ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফ্যাশনের মুখোশে বর্জ্যের ব্যবসা, দানের নামে চলছে পরিবেশ ধ্বংস

প্রকাশিত: ২১:০৪, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:১৪, ২৪ মে ২০২৫

ফ্যাশনের মুখোশে বর্জ্যের ব্যবসা, দানের নামে চলছে পরিবেশ ধ্বংস

পশ্চিমা দেশগুলোতে ফ্যাশন শিল্পের অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে সৃষ্ট পোশাক বর্জ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে "দান" বা "রিসাইক্লিং" এর নামে রপ্তানি করা হচ্ছে, যা বাস্তবে এক ধরনের "ওয়েস্ট ডাম্পিং" বা বর্জ্য ফেলা। এই প্রক্রিয়ায় আফ্রিকার দেশগুলো বিশেষ করে ঘানা, কেনিয়া, উগান্ডা এবং তানজানিয়া মারাত্মক পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

ঘানার কান্তামান্তো মার্কেট প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৫ মিলিয়ন পুরনো পোশাক গ্রহণ করে, যার মধ্যে প্রায় ৪০% অবিক্রয়যোগ্য এবং শেষ পর্যন্ত খোলা ডাম্পিং সাইটে ফেলা হয় বা নদী ও সমুদ্রের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে । কেনিয়ার গিকোম্বা মার্কেটেও একই চিত্র দেখা যায়, যেখানে প্রতিদিন ১৫০-২০০ টন টেক্সটাইল বর্জ্য জমা হয় ।

এই বর্জ্য পোশাকগুলোর অনেকাংশ সিন্থেটিক ফাইবার যেমন পলিয়েস্টার দিয়ে তৈরি, যা শত শত বছরেও পচে না এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক আকারে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে । বর্জ্য পোশাক নদী ও ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ করে বন্যা সৃষ্টি করে এবং খোলা জায়গায় পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া সৃষ্টি হয়, যা স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ।

ঘানার "The Or Foundation" এবং কেনিয়ার "Africa Collects Textiles" এর মতো সংগঠনগুলো বর্জ্য পোশাক পুনঃব্যবহার ও আপসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে নতুন ফ্যাশন পণ্য তৈরি করছে । তবে এই উদ্যোগগুলো সমস্যার পরিমাণের তুলনায় খুবই সীমিত।

Greenpeace এবং অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই পরিস্থিতিকে "waste colonialism" হিসেবে অভিহিত করছে এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি Extended Producer Responsibility (EPR) আইন প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ।

বাংলাদেশও পুরনো পোশাক আমদানির মাধ্যমে এই বর্জ্য প্রবাহের অংশ হতে পারে। যদি এই প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, তবে আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্পের প্রতিযোগিতায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়

  • নীতিমালা প্রণয়ন: পুরনো পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও মান নির্ধারণ।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি: জনসাধারণকে ফ্যাশন বর্জ্যের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে অবহিত করা।
  • স্থানীয় উদ্যোগ: আপসাইক্লিং ও পুনঃব্যবহারযোগ্য পোশাক উৎপাদনে স্থানীয় উদ্যোগ ও শিল্পকে উৎসাহিত করা।

এই সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, কঠোর নীতিমালা এবং স্থানীয় সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য।

সায়মা

×