
ছবি: সংগৃহীত
নারী যত উচ্চ পদেই থাকুক না কেন, ঘরের কাজ যেন এখনো তাঁর জন্যই বরাদ্দ—এটাই আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। কর্মজীবী নারীরা বাইরে দিনভর কঠোর পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরেও বিশ্রামের সুযোগ পান না। অফিসের পোশাক খুলে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে তাঁদের ছুটতে হয় রান্নাঘরে। সংসারে নারীর অবসর নেই। তার কর্মঘণ্টা নেই।
অন্যদিকে, অনেক পুরুষ অফিস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন, বাড়ি ফিরে টিভি দেখেন, আয়েশ করে চা পান করেন। কিন্তু ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করার কথা তাদের মাথায় আসে না। ঘরের কাজে ছেলে তার স্ত্রীকে সাহায্য করছে এমন দৃশ্য দেখার চাইতে মরে যাওয়া ভালো মনে করেন অনেক মায়েরা। আমাদের সামাজিক বিশ্বাসের জায়গা হলো-ঘরের কাজ শুধুমাত্র নারীদেরই কাজ।ঘরের কাজ করলে অনেক সময় পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
কিন্তু এই বিশ্বাসের জায়গাটা ভাঙ্গা দরকার। আমরা একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে বসবাস করি। আমাদের সমস্যা আমরা ইসলাম ধর্মটাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করি। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বলতে শোনা যায়- নারীদের প্রধান কাজ সন্তান জন্মদান, ঘরের কাজ করা,স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। কিন্তু কোরআনে যতবার নারীর অধিকারের কথা এসেছে ততোবার পুরুষের কর্তব্যের কথা এসেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি যে দায়িত্ব ও অধিকার লাভ করে, তা কেবল শরিয়তের নির্ধারিত সীমার মধ্যেই গ্রহণযোগ্য।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্ত্রীর দায়িত্বের ভিতরে রয়েছে-স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে চলা, স্বামীর নির্ধারিত বাসস্থানে অবস্থান করা, স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাইরে না যাওয়া, স্বামীর সম্পদ ও সন্তান রক্ষা করা, নিজের পবিত্রতা বজায় রাখা, স্বামীর যৌন চাহিদা পূরণে সহযোগিতা করা
এর বাইরে স্ত্রীকে রান্নাবান্না বা গৃহস্থালির অন্য কোনো কাজে বাধ্য করা শরিয়ত অনুযায়ী বৈধ নয়। স্ত্রী যদি গৃহস্থালির করতে অস্বীকৃতি জানান, তাকে জোর করার অধিকার স্বামীর নেই। বরং স্বামীর উচিত ঘরের কাজে স্ত্রীর সঙ্গে হাত মেলানো, স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা। যেমনটি নবী করিম (সা.) নিজে করতেন।
ঘরের কাজ শুধু নারীরা করবেন, এই চিত্রটি যে কতটা অমানবিক, তা ধীরে ধীরে কিছু পুরুষ বুঝতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কেউ কেউ ঘরের কাজে হাত লাগাচ্ছেন, স্ত্রীকে সহযোগিতা করছেন। এই ইতিবাচক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলছে।
ঘরের কাজ কোনো একক ব্যক্তির নয়—এটি নারী-পুরুষ উভয়েরই যৌথ দায়িত্ব। যখন পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে দাম্পত্য জীবন পরিচালিত হয়, তখন অনেক জটিলতাই সহজে সমাধানযোগ্য হয়ে ওঠে। নারীকে আগে মানুষ হিসেবে সম্মান দেওয়া জরুরি। তার শ্রম ও অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, এবং ঘরের কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ন্যায়সংগত ও প্রয়োজনীয়। মনে রাখতে হবে, একটি সুস্থ ও সুন্দর পারিবারিক জীবনের জন্য স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের সব সদস্যের সহযোগিতা অপরিহার্য।
মুমু