ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তারেক রহমানের নেতৃত্বে সব শ্রেণীপেশার গণতন্ত্রকামী তারুণ্যের জাগরণ

মাহবুব নাহিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

প্রকাশিত: ২১:২০, ২৯ মে ২০২৫

তারেক রহমানের নেতৃত্বে সব শ্রেণীপেশার গণতন্ত্রকামী তারুণ্যের জাগরণ

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার তারুণ্যই এনে দিয়েছে নতুন দিগন্ত। ১৯৫২, ১৯৭১ কিংবা ১৯৯০—প্রতিটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে তারুণ্যই ছিল নেতৃত্বে। কিছুদিন আগে আবারও আমরা দেখছি সেই পুনরাবৃত্তি, নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া তরুণদের সাহসী অভ্যুত্থান ছিল এই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক সিগন্যাল—এই প্রজন্ম চুপ করে থাকার নয়, বরং পথ দেখানোর, বুক চিতিয়ে লড়াই করবার। আবু সাঈদের মতো গুলির সামনে বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে কিংবা ওয়াসিম আকরামের মতো ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে নামা, এটাই তারুণ্যের শক্তি। 

তারুণ্যের উত্তাল তরঙ্গের মাঝে শুধু যে অগ্নিমূর্তি আছে তা নয়, আছে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি, আছে দেশ গড়বার রসদ। তরুণদের মাঝে যে ভালো করার সুপ্ত বারুদ লুকিয়ে আছে তাঁর সাথে স্পর্শের মাধ্যমে এক স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টির এক মহান দায়িত্ব আছে নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সারাদেশে চারটি ধাপে যে সেমিনার ও সমাবেশের আয়োজন হয়েছে, তা দলীয় কর্মসূচির বেড়াজাল ছিন্ন করে রূপ নিয়েছে এক রাজনৈতিক রেনেসাঁয়। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও ঢাকা—চারটি শহর হয়ে উঠেছে এক একটি আলোচনার কেন্দ্র। এখানে বক্তৃতা নয়, শোনা হচ্ছে মানুষের কথা। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে নয়, মতামত আহরণ করে নেতৃত্ব গড়ার এই প্রয়াস রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক যুগান্তকারী উদাহরণ।

চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী সম্মেলন কেন্দ্রে "কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা" সেমিনারে তরুণরা শুধু সমস্যা নয়, সম্ভাবনার কথাও বলেছেন। পরদিন পলোগ্রাউন্ড মাঠে লাখো তরুণের উপস্থিতি জানিয়ে দিয়েছে তরুণরাই বিএনপির অথবা বিএনপি তারুণ্যের।

খুলনার প্রেসক্লাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবে। সার্কিট হাউজ মাঠে সমাবেশে লাখো তরুণের উপস্থিতিতে মুখর হয়েছে রাজপথ, কেঁপে উঠেছে পুরো দক্ষিণবঙ্গ।

বগুড়ায় কৃষি, পরিবেশ ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তরুণদের যে-সব কথা উঠে এসেছে তা বিএনপির দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের সাথে মিলে যাচ্ছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি যেন আবারও হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক উদ্ভাবনের কেন্দ্র।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি শীর্ষক সেমিনার। তার পরেরদিন পল্টন জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এখানে শুধু চারটি বিভাগের তরুণরা নয়, উপস্থিত ছিলেন দেশের সকল প্রান্ত থেকে ছুটে আসা স্বপ্নবান মানুষ। রোদ বৃষ্টি আর ঝড়ের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল লাখো তরুণেরা। তরুণরা সেদিন অপেক্ষায় ছিলেন তারুণ্যের অনহংকার তারেক রহমানের বক্তব্য শোনার জন্যই। এমন উত্তাল তারুণ্যের জোয়ারের মাঝে নিশ্চয়ই এমন কিছু বলতে হয় যা সকলে অন্তরে নতুন প্রাণের নতুন হাওয়া লাগিয়ে দেয়। তাই তারেক রহমান সেখানেই উচ্চারণ করেন সেই ঐতিহাসিক স্লোগান—“দিল্লি নয়, পিণ্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ”। আগামী দিনের বাংলাদেশ রাজনীতি ও বিদেশনীতির জন্য এক স্পষ্ট কংক্রিটের ন্যায় বার্তা দিয়ে রাখলেন তিনি। 

বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল কর্তৃক আয়োজিত ধারাবাহিক সেমিনারগুলো  একটি নতুন রাজনৈতিক ঐতিহ্যের সূচনা করেছে। শুধু বক্তৃতা নয়, এ আয়োজনে উঠে এসেছে নানা পথ ও মতের মানুষের কণ্ঠ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—তরুণরা এই প্ল্যাটফর্মে শুধু স্লোগান দেয়নি, বরং বলেছে সমাধানের কথা, চেয়েছে কার্যকর পলিসি, বাস্তবভিত্তিক ভিশন। এটি যেন এক রাজনৈতিক নবজাগরণ, যেখানে আয়োজকেরা কথা শোনেন, তরুণরা প্রশ্ন করেন, আর বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করেন। অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা, শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অংশগ্রহণে গড়ে উঠছে এক নতুন জাতীয় নীতিনির্ধারণী প্ল্যাটফর্ম। বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁদের দলীয় পলিসিতে এসব আলোচ্য এবং যোগ্য বিষয়গুলোকে যুক্ত করার জন্য আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।

এই সেমিনারগুলোতে দেখা গেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী রাজনৈতিক চর্চা—যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও দ্বিমতের প্রতি সম্মান ছিল দৃশ্যমান। চট্টগ্রামে একজন বক্তা স্পষ্টভাবে অনুরোধ করেন, বিএনপিও যেন ভবিষ্যতে ভুল করলে সমালোচনা গ্রহণ করে। খুলনায় এক তরুণ দর্শক প্রধান অতিথির বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করলেও, তাঁকে সম্মান দিয়ে তার মতামতকে বিবেচনা করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ হাসিমুখে উত্তর দিয়ে সেই মতামতকেই যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যা দেন। এসব আয়োজন কেবল বিএনপির নয়, বরং গণতন্ত্রকামী সকল দল মত পথের সবার জন্য অংশগ্রহণমূলক একটি মঞ্চ। সেমিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও আলোচক হিসেবে দেখা গেছে, প্রাধান্য পেয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল তরুণরা।

বিএনপির ৩১ দফার মতো উদ্যোগেও এই তারুণ্যের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেমিনারে আলোচক তরুণরা যে-সব বিষয়ে আলোচনা করেছেন তার অনেক কিছুই ৩১ দফার সাথে মিলেও যাচ্ছে, অথচ বিএনপি এই ৩১ দফা দিয়েছিল স্বৈরাচার পতনের আগেই। এটাই বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনার দূরদর্শিতার প্রমাণ দেয়। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও ঢাকায় যে তরুণ জাগরণ দেখা যাচ্ছে, তা শুধু দলীয় কর্মসূচি নয়—এটি একটি বৃহৎ জাতীয় প্রত্যাবর্তনের ডাক, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের বার্তা। এই আগুন নিভে যাবে না, বরং আলোকিত করবে আগামীর বাংলাদেশ। এই তরুণরা যেভাবে বিগত দিনের সংগ্রামে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে, একইভাবে আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই যদি লড়াই করতে হয়, তখন অগ্রভাগেই থাকবে এই জাগ্রত তরুণ সমাজ, তেমনটাই প্রত্যাশা তারুণ্যের, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশের তরুণরা রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ।

আলীম

×