মেশিন ব্যবহার করুন

৬. বংশগত কারণ
উচ্চ রক্তচাপ পারিবারিক হতে পারে, কিন্তু ভালো অভ্যাস তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। করণীয়:

  • ছোটবেলা থেকেই ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন
  • হার্ট-সুস্থ ডায়েট মেনে চলুন
  • প্রয়োজনে নিয়মিত ওষুধ ও চেকআপ করুন

৭. দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস
স্ট্রেস হরমোন রক্তচাপ বাড়াতে পারে। করণীয়:

  • কাউন্সেলিং বা থেরাপি নিন
  • প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমান
  • মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং, যোগা বা ধ্যান করুন
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন

৮. অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ
অ্যালকোহল রক্তনালীর ক্ষতি করে ও রক্তচাপ বাড়ায়। করণীয়:

  • নিয়ন্ত্রণে রাখুন অ্যালকোহল গ্রহণ
  • সপ্তাহে কিছু "অ্যালকোহল-মুক্ত" দিন রাখুন
  • প্রয়োজনে সহায়তা নিন

৯. ধূমপান ও তামাক
নিকোটিন ধমনীর ক্ষতি করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়। করণীয়:

  • ধূমপান ছাড়ুন
  • নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করুন (প্যাচ, গাম ইত্যাদি)
  • দ্বিতীয় হাতের ধোঁয়া থেকেও দূরে থাকুন

১০. কিছু ওষুধ
কিছু ওষুধ রক্তচাপ বাড়াতে পারে, যেমন:

  • ব্যথানাশক (NSAIDs), যেমন আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রক্সেন
  • ঠান্ডাজনিত ওষুধে থাকা সিউডোএফেড্রিন
  • কিছু ডিপ্রেশনের ওষুধ (যেমন SNRI, MAOI)

করণীয়:

  • চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে বিকল্প খুঁজুন
  • ওষুধ বন্ধ করবেন না নিজের ইচ্ছায়

রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপার নিয়ম

  • মাপার আগে ৩০ মিনিট কফি, অ্যালকোহল বা ব্যায়াম পরিহার করুন
  • ২ বার মেপে গড় নিন
  • রেকর্ড করে চিকিৎসককে জানান

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
স্ট্রেস, ক্যাফেইন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারণে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এসব কারণ এড়িয়ে চললে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা কীভাবে পাবেন?
চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার শরীর অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা নিন। ওষুধ, জীবনযাত্রা পরিবর্তন বা দুটোর সংমিশ্রণ হতে পারে সমাধান।

উচ্চ রক্তচাপ নীরব ঘাতক — কোনো লক্ষণ না থাকলেও শরীরে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা, রেকর্ড রাখা ও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাই হচ্ছে সচেতন থাকার সবচেয়ে ভালো উপায়।

মারিয়া

×