
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে মাত্র ২৫ বছর বয়সী জাতীয় পর্যায়ের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবকে গুলি করে হত্যা করেছে তার নিজের বাবা। পারিবারিক কলহ, মেয়ের আর্থিক স্বাধীনতা, ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং একটি মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ—এসব বিষয় ঘিরেই দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল যাদব পরিবারে। অবশেষে বৃহস্পতিবার ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামে নিজ বাসায় রাধিকাকে হত্যা করেন তার বাবা দীপক যাদব।
পুলিশ জানিয়েছে, ৪৯ বছর বয়সী দীপক যাদব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তার দাবি, মেয়ের উপার্জনের ওপর নির্ভর করায় গ্রামে বারবার লজ্জা ও কটূক্তির মুখে পড়তে হতো তাকে। সে কারণেই তিনি রাধিকাকে তার চালু করা টেনিস একাডেমি বন্ধ করতে বলেছিলেন বারবার, কিন্তু রাধিকা রাজি হননি।
ঘটনার দিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে রান্নাঘরে সকালের নাশতা তৈরির সময় দীপক পিছন থেকে তিনটি গুলি ছোঁড়েন রাধিকার ওপর। এরপর রাধিকার কাকা কুলদীপ যাদব, যিনি একই ভবনের নিচতলায় থাকেন, গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখেন ভাতিজি মেঝেতে পড়ে আছেন। পাশে ড্রয়িংরুমে পড়ে ছিল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রিভলভারটি।
রাধিকাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেক্টর ৫৬-এর এশিয়া মারিঙ্গো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিউজিক ভিডিও ঘিরেই দ্বন্দ্ব?
দীপক যাদব, যিনি এক সময় ব্যাংকে চাকরি করতেন, মেয়ের খ্যাতি ও আর্থিক স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ পোষণ করছিলেন। বিশেষ করে যখন রাধিকা নিজে একটি টেনিস একাডেমি চালু করেন সেক্টর ৫৭-এ, তখন থেকেই সম্পর্ক আরও খারাপ হতে থাকে।
তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একটি মিউজিক ভিডিওতে অংশ নেওয়া এই উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালে। গানটির নাম ‘কারওয়ান’, গেয়েছেন স্বতন্ত্র শিল্পী ইনআম, প্রযোজক জিশান আহমেদ। ভিডিওটি LLF Records-এর ব্যানারে প্রকাশিত হয় এক বছর আগে, যেখানে রাধিকাকে শিল্পীর সঙ্গে একাধিক দৃশ্যে দেখা যায়। পুলিশ বলছে, দীপক এই ভিডিওটি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং রাধিকাকে এটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মুছে ফেলতে বলেন।
পারিবারিক কলহের ইতিহাস
কয়েক মাস আগে একটি ম্যাচে কাঁধে চোট পেয়ে খেলা থেকে সাময়িক বিরতিতে ছিলেন রাধিকা। তবে তিনি খেলাধুলা ছেড়ে না দিয়ে কোচ হিসেবে তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।
পুলিশের ভাষ্যমতে, দীপকের ক্ষোভ তখন আরও বেড়ে যায়, যখন গ্রামে দুধ কিনতে গেলে তাকে শুনতে হতো, ‘মেয়ের আয়ে চলছে!’ এমন মন্তব্যে তিনি লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এফআইআরে তিনি বলেন, ‘গ্রামে গেলে লোকজন বলত, মেয়ের টাকায় দিন চলে। কারও কারও মুখে মেয়ের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠত। আমি বলেছিলাম একাডেমি বন্ধ করতে, কিন্তু সে শোনেনি।’
এই ক্ষোভ থেকেই বৃহস্পতিবার সকালে লাইসেন্সপ্রাপ্ত .৩২ বোর রিভলভার বের করে তিনি মেয়েকে লক্ষ্য করে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন, যার মধ্যে তিনটি গিয়ে রাধিকা যাদবের লাগে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের ভাষ্য
এফআইআরের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত রাধিকার কাকা কুলদীপ যাদব। তিনি জানান, ‘সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বিকট শব্দ শুনে আমি উপরতলায় যাই। গিয়ে দেখি ভাতিজি রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। পাশের ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল রিভলভার। আমরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু ততক্ষণে সে মারা গিয়েছে।’
এ সময় দীপকের স্ত্রী ও রাধিকার মা, মঞ্জু যাদব বাড়িতেই ছিলেন। তবে তিনি কোনো লিখিত বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পুলিশকে মৌখিকভাবে জানান, তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন এবং নিজের ঘরে ছিলেন।
রাধিকার কাকা আরও বলেন, ‘সে একজন সম্মানিত টেনিস খেলোয়াড় ছিল, অনেক পুরস্কার জিতেছে। আমি বুঝতেই পারছি না, তাকে কেন হত্যা করা হলো। ঘটনার সময় বাড়িতে কেবল দীপক, মঞ্জু ও রাধিকা ছিল।’
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব