ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সর্ষের ভেতরে ভূত রেখে সংস্কার হবে না, প্রথমে উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার চান সালাহউদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২৯ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:১৮, ২৯ মে ২০২৫

সর্ষের ভেতরে ভূত রেখে সংস্কার হবে না, প্রথমে উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার চান সালাহউদ্দিন আহমদ

সর্ষের ভেতরে ভূত রেখে সংস্কার হবে না, প্রথমে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার চান সালাহ উদ্দিন আহমদ।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘চ্যারেটি বিগেইনস এট হোম। আমরা বলেছি, আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) আপনার উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার করুন। আপনার উপদেষ্টা পরিষদ নিরপেক্ষ নয়। এখানে দুই জন ছাত্র উপদেষ্টা বসে আছে তারা একটা দলের। আরেকজন উপদেষ্টা বসে আছে বিদেশ ভ্রমন করেছে ২০ বছর এবং এখন বাংলাদেশ উদ্ধার করতে এসেছেন তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ভূমিকার বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি (নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমান) আর কি পরিকল্পনা নিয়ে এসছেন জানিনা আল্লাহ মা‘বুদ।

‘‘আরও কয়েকজন ফ্যাসিবাদের দোসর আপনার উপদেষ্টার মধ্যে আছে। সংস্কার করুন, নাম বলতে চাই না বিব্রত হবেন। আমরা তার কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। যদি সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে আপনি সংস্কার সংস্কার করেন, সংস্কার হবে না।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

‘কয়টার সংস্কার করেছেন’

সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘আর সংস্কার এমন কোন সংস্কার নেই সমস্ত সংস্কার যেগুলো এগ্রিড হবে একটা ন্যাশনাল কনসেনসাস হবে, সেই সমস্ত সংস্কারগুলো এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের ভেতরে বাস্তবায়ন করা সম্ভ্‌ যদি আপনি না পারেন আমাদেরকে বলেন।”

‘শুধুমাত্র যে সমস্ত সাংবিধানিক সংস্কারের মধ্যে ঐক্যমত সৃষ্টি হবে সেই সমস্ত সাংবিধানিক সংশোধন গুলো নির্বাচিত সংসদের মধ্যেই করতে হবে। এটাই হল আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য। সুতরাং সংস্কার সংস্কার বলে যে আপনারা ফেনা তুলছেন মুখে কয়টা সংস্কার করেছেন?”

তিনি বলেন, ‘‘কোন ডিপার্টমেন্টে কোন আইনে যে সংস্কারগুলো আপনারা আনতে চান, যেগুলো নির্বাহী আদেশে সম্ভব ওইসব করে দেন। জুডিশিয়ারি সংস্কার তো প্রায় হয়ে গেছে। ঐক্যমত্য অপেক্ষা করার কোন দরকার নেই। জুডিশিয়ারি ভার্ডিকের মধ্য দিয়ে অনেক সংস্কার ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন।”

‘‘যে সমস্ত জুডিশিয়ারি সংস্কারগুলো দরকার প্রধানত হচ্ছে, একটা জাস্টিস নিয়োগের আইন করা, প্রধানত হচ্ছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মধ্যে আরো বেশি সংস্কার করা। এটা আর্টিকেল ৯৬ অনুসারে, প্রধানত সংস্কার হচ্ছে আর্টিকেল ১৬ অনুসারে। অধনস্থ আদালতের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিয়ে আসা।”

নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসনিক কমিশনের যেসব সংস্কার বিষয়ে আামরা একমত হয়েছে তা উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন।

‘জাপানের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে প্রসঙ্গে’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘শুনছি আজকে নাকি একটা বক্তৃতা দিয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তিনি নিক্কেই ফোরামের আমন্ত্রণে বিদেশে গেলেন। উনি অবশ্য দেশে কম কথা বলেন, বিদেশে গেলেই সাক্ষাৎকার দেন বেশি। ওখানে উনি বলেছেন যে, মাত্র একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে চেয়েছে। যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হয় তার বক্তব্যই বলছি, আমি অনলাইনে পড়ে আসলাম, যদি ডিসেম্বরের ভিতরে নির্বাচন দিতে হয় তাহলে নাকি খুব তাড়াহুড়ো করে সংস্কার করতে হবে এটা তার বক্তব্য।”

‘‘আমাদের কথা হলো, চ্যারেটি বিগেইনস এট হোম, আমরা বলেছি আপনি আপনার উপদেষ্টা পরিষদে সংস্কার করুন।”

‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করবেন না’

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘সুতরাং বাকি থাকলো সংবিধান সংস্কার, মাননীয় প্রধান উপদেশ সংস্কারের এই সমস্ত বাহানা করে নির্বাচনকে বিলম্বিত করবেন না। জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করবেন না, গণতান্ত্রিক শক্তি সময়ের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার মত কোন শক্তিকে সুযোগ দেবেন না।”

‘‘দয়া করে আমাদের এখানে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে জাতীয় ঐক্য আছে সেই জাতীয় ঐক্যকে আমরা যাতে দৃঢ় করি ইস্পাত কঠিন সংকল্প নিয়ে এসে জাতীয় ঐক্যকে ধরে রেখে আগামী দিনের বাংলাদেশকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং সেই বাংলাদেশ আমাদের নেতা তারেক রহমান ‘সবার আগে বাংলাদেশ অন্য কোন দেশ নয় সবার আগে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে গেলে আমাদেরকে সেই ঐক্যবদ্ধভাবে সেই দেশ জাতীয় ঐক্যকে ধরে রেখে আমরা এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ আমাদের নেতার নেতৃত্বে।”

‘তারেক রহমান আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি করে ফেলছে’

সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমি যদি এখন কথা বলি যে আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কি হবে অনেক বেশি সেমিনার নিয়ে কথা বলতে হবে অনেক বেশি বৈঠক করে কথা বলতে হবে, যিনি আমাদের আগামী দিনের এদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার প্রধান নায়ক জনাব তারেক রহমান এখন সেই সমস্ত কর্মসূচি অলরেডি প্রণয়ন করে ফেলেছেন প্রায়। এটাই হচ্ছে পরিকল্পনা। কিভাবে স্বাস্থ্য কার্ড দিবেন, কিভাবে একটা খাদ্যের জন্য রেশন কার্ড ভিত্তিক ফ্যামিলি কার্ড দিবেন, কিভাবে মেধাবীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন, কিভাবে কৃষকদেরকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব এই সমস্ত সমস্ত কর্মসূচি প্রণয়িত হয়েছে।”

‘‘কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে গণতান্ত্রিকভাবে যদি একটি নির্বাচিত সরকার আসে সেই সরকারের নির্বাচিত সরকারের পরিকল্পনা হবে আমাদের ৩১ দফায় আমরা যা বলেছি যদি একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক কাঠামো দাঁড় হয়। যদি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্ত উপর দাড় হয়, যদি সেই প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে গণতন্ত্রের তাহলে পরে আমরা সেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ দেখতে পাব।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্ অধ্যাপক কামরুল আহসান বক্তব্য রাখেন।

রিফাত

×