ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যখন বাজল সানাই

রেজা ফারুক

প্রকাশিত: ০১:১২, ১৪ নভেম্বর ২০২২

যখন বাজল সানাই

চলছে হেমন্ত এরপরেই আসবে শীত ও বসন্তকাল

চলছে হেমন্ত এরপরেই আসবে শীত ও বসন্তকাল। বলা চলে এ তিনটি ঋতুই হলো বিয়ের জন্য উপযুক্ত সময়। ইতোমধ্যে আসন্ন ত্রয়ী এ ঋতুকে সামনে রেখে ধূমধাম বিয়ের আয়োজনের নানা প্রস্তুতি সবার দৃষ্টিতে এসেছে। প্রাণ ব্যাকুল করা প্রাকৃতিক এ আবহ শরীরের প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্য এক আবেশের সঞ্চার করে। বাতাসে হাসনাহেনার মিষ্টি গন্ধ। জানালার গ্রিলে মুখ রেখে আকাশ দেখা।

রাত্রির নিঃসঙ্গ তারাঙ্কিত দিগন্তের দিকে চোখ রাখতেই যেন স্বপ্নের রঙে আঁকা কারও মায়াবি মুখচ্ছবি হৃদয়পটে ভেসে ওঠে। সে মুখ না হয় অচেনা। তবুও তো মনের আর্শিতে উজ্জ্বল আভায় ঝিলিক দিয়ে উঠল স্বপ্নজাগা মুখের অপরূপ আদলটা। মনের যখন এ অবস্থা। প্রকৃতিতে যখন মোহনীয় এমন আমেজ জড়িয়ে যায়। তখনই তো দূরে অনেক দূর থেকে ভেসে আসা সানাইয়ের সুরের মূর্ছনার মতো একটা মিহি সুর বুঝি অলক্ষ্যে বেজে উঠে হৃদয়কে চঞ্চল করে তোলে।
মন ও প্রকৃতির এই রেশ ধরেই জগত সংসারে একজন পুরুষ ও একজন নারীর সন্ধি হয়। বিয়ে হয়। সারা জীবনের জন্য একজন আরেকজনের সঙ্গী হয়। সুখে-দুঃখে, ভালোবাসায়, ভালোলাগায় একে অপরের জীবনের মায়ায় জড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টির আদি থেকে এখন পর্যন্ত চলে আসছে একজন পুরুষের সঙ্গে একজন নারীর বিয়ে বন্ধনের প্রথা ও রীতি।

মানুষের জীবনে বিয়ে যেমন অপরিহার্য, অনস্বীকার্য একটা বিষয়- তেমনি সময়ের বিবর্তনে এই বিয়ের আঙ্গিকেও এসেছে রূপবদল। প্রাচীন রীতিকে ধারণ করে আধুনিকতার মোড়কে আবৃত করে বিয়ের আদলটাকে আরও আকর্ষণীয় এবং আনন্দঘন করার প্রেক্ষাপটটা হয়ে উঠেছে অসামান্য নান্দনিক আর দৃষ্টিনন্দন।
পরিবর্তনের এই ধারায় বিয়ের সামগ্রিক চিত্রটা বদলে গিয়ে পোশাকি আবহটাও বিশেষভাবে দেখার মতো জমকালো আর বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে। সাজসজ্জা, পোশাক, কাঁচাফুলের সৌরভ, আলোকোজ্জ্বলতা, পরিবার, পরিজন, আত্মীয়-বন্ধুর সমাগমে বিয়ের পুরো পরিবেশটাই যেন মুখর হয়ে ওঠে।  অনন্তকাল ধরে চলে আসা এই আয়োজনে রয়েছে একেক রকম উৎসবের আমেজ।

নগর কিংবা শহর অঞ্চলে বর-কনে, বিয়ে বাড়ি, আয়োজনের যে ধরন, গ্রামের ধরন একই রকম হলেও বর্ণাঢ্য হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাটা যেন একটু বাদ সাধে উৎসবের ছন্দে। কেননা, শহরে বরযাত্রীর ফুলে সাজানো গাড়ি সহজে কনের বাড়িতে যাওয়ার সুব্যবস্থা থাকলেও গ্রামে হেঁটে, রিকশা, লঞ্চ কিংবা নৌকা, ট্রলার ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে’। তবে কোথাও কিন্তু আনন্দের একটুও কমতি নেই।

বর্তমানে কেনাকাটার পর্বটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর এ গুরুত্ব উপলব্ধি করেই ফ্যাশন হাউসগুলো মাঠে নেমেছে বেশ জোরেশোরেই। গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে বিয়ে, বৌভাত, ফিরানি সব অনুষ্ঠানেরই যাবতীয় সরঞ্জামাদির পসরা সাজিয়েছে তারা, তবে সব কেনাকাটার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কনের শাড়ি এবং বরের শেরওয়ানি। এ দুটো আইটেম কেনাকাটায় বর-কনে উভয়পক্ষই বেশ চুজি হয়ে থাকে। এ কারণে ড্রেস ডিজাইনাররাও এ ব্যাপারে খুবই সচেতন।

ক্রেতাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা থাকে ডিজাইনারদের। কনের শাড়ি বেশ কালারফুল এবং গর্জিয়াস ভাব ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস থাকে। স্টোন, মেটাল এবং কারচুপি কাজের মাধ্যমে শাড়িকে আকর্ষণীয় করা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এপ্লিকের কাজও চোখে পড়ে। বেনারসি পল্লী, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, ধানম-ি হকার্স মার্কেটে ঢুঁ মারলে পছন্দসই শাড়ি মিলবে। এছাড়াও অভিজাত অন্য শপিংমলগুলোতেও দেখা মিলবে বিয়ের শাড়ি, ডিজাইন, কাপড় ও কাজের ওপর মূল্য নির্ভর করে।

কনের শাড়ি ৪ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। লাখ টাকার উপরেও শাড়ি পাওয়া যাবে ঢাকাতেই। শেরওয়ানিও ঠিক তাই। অর্ডার দিয়ে বানাতে গেলে অর্ডারের ধরন অনুযায়ী দাম পড়বে। দেশী দশ-আড়ং, লুবনান, শপার্স ওয়ার্ল্ড জারা, ভাসাবিতেও পছন্দের শেরওয়ানি মিলবে। ৫ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা দামেরও রয়েছে। এখন বেশকিছু ফ্যাশন হাউস কমপ্লিট ব্রাইডাল প্যাকেজ অফার করছে। অর্থাৎ এক জায়গায় বিয়ের যাবতীয় কেনাকাটা করা যাবে। বিয়ে উৎসবের রঙিন আকাশকে আরও রঙিন করে তোলে কেনাকাটার পর্বটি, কারণ এই কেনাকাটাতেও রয়েছে অনাবিল আনন্দ।
আকদের সাজ : দিন যতই গড়াচ্ছে মানুষ তত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর এ ব্যস্ততা নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার অবসরটুকু দেয় না। যে কারণে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে মেয়েরা ভিড় জমায় বিউটি পার্লারে। যার ফলে আকদের সাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে পার্লারে। তবে আকদের সাজ, গায়ে হলুদ-বিয়ে কিংবা বৌভাতের তুলনায় হাল্কা হয়ে থাকে। সাজের সব উপকরণ ব্যবহৃত হলেও ভারি সাজের প্রভাব তাতে থাকে না। একটু খোলা চুল কিংবা কার্লি স্টাইলে রাখা হয় চুলের সাজ। শাড়ি এবং জুড়ির ওপর বেজ মেকআপ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ আকদে দেখে সবাই ধারণা করে নেয় বিয়ের সাজে কনেকে কেমন লাগবে।
হলুদের সাজ : হলুদের সাজে এক ধরনের ফ্লাওয়ারিশ ভাব লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ হলুদের প্রতিটি পদক্ষেপে ফুলের প্রাধান্য বিদ্যমান। এ কারণেই হলুদের সাজে ফুলের প্রভাব লক্ষণীয়। হলুদে কনেকে সাজানো হয় ফুলের গহনায়। আর ফুলের গহনা কি রঙের তার ওপর নির্ভর করে হলুদের সাজ। সেই সঙ্গে শাড়ির রং তো রয়েছেই। কেউ বাসন্তি কিংবা গাড়ো হলুদ রঙের শাড়ি কিংবা হালকা হলুদ রঙের শাড়ি পরে থাকে। যে কারণে রং অনুযায়ী সাজও ভিন্ন হয়ে থাকে। হলুদে চোখের সাজ বলতে একটু লাইনার কিংবা কাজল টেনে দেয়া হয়। পাপড়িতে ফ্লাওয়ার বেজ হালকা শেড।
বিয়ে : প্রথাগত বিয়ের সাজের বাইরে এখন সাজানো হয় কনেকে। শাড়ি, গহনা এবং স্টেজ সবকিছুর বর্ণনা দেয়া থাকলে সাজটা হয় পারফেক্ট। সহজেই মানিয়ে যায় এবং দ্রুত দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। লুকটা হয়ে থাকে একদম ডিফারেন্ট। তবে এসব বিষয় না জানা থাকলে ট্রেডিশনাল মেকআপ অথবা শাড়ি গহনার ওপর বেজ করে মেকআপ করা হয়ে থাকে। থিম বেজ ছাড়া কেউ কেউ বিয়েতে মডার্ন লুক ডিমান্ড করে। তখন সেভাবেই সাজানো হয় কনেকে। এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে কনের চাহিদার ওপর।
বৌভাত : বিয়ে-শাদির আনুষ্ঠানিকতায় সবচেয়ে সুন্দর সাজ হয়ে থাকে বৌভাতে। কারণ বৌভাতে শাড়ি কিংবা গহনার রঙের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। যে কারণে সাজটাও হয় ডিফারেন্ট। এ পর্বে বর এবং কনে উভয়ই বেশ রিলাক্স মুডে থাকে। যে কারণে সাজের আবহটা বজায় থাকে। এ কারণেই পুরো অনুষ্ঠানেই এক ধরনের রিফ্রেশমেন্ট কাজ করে। বিয়ে এবং বৌভাতে চুলের সাজে বড় রকমের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। চোখের শেড এ ভারি কাজ বেশ মানিয়ে যায়। কালের আবহে পাল্টে গেছে দিন, পাল্টে গেছে ক্ষণ। এখন ঘরে বসে কনের সাজের দিন আর নেই।
পোশাক ও ছবি : জ্যোতি

×