নিয়ম না মানলে শাড়ি ক্যানসার
বাঙালি নারীর জন্য শাড়ি যেন আবেগের নাম। বাঙালির দেখাদেখি অবাঙালিরাও এখন আগ্রহ প্রকাশ শাড়ির প্রতি। এইদিকে শাড়ি পরলে নাকি ক্যানসার হবে এমন তথ্যের তান্ডব।
শাড়ি পরলে যদি খুলে যায় এটাই থাকে সবচেয়ে বড় ভয়। সেই ভয়ে কষে পেটিকোটের দড়ি বাঁধেন অনেকে। যতক্ষণ শাড়ি পরে থাকেন, ততক্ষণ তেমন কিছু টের না পেলেও বাড়ি ফিরে যখন বাঁধন আলগা করেন, তখন জ্বালা করতে থাকে। কারও আবার দড়ির বাঁধনের জায়গাটা অসম্ভব চুলকায়। দীর্ঘসময় ধরে পেটিকোটের দড়ির বাঁধা থাকে বলে ওই অংশে কালশিটে পড়ে যায় কারও কারও। দীর্ঘদিন ধরে এমনটা হতে থাকলে ঘা পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণের কাছে যা ‘শাড়ি বা ধুতি ক্যানসার’ নামে পরিচিত।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের ত্বকের ক্যানসারের মধ্যে এটিও একটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা’ বা সংক্ষেপে ‘এসসিসি’বলা হয়। শল্য চিকিৎসক এবং ক্যানসার কেয়ার প্রোগ্রামের পরামর্শদাতা চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘চামড়ায় যে কোষগুলো রয়েছে তাকেই বলা হয় স্কোয়ামাস সেল। সেই কোষগুলোতে কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটলে এবং হঠাৎ করে এরা বংশবিস্তার করতে শুরু করলে ত্বকের ওপর ঘা হতে শুরু করে।’
ত্বকের যে কোনো রকম অস্বস্তি বা সংক্রমণ এই ক্যানসারের কারণ হতে পারে। কোমরের ভাঁজে দীর্ঘ ক্ষণ শক্ত করে দড়ি বা গার্ডার চেপে বসে থাকলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। শুধু পেটিকোট পরলেই যে এমন সমস্যা হবে, তা নয়। শক্ত ইলাস্টিক দেওয়া প্যান্ট, অন্তর্বাস, ধুতি, লুঙ্গি— অর্থাৎ বাঁধন দিতে হয়, এমন পোশাক পরলেই ত্বকে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। দীপ্তেন্দ্রের কথায়, ‘শীতপ্রধান অঞ্চলে শরীর গরম রাখার জন্য সেখানকার বাসিন্দারা শরীরে হটপটের সেঁক দেন। সেখান থেকেও তো ত্বকে এক ধরনের ক্ষত তৈরি হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমনটা চলতে থাকলে সেখান থেকেও কিন্তু ক্যানসার হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা ‘কাংরি ক্যানসার’ নামে পরিচিত।
আবার, ধরুন ছোটবেলায় কারও হাত পুড়ে গিয়েছিল। ক্ষত শুকিয়ে গেলেও সেই অংশটিতে মাঝে মধ্যেই কেমন যেন অস্বস্তি হয়, চুলকায়। দীর্ঘদিন ধরে এমনটা হতে থাকলে সেই ক্ষতস্থানে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে। যা আসলে মার্জোলিন আলসার। সেই কারণেই সানস্ক্রিন মাখতে বলা হয়।’
এ ছাড়া, ত্বকের যে অংশ অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসে, সেখানেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। রোদ লেগে ত্বকে যে ক্যানসার হয় তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘পেজাল ক্যানসার’ বলা হয়। এই অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতেই খেলোয়াড়রা মুখে জিঙ্ক অক্সাইড মুখে মেখে খেলতে নামেন। দীপ্তেন্দ্র বলেন, ‘আবার শরীরে যদি হঠাৎ কোনো নতুন আঁচিল তৈরি হয়, তা আকারে বড় হতে শুরু করে কিংবা রক্ত বেরোতে শুরু করে, সেখান থেকেও কিন্তু ক্যানসার হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় যা ‘ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা’ নামে পরিচিত। তবে, জন্মগত জরুল বা আঁচিল থেকে এই ধরনের সমস্যা সাধারণত হয় না।
স্কোয়ামাস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণঃ
১. শরীরের কোনো অংশে দীর্ঘ ক্ষণ রক্ত চলাচল বন্ধ হলে ত্বকের রং পাল্টে যায়। এক্ষেত্রেও তেমনটা হতে হতে পারে। বাঁধন আলগা হওয়ার পর ওই নির্দিষ্ট জায়গা অসম্ভব চুলকাতে পারে।
২. দীর্ঘদিন ত্বকের নির্দিষ্ট জায়গায় বাঁধন দিতে দিতে সেই জায়গায় ঘা হয়ে যেতে পারে। অন্তর্বাসের গার্ডার ত্বকের ওপর চেপে বসে থাকলেও একই রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. প্রথমে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ঘা হওয়া, সেখান থেকে সংক্রমণ হলে তা ক্যানসারে পরিণত হতে সময় লাগে না। অনেকের ক্ষেত্রে কোমরের আশপাশে টিউমারও হতে পারে।
এই ধরনের সমস্যা নিরাময়ের উপায়ঃ
১. পেটিকোট পরলেও তার বাঁধন আলগা করে রাখতে হবে।
২. শরীরের নিম্নাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। দেহের সেই সব অংশে যাতে ঘাম না জমে, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
৩. প্রয়োজনে পেটিকোটের তলায় শেপঅয়্যার পরতে পারেন। যাতে বাঁধনের দাগ ত্বকের ওপর না পড়ে।
৪. নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস কেনার সময়ে কোমরের স্ট্র্যাপ দেখে কিনবেন। লক্ষ্য করবেন, তা যেন খুব সরু না হয়।
৫. দীর্ঘক্ষণ কষে পেটিকোটের দড়ি বেঁধে রাখার পর বাড়ি ফিরে ওই অংশ ভালো করে পরীক্ষা করতে হবে। ত্বকের রঙে কোনো বদল এলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিলা