ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

জাতিসংঘে সম্মেলনে ১৭ দেশের অনুরোধ

হামাসকে গাজার শাসন ছাড়ার আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২৫, ৩০ জুলাই ২০২৫

হামাসকে গাজার শাসন ছাড়ার আহ্বান

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ আয়োজিত সম্মেলনে অংশ নেওয়া উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রীদের ফটোসেশন

ফিলিস্তিনের স্বাধানীতাকামী সংগঠন হামাসকে গাজার শাসন পরিত্যাগ ও অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগ, সৌদি আরব, কাতার ও মিসরসহ ১৭টি দেশ। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণাপত্রে এই আহ্বান জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রকাশিত সাত পৃষ্ঠার ওই ঘোষণায় বলা হয়, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রেক্ষাপটে হামাসকে গাজা শাসন শেষ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র জমা দিতে হবে। এর লক্ষ্য একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। খবর আলজাজিরার।
এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা আহ্বান জানিয়েছেন যে, ইসরাইল ও হামাস উভয়েই গাজা ত্যাগ করুক ও গাজার শাসনভার ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হোক। ঘোষণাপত্রে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলিদের ওপর হামাসের হামলার নিন্দা জানানো হয়। অবশ্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনার নিন্দা জানায়নি। এই সম্মেলনের সহ-আয়োজক ফ্রান্স ঘোষণাপত্রটিকে ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছে।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানাল, ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা জানাল, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানাল, ফিলিস্তিনি প্রশাসন থেকে হামাসকে বাদ দেওয়ার দাবি করল এবং ভবিষ্যতে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা প্রকাশ করল। ঘোষণায় আরও বলা হয়, যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হতে পারে। ঘোষণাটিতে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ স্বাক্ষর করেছে।

অবশ্য ইসরাইল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনে অংশ নেয়নি। এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিলে সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে। গত সপ্তাহে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।

এদিকে মঙ্গলবার  রাতে ফ্রান্স ও স্পেনসহ ১৫টি পশ্চিমা দেশ যৌথ বিবৃতিতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তাদের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে নয়টি দেশ অ্যান্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল ও সান মারিনো যারা এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তারা ইচ্ছা প্রকাশ বা ইতিবাচক বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনকে দুটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

কিন্তু গাজায় প্রায় ২১ মাস ধরে চলমান যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণ ও অধিকৃত ভূমি সংযুক্তকরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাওয়ার ঘোষণায় এই সমাধান ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ে পরিবর্তন না এলে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী জানান, যদি ইসরাইল গাজায় নিন্দনীয় পরিস্থিতির অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, যুদ্ধবিরতিতে না পৌঁছায়, পশ্চিমতীরে দখলদারিত্ব বন্ধের প্রতিশ্রুতি না দেয় এবং টেকসই দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পথে অগ্রসর না হয়, তাহলে সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। স্টারমার আরও বলেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে কোনো নৈতিক তুলনা হয় না। আমাদের দাবি অপরিবর্তিত রয়েছে। হামাসকে অবশ্যই সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, অস্ত্র পরিত্যাগ করতে হবে এবং গাজার শাসনে নিজেদের সম্পৃক্ত না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

প্যানেল হু

×