ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

৩ আগস্টে উত্তপ্ত সাধনপুর-বাণীগ্রাম

কোটা আন্দোলনের ঢেউয়ে গণঅভ্যুত্থান

কে.এম.মুরাদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। 

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৪, ১ জুলাই ২০২৫

কোটা আন্দোলনের ঢেউয়ে গণঅভ্যুত্থান

২০২৪ সালের বহুল আলোচিত কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তার এক জ্বলন্ত অধ্যায় রচিত হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রামে। আন্দোলনের ঢেউ রাজধানী থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, আর তারই ধারাবাহিকতায় ৩ আগস্ট ২০২৪, এই তারিখটি হয়ে ওঠে ইতিহাসের অংশ — এক উত্তপ্ত অভ্যুত্থানের দিন।

সেদিন দুপুর থেকেই বিক্ষুব্ধ জনতা ও ছাত্রসমাজ দলে দলে ছুটে আসে সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রামের দিকে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪ নম্বর ওয়ার্ডসংলগ্ন এলাকায় জমায়েত হতে থাকে হাজারো মানুষ। তাদের হাতে ছিল পোস্টার, ব্যানার, এবং কণ্ঠে ছিল স্লোগানের আগুন।

আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিল তৎকালীন সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের শিবির নেতাদের নেতৃত্বে বিকেল ৩টায় শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল, যা মুহূর্তেই রূপ নেয় উত্তাল গণপ্রতিরোধে। জনতার উপস্থিতি ও ক্ষোভে বাণীগ্রাম এলাকা এক বিশাল সমাবেশস্থলে পরিণত হয়।

এই আন্দোলন শুধু একটি দাবির পক্ষে নয়, বরং ছিল দীর্ঘদিনের শাসনব্যবস্থা, দলীয় নিয়ন্ত্রণ, ও গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ। স্থানীয় জনতার ভাষ্যমতে, এদিন সাধনপুর ছিল ‘একটা জাগ্রত বিদ্রোহের অগ্নিকুণ্ড’, যার প্রতিধ্বনি পড়ে গোটা উপকূলীয় অঞ্চলে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই অভ্যুত্থানটি ছিল এমন এক সময়ে, যখন আওয়ামী লীগ সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপরীতে কঠোর অবস্থান নেয় এবং দেশে বিরোধী সংগঠনগুলোর উপর দমননীতি চালু রাখে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাধনপুরের ঘটনাটি হয়ে ওঠে জাতীয় আন্দোলনের একটি সাহসী ও ব্যতিক্রমী উদাহরণ।

৩ আগস্ট ২০২৪ – এই তারিখটি শুধু একটি আন্দোলনের দিন নয়, বরং একটি ভূমিকম্পের মতন রাজনৈতিক বার্তা, যা জানান দেয় — প্রত্যন্ত গ্রামের মাটিও যখন জ্বলে ওঠে, তখন রাজধানীর প্রাসাদগুলো কাঁপতে বাধ্য হয়।

Jahan

×