
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি, সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও ইসলামিক গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক সাধারণ প্রেসিডেন্ট শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আলে শাইখ আল্লাহর পবিত্র ঘরের হাজীদের জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের সূচনায় দেওয়া তাঁর উপদেশমূলক বাণী দিয়েছেন।
বুধবার (২৮মে) মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী'র অফিসিয়াল পেইজে তিনি এই পরামর্শ মূলক বানী দেন। তিনি বলেন: আল্লাহর মেহমান হাজীরা যেন খাঁটি মনে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ পালন করেন, নবী (সা.)-এর নির্বাচিত সুন্নাহ অনুসরণ করেন এবং হজ্জের সময় আল্লাহর পবিত্র বিধানগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ কিছু মাস ও দিনকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন এবং সেগুলোকে কল্যাণের মৌসুম হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি কিছু স্থান ও ভূমিকে সম্মানিত করেছেন। তাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন যে, তিনি আপনাদেরকে এই পুণ্যময় দিনগুলো—জিলহজের প্রথম দশদিন—এসব বরকতময় স্থানে পৌঁছার তাওফিক দিয়েছেন। আল্লাহ এই দিনগুলোকে বিশেষ ইবাদতের জন্য নির্বাচিত করেছেন, যেমন—আল্লাহর পবিত্র ঘরের হজ্জ, তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ, অন্যান্য হজ্জের রীতিনীতি এবং সকল নেক আমল—বিশেষ করে আল্লাহর অধিক পরিমাণ যিকির।
হে আল্লাহর পবিত্র ঘরের হাজীগণ!
আপনারা এখন এই বরকতময় দিনগুলোতে হজ্জের রীতিনীতি পালন করছেন। আল্লাহর ইচ্ছায়, প্রত্যেক মুমিন বান্দা যদি একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত করেন, তাঁর সাথে কোনো শরিক না করেন এবং আল্লাহর খলীল ইব্রাহীম (আ.)-এর অনুসরণ করেন, তবে তিনি পুরস্কৃত হবেন। আল্লাহ বলেছেন: "আর মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর দূরান্ত পথ থেকে আসবে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থানগুলো প্রত্যক্ষ করে এবং নির্ধারিত দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।" [সূরা আল-হাজ্জ, ২২:২৭-২৮, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার অনুবাদ]
আর তিনি বলেন: "আর আল্লাহর জন্য মানুষের উপর ঐ ঘরের হজ্জ করা ফরয, যে সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে।" [সূরা আলে-ইমরান, ৩:৯৭, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার অনুবাদ] এখন আপনারা এই পবিত্র স্থানগুলোতে পৌঁছেছেন, তাই প্রত্যেক হাজীর উপর কর্তব্য হলো—হজ্জের রীতিনীতিগুলো সঠিকভাবে ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য পালন করা, এই স্থানগুলোর পবিত্রতা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সেখানে শিষ্টাচার বজায় রাখা। আল্লাহর বাণী স্মরণ করুন: "সুতরাং যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বাঁধে, তার জন্য হজ্জের সময় স্ত্রী সম্ভোগ, পাপাচার ও ঝগড়া-বিবাদ নিষিদ্ধ।" [সূরা আল-বাকারা, ২:১৯৭, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার অনুবাদ] আর নবীজি (সা.) বলেছেন:"যে ব্যক্তি হজ্জ করে এবং স্ত্রী সম্ভোগ, পাপাচার ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকে, সে এমন নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে যেমন তার মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন ছিল।"ইহরাম বাঁধার পর থেকে এই পবিত্র আমলকে সম্মান করুন এবং যে কোনো অশালীন কথা, পাপাচার ও বিবাদ থেকে দূরে থাকুন।
হে আল্লাহর পবিত্র ঘরের প্রিয় হাজীগণ!
আপনাদের সামনে বরকতময় দিন উপস্থিত, যেখানে হাজীগণ নবীজি (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন। বিদায় হজ্জের স্মৃতি স্মরণ করুন, যেখানে তিনি কথা ও কাজে হজ্জের সঠিক পদ্ধতি প্রদর্শন করেছিলেন এবং সাহাবাদের বলেছিলেন: "তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের রীতিনীতি শিখে নাও।"
মূল্যবান হাজী সাহেব/হাজী সাহেবা, ৮ই জিলহজ হলো 'তারবিয়ার দিন'। নবীজি (সা.)-এর অনুসরণে মিনায় অবস্থান করুন, নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করুন এবং চার রাকাতের নামাজগুলো সংক্ষেপে পড়ুন। ৯ই জিলহজ (আরাফার দিন), আল্লাহর সাহায্যে আপনি আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন। সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবেন, বিনয় ও নিষ্ঠার সাথে তালবিয়া পাঠ করবেন, আল্লাহর কাছে দুআ করবেন, তাঁর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি কামনা করবেন এবং নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসার আশা রাখবেন।
সূর্যাস্তের পর, আপনি মুজদালিফায় (মাশআরুল হারাম) রাত যাপন করবেন। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও ইশার নামাজ একসাথে আদায় করবেন (ইশার নামাজ সংক্ষেপে)। শান্ত ও স্থির থাকুন এবং রমী (পাথর নিক্ষেপ) করার জন্য কংকর সংগ্রহ করুন। ১০ই জিলহজ (কুরবানির দিন), প্রথমে জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করবেন, তারপর মসজিদুল হারামে তাওয়াফে ইফাদা সম্পন্ন করবেন। এরপর মিনায় ফিরে তাশরীকের দিনগুলোতে তিনটি জামরাতেই কংকর নিক্ষেপ করবেন। নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করুন। কুরবানির দিনের আমলগুলো হলো: - জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ - মাথা মুণ্ডন বা চুল কাটা - কুরবানি করা
- তাওয়াফে ইফাদা। এই আমলগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্রমে না করলে কোনো সমস্যা নেই, কারণ নবীজি (সা.) বলেছেন: "করো, কোনো সমস্যা নেই।" আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি আপনাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং আপনাদের ইবাদত গ্রহণ করুন।
হে আমার ভাই ও বোন হাজীগণ,
আমি আপনাদের ও নিজেকে পরামর্শ দিচ্ছি—আল্লাহকে ভয় করুন এবং একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র তাঁর জন্য ইবাদত করুন। বিদআত ও শির্ক থেকে দূরে থাকুন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিদায়াত দিন।
খাদেমুল হারামাইনের নেতৃত্বে, সৌদি সরকার হাজীদের জন্য আলেম, ওয়ায়েজ ও উপদেষ্টাদের ব্যবস্থা করেছেন, যারা হজ্জকে নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী পালনে সহায়তা করেন। নবীজি (সা.) বিদায় হজ্জে বলেছিলেন: "তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের রীতিনীতি শিখে নাও।" আলেমগণ হাজীদের যেকোনো বিভ্রান্তি দূর করতে প্রস্তুত। বিভিন্ন ভাষায় গাইডলাইন ও সাহায্য কেন্দ্র রয়েছে।
আপনার সমস্ত আমল একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য করুন। আল্লাহ বলেন: "বলুন, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ—সবকিছুই বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরিক নেই।" [সূরা আল-আন‘আম, ৬:১৬২-১৬৩, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার অনুবাদ]
সুতরাং একনিষ্ঠতা—শুধু একনিষ্ঠতা! কোনো সন্দেহ থাকলে আলেমদের জিজ্ঞাসা করুন। আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের সকল নেক আমল কবুল করুন। আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি আমাদের নেতৃবৃন্দকে উত্তম প্রতিদান দিন, যারা হজ্জের ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করেছেন এবং হাজীদের সুবিধার্থে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ দুই হারামের খাদিম বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আযীয আলে সৌদ ও যুবরাজ প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আযীয আলে সৌদ-কে সফলতা দিন। আল্লাহ তাদের হিফাজত করুন এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রচেষ্টায় সফল করুন।
মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে হাজীদের সুন্দর ব্যবস্থাপনা ও সেবা প্রদানের জন্য আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিন এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে তাদেরকে সাহায্য করুন। আমীন।
মুমু