
ছবি: সংগৃহীত
কিডনি আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা নীরবে কিন্তু নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে—বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে ফেলা, শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে। কিন্তু যখন এই অঙ্গগুলোর কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে তখন কী হয়?
দুঃখজনক হলেও সত্য, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি (CKD) প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ ছাড়াই শুরু হয়। আর যখন আমরা রোগটি ধরতে পারি, তখন অনেক সময় অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এজন্যই কিডনি রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো চেনা এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ কী?
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ একটি দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা, যেখানে কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। এটি পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পায়—হালকা সমস্যা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কিডনি ব্যর্থতা পর্যন্ত গড়ায়।
স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হলেও বেশিরভাগই তা বুঝে ওঠেন না প্রাথমিক লক্ষণ অনুপস্থিত থাকায়। এই রোগের সাধারণ কারণগুলো হলো—
-
ডায়াবেটিস
-
উচ্চ রক্তচাপ
-
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ
-
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
-
দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন বা বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব
প্রাথমিক উপসর্গগুলো চিনে ফেলা গেলে কিডনি ব্যর্থতার দিকে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হতে পারে। সচেতনতা এখানে হচ্ছে প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপ।
১. অবিরাম ক্লান্তি ও দুর্বলতা
প্রাথমিক যে লক্ষণটি সাধারণত দেখা যায়, সেটি হলো অকারণ ক্লান্তিভাব। কিডনি যথাযথভাবে বর্জ্য ছেঁকে ফেলতে না পারলে শরীরে টক্সিন জমে যায়। ফলে ভালোভাবে ঘুমিয়েও সারাদিন ক্লান্ত লাগতে পারে।
কারণ: কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় ইরিথ্রোপয়েটিন নামক হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং এতে করে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
যা লক্ষ করুন:
-
বিশ্রামের পরও অবসন্নতা
-
মনোযোগে ঘাটতি বা "ব্রেইন ফগ"
-
দৈনন্দিন কাজেও ক্লান্তিবোধ
২. মূত্রত্যাগের ধরনে পরিবর্তন
কিডনি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন মূত্রত্যাগের প্যাটার্নেও পরিবর্তন দেখা দেয়। যেকোনো অস্বাভাবিকতা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
যা দেখা যেতে পারে:
-
বারবার প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতে
-
ফেনাযুক্ত বা বুদবুদযুক্ত প্রস্রাব, যা প্রোটিন নির্গত হওয়ার লক্ষণ
-
প্রস্রাবে রক্ত (হেমাচুরিয়া)
-
প্রস্রাবের রঙ গা dark় বা অত্যন্ত হালকা
-
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
এই উপসর্গগুলো নিয়মিত দেখা দিলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রস্রাব পরীক্ষা এবং কিডনির কার্যক্ষমতা নির্ণয় জরুরি।
৩. পা, গোড়ালি বা হাত ফুলে যাওয়া
কিডনির অসুস্থতার আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হলো শরীরে তরল জমে গিয়ে ফোলা (ইডিমা) দেখা দেয়া। কিডনি ঠিকমতো অতিরিক্ত লবণ ও পানি নিঃসরণ করতে না পারলে তা শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে যায়।
যেসব জায়গায় ফোলা দেখা দিতে পারে:
-
গোড়ালি ও পা (বিশেষ করে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে)
-
হাত ও আঙুল
-
চোখের নিচে, বিশেষ করে সকালে
তবে এই ফোলা হার্ট বা লিভারের সমস্যার লক্ষণও হতে পারে, তাই নিজে থেকে ধারণা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. শ্বাসকষ্ট
অনেকেই জানেন না যে, কিডনি রোগ থেকেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক সময় এটি অ্যাজমা, স্থূলতা বা দুশ্চিন্তার কারণে ভেবে উপেক্ষা করা হয়।
সম্ভাব্য কারণ:
-
ফুসফুসে তরল জমে যাওয়া
-
রক্তশূন্যতা, কারণ কম রক্তকণিকা কম অক্সিজেন বহন করে
-
টক্সিন জমে শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা
হঠাৎ করে বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তা অবহেলা করা ঠিক নয়।
৫. বমি ভাব ও ক্ষুধামান্দ্যতা
কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরে বর্জ্য জমে গিয়ে হজমের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে করে ঘন ঘন বমি ভাব, খাওয়ার প্রতি অনীহা ও মুখে ধাতব স্বাদ তৈরি হতে পারে।
যা লক্ষণ হতে পারে:
-
ঘন ঘন গা গুলানো বা বমি
-
মুখে তিক্ত বা ধাতব স্বাদ
-
খাবারের আগ্রহ কমে যাওয়া বা না খাওয়া
এই সমস্যাগুলো অবহেলা করলে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে, যা কিডনি রোগকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ যা খেয়াল রাখা উচিত:
-
মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প হওয়া
-
উচ্চ রক্তচাপ
-
ত্বকে চুলকানি
-
ঘুমের সমস্যা
-
মুখে দুর্গন্ধ (ইউরেমিক ফেটর)
কখন কিডনি পরীক্ষা করাবেন?
নিচের যে কোনো একটি উপসর্গ বা অবস্থা থাকলে, কিডনির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত—
-
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ থাকলে
-
পরিবারের কারো কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলে
-
আপনার বয়স ৬০ বা তদূর্ধ্ব হলে
-
উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো নিয়মিত অনুভব করলে
একটি সাধারণ রক্ত (eGFR) এবং প্রস্রাব (ACR) পরীক্ষা কিডনি রোগের প্রাথমিক ধাপেই সনাক্ত করতে পারে।
প্রতিরোধ ও যত্নের উপায়
আপনি যদি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, তবুও কিছু অভ্যাস আপনাকে রক্ষা করতে পারে—
-
রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা
-
লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
-
পর্যাপ্ত পানি পান
-
ধূমপান পরিহার এবং অ্যালকোহল সীমিত রাখা
-
নিয়মিত শরীরচর্চা
-
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষত যাদের অন্যান্য অসুখ রয়েছে
প্রাথমিক পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া কিডনি রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায়।
বিশ্বস্ত কিডনি চিকিৎসা—নীলম হাসপাতালে
আপনি বা আপনার কোনো প্রিয়জন যদি ক্রনিক কিডনি ডিজিজের লক্ষণ অনুভব করেন, তবে অপেক্ষা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। নীলম হাসপাতাল দিচ্ছে আধুনিক নেফ্রোলজি সেবা ও রোগী-প্রথম নীতিতে চিকিৎসা।
আমাদের অভিজ্ঞ টিম প্রদান করে—
-
পূর্ণাঙ্গ কিডনি ফাংশন পরীক্ষা
-
ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা পরিকল্পনা
-
খাদ্য ও জীবনধারাভিত্তিক পরামর্শ
-
ডায়ালাইসিসসহ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি যত্ন
-
বিশেষজ্ঞ নেফ্রোলজিস্ট ও সহানুভূতিশীল স্টাফের সহায়তা
আধুনিক প্রযুক্তি, নির্ভরযোগ্য টেস্টিং সুবিধা ও আন্তরিক চিকিৎসার মাধ্যমে নীলম হাসপাতাল কিডনি রোগের নির্ভরযোগ্য সহচর।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অবহেলা করলে তা চিরস্থায়ী ও জটিল অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি নিজের কিডনি ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে পারেন।
আবির