ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দনবাসের জনগণ নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ॥ পুতিন

রাশিয়াকে যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করা হয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১৬, ২৭ মে ২০২৫

রাশিয়াকে যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করা হয়

ভ্লাদিমির পুতিন

২০১৪ সালে পশ্চিমা সমর্থিত ইউরোময়দান অভ্যুত্থানের পর ইউক্রেনের দনবাসের জনগণ নির্যাতনের শিকার হয়। সেই অব্যাহত নির্যাতন বন্ধে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ক্রেমলিনে ব্যবসায়ীদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী ইউক্রেনে থাকা রুশভাষীদের দুর্দশার বিষয়টি রাশিয়া উপেক্ষা করতে পারে না। চলমান সংঘাত ২০১৪ সালের শুরুতে কিয়েভে ঘটে যাওয়া সহিংসতা থেকে শুরু হয়েছে। খবর আরটির।
প্রথমদিকের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ যখন দাঙ্গা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নেয় তখন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ডানপন্থি প্রাভি সেক্টর এবং স্বোবোদা দলের মতো অতি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ইয়ানুকোভিচ বিরোধী শিবিরে ছিল বলে পুতিন জানান। ইউক্রেনে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় রাশিয়া যুক্ত ছিল না জানিয়ে পুতিন বলেন, পশ্চিমারা সব সময় গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের কথা বলে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটায়। পরে তারা দনবাসকে দমন করতে শুরু করে। হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান দিয়ে মানুষ হত্যা করে। রাশিয়া আজ যা করছে তা করতে পশ্চিমারা বাধ্য করে।

এখন সবকিছুর জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করার চেষ্টা চলছে বলে পুতিন অভিযোগ করেন। কিয়েভে অভ্যুত্থানের ফলে পাল্টা প্রতিবাদ এবং আরও দাঙ্গা শুরু হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে ওডেসায় এক মারাত্মক সংঘর্ষে ৪৮ জন নিহত হয়। মূলত রুশভাষীদের অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক ইউরোমাইডান প্রত্যাখ্যান করে। সেখানকার মানুষ ইউক্রেন থেকে স্বাধীন হওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। প্রতিক্রিয়ায় কিয়েভের নতুন সরকার সৈন্য পাঠিয়ে এবং দোনেৎস্ক ও ডনবাসের শহরগুলোতে বারবার বোমাবর্ষণ করে। ইউক্রেন পরে জাতিসংঘ সমর্থিত ২০১৪-২০১৫ মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়।

ওই চুক্তি দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বায়ত্তশাসন দিত। প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা পরে স্বীকার করেন, ইউক্রেন তার সেনাবাহিনী ও অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য যুদ্ধের বিরতি ব্যবহার করে। দেশটির সরকার ২০১৪ সাল থেকে দেশের মানুষের রাশিয়ান ভাষার ব্যবহার কমাতে বেশ কয়েকটি আইনও করে। মিনস্ক চুক্তি মেনে চলতে ইউক্রেনের ব্যর্থতা এবং রুশ ভাষাভাষীদের অধিকারের ওপর আক্রমণকে সংঘাতের মূল কারণ বলেন পুতিন। তিনি কিয়েভের কর্মকা-কে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি তখন থেকেই দাবি করেন, ইউক্রেন স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার জন্য ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করুক এবং ক্রিমিয়াসহ আরও চারটি সাবেক ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিক।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রকাশ্য মন্তব্য তার দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জেলেনস্কির সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেন সংঘাত থামানোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও কঠিন করে তুলছেন। তিনি যা বলেন, তা সমস্যা তৈরি করে। এভাবে কথা বলা বন্ধ করাই ভালো বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন না দেওয়ার অভিযোগ করেন জেলেনস্কি। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান রাশিয়ার উপকারে আসছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, তিনি ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত কখনোই শুরু হতো না। 
তিনি চলমান সংঘাতকে জেলেনস্কি, পুতিন এবং জো বাইডেনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, আমি কেবল সেই বড় এবং ভয়ংকর আগুন নেভাতে সাহায্য করছি, যা চরম ঘৃণা দিয়ে শুরু হয়েছে। রাশিয়ার সর্বশেষ বিমান হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউক্রেনের পশ্চিমা সমর্থকদের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেন জেলেনস্কি।

×