
ছবি: প্রতীকী
সম্প্রতি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেট। তাঁর জীবনের নানা সময়ের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা আবার আলোচনায় এসেছে। এর বেশিরভাগই ব্যবসা সংক্রান্ত, তবে একটি সহজ-সরল কথার গভীরতা এতটাই বেশি যে তা সবার জন্যই প্রযোজ্য—চাকরি হোক, সম্পর্ক হোক বা মানসিক স্বাস্থ্য।
নিউরোসায়েন্সও বলছে, ওয়ারেন বাফেট ঠিকই বলেছেন—আমরা নেতিবাচকতায় অতিরিক্ত মনোযোগ দিচ্ছি। আর এটাই আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।
এক তরুণ একদিন বাফেটকে জিজ্ঞাসা করেন, ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার উপায় কী? জবাবে বাফেট বলেন, “তোমার জীবনে যা ভালো ঘটেছে, সেগুলোর ওপর ফোকাস করো, খারাপ জিনিস তো ঘটবেই। কিছু খারাপ ঘটনা সত্ত্বেও জীবন দারুণ হতে পারে।’
শোনার পর মনে হতে পারে, মা বা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের মুখে শোনা ‘পজিটিভ থাকার’ পরামর্শের মতোই—তেমন কিছু নতুন নয়। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, এটা নিছক উপদেশ না, আমাদের মস্তিষ্কের গঠনগত সীমাবদ্ধতার সঠিক ব্যাখ্যা।
আমাদের মস্তিষ্ক কেন নেতিবাচকতায় ঝুঁকে পড়ে?
মানব মস্তিষ্ক আসলে প্রাকৃতিকভাবে নেতিবাচক চিন্তার প্রতি বেশি সংবেদনশীল। সুইংয়ে পড়ে থাকা গাছের পাতা দেখে প্রাচীন মানুষ ভাবতো—সিংহ না তো? তখন জীবন বাঁচানোই ছিল প্রধান লক্ষ্য। তাই আনন্দ নয়, ভয় ছিল টিকে থাকার চাবিকাঠি।
এ কারণে নেতিবাচক ঘটনা বা আশঙ্কা মস্তিষ্কে বেশি জায়গা নেয়। গবেষণা বলছে, নেতিবাচক ছবি বা স্মৃতি মস্তিষ্কে বেশি জোরালো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যেটা ইতিবাচক ঘটনার ক্ষেত্রে হয় না।
‘সোজা কথা হলো, খারাপ সবসময় ভালো থেকে বেশি শক্তিশালী’, বলছেন নিউরোসায়েন্টিস্ট ক্যাথরিন নরিস।
নেতিবাচক মনোভাবের বিপদ কী?
- একটা ছোট অপমান সারাদিন মাথায় ঘোরে, অথচ প্রশংসা ভুলে যাই মুহূর্তেই।
- এর ফলে শুধু মন খারাপ হয় না, অনেক সময় উদ্বেগ ও ডিপ্রেশনে রূপ নেয়।
- সম্পর্কেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। আমরা প্রিয় মানুষের ভালো দিকগুলোকে উপেক্ষা করে শুধু খারাপ দিকেই মনোযোগ দিই—এতে সম্পর্ক দুর্বল হয়।
- এমনকি ক্যারিয়ারেও নেতিবাচক চিন্তা বড় বাধা। জেফ বেজোস বলেছেন, ‘নেতিবাচক চিন্তায় আমরা ঝুঁকি নিতে ভয় পাই।’ বিজ্ঞান বলছে, এতে বড় স্বপ্ন সহজেই ছেড়ে দিই।
তাহলে কীভাবে বাফেটের পরামর্শ কাজে লাগাবেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি মূল কৌশল কাজে লাগাতে হবে:
১. নেতিবাচক চিন্তা → কার্যকর কাজ
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ওয়েন্ডি সুজুকি বলেন, উদ্বেগে যখন মাথায় ‘what if’ তালিকা আসে, তখন সেটিকে একটি ‘to-do’ তালিকায় পরিণত করুন।
২. মনকে ইতিবাচকের দিকে সরিয়ে দিন
- গ্র্যাটিচিউড জার্নাল বা কৃতজ্ঞতার তালিকা লিখুন।
- সম্পর্কের ভালো দিকগুলো মনে করিয়ে দেয় এমন তালিকা তৈরি করুন।
- প্রতিটি নেতিবাচক ঘটনার বিপরীতে পাঁচটি ইতিবাচক ঘটনা তৈরির চেষ্টা করুন—এটা আপনার মস্তিষ্ককে পুনর্গঠিত করতে সাহায্য করবে।
বিজ্ঞান বলছে, ওয়ারেন বাফেটকে শুনুন!
আমাদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে নেতিবাচক চিন্তার দিকেই ঝুঁকে থাকে—এটা একেবারে ঠিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রবণতা যদি অন্ধভাবে অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি নিজেই নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে উঠবেন।
তাই মনে রাখুন বাফেটের সহজ অথচ গূঢ় কথাটি, ‘তোমার জীবনে যা ভালো ঘটেছে, সেগুলোতে ফোকাস করো। খারাপ কিছু থাকলেও জীবন দারুণ হতে পারে।’
সূত্র: https://www.inc.com/jessica-stillman/warren-buffett-says-youre-too-focused-on-the-negative-heres-the-neuroscience-showing-hes-right/91186038
রাকিব