
বিজয়নগর এখন পাকা লিচুর রঙে রঙিন
প্রকৃতির বৈরী আচরণে চলতি বছর মৌসুমি ফল লিচুর ফলন কম হওয়ায় খানিকটা আক্ষেপ ছিল চাষিদের। পরে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় এবং বাজারে ওঠানোর পর ভালো দাম পাওয়ায় খুশি লিচু চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বিজয়নগরে দেশি প্রজাতির (পাটনায়) লিচু বাজারে এসেছে সপ্তাহ তিনেক আগেই। এখন চলছে উন্নত বোম্বে ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু ভাঙার সময়।
বিজয়নগর এখন পাকা লিচুর রঙে রঙিন পুরো উপজেলা। যেন লিচুবাগানের গাছে গাছে ঝুলছে রঙিন লিচুর থোকা। বাগান থেকে লিচু পেরে তা ঝুড়িতে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজযনগরের বিভিন্ন হাট - বাজারে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে লিচু নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। সবকিছু মিলিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছে উৎসবের আবহ।
বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ শুরু হয় গত প্রায় দেড়যুগ আগে । ওই সময়েই সৌখিন কিছু মানুষ বাড়ির আঙিনায় লিচুর চাষ শুরু করেন। অন্য ফল-ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা তখন ঝুঁকতে থাকেন লিচু চাষের দিকে। তৈরি হতে থাকে লিচুর বাগান। বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশ থেকে শুরু করে মাঠে-ময়দানে ছড়িয়ে পড়ে লিচুর চাষ।
বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, সিঙ্গারবিল, হরষপুর, পত্তন, চম্পকনগর ইউনিয়নে লিচুর আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুগাছ ও বাগান।
এখানকার লিচু চাষিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় লিচু ভাঙার শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা বিজয়নগরের লিচুর হাট আউলিয়া বাজার, মেরাশানি বাজার, সিঙ্গারবিল বাজারে আগেভাগেই ভিড় জমিয়েছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
কুমিল্লা থেকে লিচু সংগ্রহের জন্য বিজয়নগরে আসা জাহাঙ্গীর জানান, এ বছর প্রতি হাজার লিচু বাগান থেকেই আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে তাকে। এর পাশাপাশি শ্রমিকের খরচ, হাটের খরচ ও পরিবহণ খরচ মিলিয়ে কুমিল্লায় পাইকারি বাজারে লিচু পৌঁছাতে প্রতি হাজার লিচুতে খরচ পড়ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে বাজারে ৪ হাজার টাকার নিচে ভালো লিচু পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগের বছর একই লিচু বাগান থেকে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে কিনেছিলেন বলে জানান এ ক্রেতা।
লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিজয়নগরে সাধারণত তিন জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়। এগুলো হলো পাটনায় বা দেশি লিচু, বোম্বাই ও চায়না-৩। এ ছাড়াও বেদেনা, চায়না-১ ও চায়না-২ জাতের লিচু চাষ হয় এখানে। সবার আগে বাজারে আসে পাটনায় বা দেশি লিচু। বোম্বাই ও চায়না-৩ লিচু কিছুদিন পরে পাকলেও বাজারে এর কদর বেশি। বিক্রিও হয় বেশি দামে। চায়না লিচু দেশি লিচুর মতো দেখতে হলেও আকারে ছোট হয়। খেতে সুস্বাদু।
পাহাড়পুর ইউনিয়নের লিচু চাষি মোঃ দুলাল মিয়া জানান, তার ৬ টি লিচু বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বাগানে ১৮৫টি গাছ রযেছে। এবছর ৮৫টি গাছে লিচু এসেছে। তবে প্রথম দিকে আবহাওয়া যদি ভালো থাকতো তাহলে ফলন আরো ভালো হতো। তবে দাম ভালো পাওয়ায় আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি।
লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া জানান, এ বছর তার ৮০টি লিচু গাছের মধ্যে ৪৫ থেকে ৫০টি গাছে ভালো ফলন হয়েছে। লিচুর মুকুল আসার সময় অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বৃদ্ধির সময় বৃষ্টির অভাবে ভালো কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে ভালো দাম পাওয়ায় সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জিয়াউল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হচ্ছে। তন্মধ্যে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ফলন্ত গাছ যা থেকে প্রায় ১৭০০ মেট্রিক টন লিচু পাওয়া যেতে পারে এবং যার বাজার মূল্য হতে পারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, বিজয়নগর- কৃষিতে সম্ভাবনাময় একটি উপজেলা, এখানে সবধরনের ফল ও সবজি আবাদ হচ্ছে যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
সাব্বির