ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ কর্তৃক দুই চীনা নাগরিকসহ মানবপাচারকারী চক্রের তিনজন গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ১৪:০২, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:০৩, ২৮ মে ২০২৫

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ কর্তৃক দুই চীনা নাগরিকসহ মানবপাচারকারী চক্রের তিনজন গ্রেপ্তার

একই  মানবপাচারকারী চক্রের দুইজন চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি একজনসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। চীনা নাগরিক দুইজন হলেন HU JUNJUN (৩০) ও ZHANG LEIJI (৫৪) এবং অপরজন বাংলাদেশি নাগরিক মোঃ নয়ন আলী (৩০)। গাইবান্ধা জেলার শ্রাবন্তি আক্তার (১৯) নামের এক ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নজরে আসে।

সোমবার রাতে ভুক্তভোগীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারকালে তিনি বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথ গোলচত্বর এলাকায় এয়ারপোর্ট এপিবিএন পুলিশের নিকট অভিযোগ করেন যে HU JUNJUN (৩০) ও ZHANG LEIJI (৫৪) দুইজন চীনা নাগরিক তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছে।

অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে সহকারী পুলিশ সুপার জনাব ফাওজুল কবীর মঈন সঙ্গীয় ফোর্সের সহযোগিতায় উক্ত চীনা নাগরিকদ্বয়কে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসেন। অভিযুক্তদ্বয়ের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ও ভুক্তভোগীর প্রদানকৃত তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাড়িতে আরও দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগী অবস্থান করছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এয়ারপোর্ট এপিবিএনের একটি চৌকস দল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সেই বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে তারা মোঃ নয়ন আলী (৩০) নামক আরও এক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সাথে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।

সূত্র জানায়, মানবপাচারকারী চীনা নাগরিকদ্বয় অনুমান এক বছর পূর্বে বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশে তারা উভয়ই বসুন্ধরা এলাকায় বসবাস করতে থাকে এবং দেশীয় বিভিন্ন দালালদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরবর্তীতে বাংলাদেশি নাগরিক মোঃ নয়ন আলী (৩০) এর সহযোগিতায় ভুক্তভোগীকে বিবাহ করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতে থাকে। বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য রাজি করায়।

পরবর্তীতে ভিকটিমের নামে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে। অতঃপর গত মার্চ মাসে ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা দেনমোহরে চীনা নাগরিক HU JUNJUN (৩০) এর সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের সামগ্রিক কাজে ZHANG LEIJI (৫৪) ও মোঃ নয়ন আলী (৩০) সহযোগিতা করে। পরবর্তীতে ভিকটিমকে না জানিয়ে চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য ZHANG LEIJI (৫৪) ভিকটিমের নামে বিমান টিকিট বুক করে। বিবাদীদ্বয় BS325 ফ্লাইটে ভিকটিমকে চীনে পাচার করার জন্য জোরপূর্বক বাসা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসলে ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের নজরে আসে।

আজ বুধবার ভুক্তভোগীর মা রাশিদা (৪৩) নিজে বাদী হয়ে ইতিমধ্যে বিমানবন্দর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬(১)/৬(২)/৭/৮/১০ ধারায় মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পুলিশ সুপার (অপারেশনস) জনাব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, "সাম্প্রতিক সময়ে এপিবিএন কর্তৃক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানবপাচারের অপরাধে চীনা নাগরিক আটকের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। আমরা লক্ষ করছি, বেশ কিছু মানবপাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করার চেষ্টা করে। গোপন তথ্য বা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি।"

মানবপাচার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নিরলসভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

আফরোজা

×