
সংগৃহীত
২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষে এসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আশাব্যঞ্জক চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গেল বছরের তুলনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক সহায়তার বৃদ্ধির ফলে। তবে রিজার্ভের প্রকৃত অবস্থা নির্ভর করছে কোন মানদণ্ডে তা মূল্যায়ন করা হচ্ছে তার ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি গ্রস রিজার্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে সকল উৎস থেকে আসা ডলার অন্তর্ভুক্ত থাকে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) কর্তৃক নির্ধারিত হিসাব (বিপিএম ৬) অনুযায়ী, যেখানে কেবল ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ধরা হয়, সে অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১.৮৪ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে নিট রিজার্ভ অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারযোগ্য, তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারে।
বিশ্লেষকদের মতে, চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক রিজার্ভে ঊর্ধ্বগতির পেছনে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক কাজ করেছে:
- রেকর্ড রেমিট্যান্স: একক মাস হিসেবে মার্চ ২০২৫-এ এসেছে সর্বোচ্চ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স।
- বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ বৃদ্ধি: হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো বেড়েছে।
- আন্তর্জাতিক ঋণ ও সহায়তা: IMF, ADB ও বিশ্বব্যাংক থেকে এসেছে নতুন ঋণ ও তহবিল সহায়তা।
- আমদানি নিয়ন্ত্রণ: ডলার সংকট মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমিয়ে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই রিজার্ভের পরিমাণ দিয়ে আগামী তিন মাসের আমদানি ব্যয় অনায়াসে মেটানো সম্ভব, যা একটি অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশের জন্য স্বাভাবিক এবং আশাব্যঞ্জক অবস্থা।
তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, নিট রিজার্ভের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল গ্রস রিজার্ভ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। কারণ অনেক সময় রিজার্ভের বড় অংশ ঋণ বা প্রতিশ্রুত অর্থ হয়ে থাকে, যা ব্যবহারযোগ্য নয়।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি স্বস্তিদায়ক হলেও, এটি টেকসই কিনা তা নির্ভর করবে রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সরকারি ব্যয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর। তবে অর্থবছরের শেষ দিনে পাওয়া এই ইতিবাচক চিত্রে অর্থনীতি নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখছেন বিশ্লেষকরা।
হ্যাপী